X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনা অববাহিকা এলাকার বন্যাকবলিত মানুষের পাশে স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ

সাদ্দিফ অভি, সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে
১৪ অক্টোবর ২০২০, ২২:৩৭আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২০, ২২:৩৮

বারোপাখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বানানো আশ্রয়কেন্দ্র (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা জনবসতিতে অনেকেরই নেই কোনও বাসস্থানের নিশ্চয়তা। নদীর পানি বাড়লেই শেষ সম্বলটুকু নিয়ে পাড়ি দিতে হয় অজানা কোনও গন্তব্যে। কেউ বাড়ির ছাদের টিন, কেউ ঘরের ছনের দেয়াল, কেউবা পালিত গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয় নেন কোনও শুকনা জায়গায় অর্থাৎ আশ্রয়কেন্দ্রে। নিজের এক টুকরো জায়গায় ঘর বানানোর স্বপ্ন দেখেন তারা। তাই তাদের আবদার এক টুকরো মাটির।

জেলার চৌহালী ও বেলকুচি উপজেলায় প্রাকৃতিক ও অনেকটা মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে আসছেন এখানকার বাসিন্দারা। একে তো নদী ভাঙন, সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের থাবা। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় তাদের স্বপ্ন। উৎকণ্ঠার মধ্যেই আবারও নতুনভাবে ছাদ তৈরির কথা ভাবতে হয়।


স্থানীয়দের তথ্যানুযায়ী, আষাঢ়ের শুরুতেই নদীর পানি বাড়তে থাকে। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় দেখা দেয় নদী ভাঙন। তাতে বিলীন হয়ে যায় থাকার জায়গাটুকু। করোনার কারণে আয়-রোজগারও বন্ধ। বাধ্য হয়ে বেলকুচি উপজেলার বারোপাখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে আশ্রয় নিয়েছিল ভাঙনের কবলে পড়া ৩৮ জন।

অন্য জায়গা থেকে আনা ঘরের চাল (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে দেখা যায়, নদী থেকে কিছুটা দূরেই এর অবস্থান। একটু উঁচু হওয়ায় এখানে পানি ওঠে না। স্কুলটির ক্লাসরুমে গাদ্গাদি করে আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ। ভেতরে যাদের জায়গা হয়নি তারা আছেন খোলা আকাশের নিচে ছনের ঘরে। এগুলোর দেয়াল ছন দিয়ে এমনভাবে তৈরি করা যেগুলো এক জায়গা থেকে নিয়ে আরেক জায়গায় ঘর তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়। কেউ কেউ ভাঙনের কবল থেকে শুধু টিনের চাল নিয়ে আসতে পেরেছেন। সেই চালের নিচে একটি খাট পেতে কোনোরকম মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি স্কুল ভবনের বারান্দায় আছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর টয়লেট এবং সুপেয় পানির জন্য নলকূপ।

বাসস্থান নিয়ে দুর্দশাগ্রস্ত অসহায় মানুষদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে মানব মুক্তি সংস্থা। ৩৬ বছর ধরে যমুনা নদীতীরবর্তী সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও পাবনা জেলার বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের নদীভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি। তারা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পাশে মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।

আশ্রয় নেওয়া নারীরা (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারী রাজিয়া খাতুন বলেন, ‘আষাঢ়ের প্রথম দিন পানি আসছে ঘরে। এরপর আমরা এগুলো নিয়া চইলা আসছি এই জায়গায়। আমাগো বাড়ি আছিল আফজালপুর। ঘর ভাঙার পর আমরা বারোপাখিয়ায় চইলা আসছি। এখানে একলগে ৪৮টা পরিবার আছিল। জায়গা না হওয়ায় আটটা পরিবার চইলা গেছে। আমরা যখন এখানে আসি তখন করোনার কারণে স্কুল বন্ধ ছিল। ক্লাসরুম তালা মারা ছিল। আমরা স্যারের কাছে আবেদন জানাইছি। স্যার ঘর খুইলা দিছে। কাঁচা ঘরগুলো আমরা যার যারটা নিয়া আসছি। একটা ঘরে ৫-৭ টা পরিবার থাকা অনেক কষ্ট।’

রাজিয়ার কথায়, ‘বাইরের কাঁচা ঘরগুলা তৈরি করতে সময় লেগেছে কয়েকদিন। তার ওপর আয়-রোজগার না থাকায় এসব তৈরি করতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মানব মুক্তি সংস্থা আমাদের তিন হাজার টাকা করে সহায়তা করছিল। সেই টাকা দিয়া আমরা চাইল কিনা খাইছি। তখন আমাদের ঘরে কোনও খাবার ছিল না। করোনার কারণে কাজ করা যায় নাই, তাছাড়া বন্যা আসলো, সব মিলায়ে খুব অসহায় অবস্থায় ছিলাম আমরা।’

আশ্রয়কেন্দ্রে রান্নার জায়গা (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) একই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা নাজমা বললেন, ‘আমরা সহায়তার টাকা দিয়া চাইল কিনছি। পোলাপাইনের অসুখ-বিসুখ ছিল, ওষুধ কিনছি। তারা পায়খানা ও টিউবওয়েল ঠিক কইরা দিছে। এগুলো না দিলে তো আমরা চলতে পারতাম না। আমাদের অসহায় অবস্থায় তারা অনেক সহযোগিতা করছে। এখন আমাদের দরকার শুধু একটা উঁচু জমি। যেখানে আমরা ঘর কইরা থাকতে পারি। আমাদের যেন আর পানি এলেই অন্যখানে যাওয়ার কথা ভাবতে না হয়। এক জায়গা থেকে গিয়া আরেক জায়গায় ঘর তোলার পেছনে আমাদের আয় সব চইলা যায়। থাকুম ক্যামনে, বাচুম ক্যামনে। এখানে আমরা এখন ভালোই আছি, এখান থেকে সরায় দিলে আমাদের দুর্দিন আবারও শুরু হবে। জমিও নাই, ট্যাকা-পয়সাও নাই। এই জায়গা থেকে সরার লাইগ্যা আটদিন সময় দিছে। কিন্তু থাকার জায়গা তো পাই না কোথাও।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জান যায়, মানব মুক্তি সংস্থা মানবিক কাজের ধারাবাহিকতায় করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে হাইজিন সামগ্রীর প্যাকেজ, নগদ অর্থ, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, নারীদের জন্য আলাদা গোসলখানা (স্যানিটেশন ও ঋতুকালীন সুবিধাসহ), গো-খাদ্য, রান্নার চুলা, ঈদের আনন্দ সমভাগের লক্ষ্যে কোরবানির পশু এবং বন্যার সময় পানিবাহিত যেসব রোগ-বালাইয়ের আগমন ঘটে তা নিস্তার পেতে ধারাবাহিকভাবে অভিজ্ঞ মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করে।

বারোপাখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বানানো আশ্রয়কেন্দ্র (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন) বেলকুচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা মোহাম্মাদ সোলায়মান হোসেন বলেন, ‘আমাদের মানব মুক্তির প্রধান হাবিবুল্লাহ বাহার ভাই আমাদের দুর্দশার সময় বরাবরই আমাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। উনি আমাদের এখানে মাইলের পর মেইল রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। এ বছর স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশের মাধ্যমে শত শত মানুষকে ত্রাণ দিয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রে ব্যাপক সহযোগিতা করছে। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ এবং মানব মুক্তি সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই।’

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৮ এপ্রিল, ২০২৪)
আর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
চ্যাম্পিয়নস লিগআর্সেনালকে হতাশায় ভাসিয়ে সেমিফাইনালে বায়ার্ন
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫