X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছড়িয়ে পড়ুক সমষ্টির আলো

তুষার আবদুল্লাহ
৩১ অক্টোবর ২০২০, ১৬:৩৬আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২০, ১৬:৩৭

তুষার আবদুল্লাহ পাখি ও পিঁপড়ের চোখে বাংলাদেশকে দেখে বিস্মিত হই। মানুষ উদ্যোগী হয়েছে, এসেছে সচ্ছলতা। বেড়েছে কোটি অঙ্কের মানুষের সংখ্যা। বিত্ত উপচে পড়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আছেন সম্পদ, টাকার রফতানিকারকও। দারিদ্রসীমার নিচের মানুষের সংখ্যা খুব কমেছে এমন বলা যাবে না।
করোনাকালে মানুষ কাজ, ব্যবসা হারা হয়েছেন, কমেছে মানুষের আয়। এই তথ্যগুলো যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি না খেয়ে মানুষকে থাকতে হচ্ছে না। মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াচ্ছে। সহায়তার জন্য শুধু বিত্তশালী মানুষের দিকে চাতকের মতো চেয়ে থাকতে হচ্ছে না। নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তও দাঁড়াতে পারছেন, দাঁড়াচ্ছেন বিপন্ন মানুষের পাশে। করোনাকালে আমাদের অভিজ্ঞতা এমনই। বিত্তবানরা হাতেগোনা কয়েকদিন দৃশ্যমান থাকলেও, পরে আর মানুষের পাশে থাকেননি। নিজেরাই সরকারের প্রণোদনার দিকে হাত পাতলেন। ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কর্মী ছাঁটাইয়ে। করোনার ঢেউ কিছু সময়ের জন্য খাটো হলেও, এখন আবার আফাল আকারে আছড়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এর মাঝে ভূগোলের অন্য আর সকলের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি দেখিয়েছে। চালিয়ে যাচ্ছে লড়াই। যদি কোনোভাবে করোনার দ্বিতীয় দোলা কাঁপন ধরাতে না পারে,  তাহলে আমাদের অর্থনীতির সচ্ছলতা টিকে থাকবে। ব্যক্তির এই মনোবল, টিকে থাকার শক্তি সামষ্টিকভাবে রাষ্ট্রকেও বলবান করে তোলে। রাষ্ট্র অনেক বড় বড় প্রকল্প নিয়ে মাঠে। পদ্মাসেতু, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, কর্ণফুলীর নিচের টানেলসহ বৃহৎ প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলছে। ব্যক্তি আর রাষ্ট্রের সচ্ছলতার ঝিকিমিকি গ্রাম থেকে শহরে ছড়িয়ে আছে। গ্রামের কৃষক, শ্রমিকের কাছে চায়ের চেয়ে কফি এখন প্রিয়। তারাও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কাচের কাপের বদলে কাগজ বা প্লাস্টিকের গ্লাসে চা-কফি খাচ্ছেন। খাদ্যাভ্যাসেও তারা নগরায়নের দাস হয়ে উঠেছেন। দিনে-রাতে রেস্তোরাঁয় খাবার অভ্যেস গ্রামমুখী। লেখাপড়াতেও ইংরেজি স্কুল বা মাধ্যমের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। সবদিকেই কেমন সুখের ঝলমলে আলো।

এই আলোর আড়ালেই আছে ধীরে ধীরে গাঢ় হয়েছে মনখারাপের আঁধার। সেই আঁধার যেন এখন সকল আলোকে নিভিয়ে দিতে আগ্রাসী। আমরা স্পষ্টত দেখতে পাই, সচ্ছল হয়ে উঠতে উঠতে আমাদের মনোজগতের আলোগুলো একে একে নিভে গেছে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও শুভ চিন্তার জায়গা থেকে আমরা দূরে সরে এসেছি অনেক দূরে। এই দূরে সরে আসা মানুষদের বিত্তের অভাব নেই, নেই শিক্ষার ঘাটতি। বরং শিক্ষার এবং বিত্তদের শীর্ষে থাকা মানুষেরাই রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। অসহিষ্ণুতা তাদের মাঝেই বেশি। শুধু যে ধর্মের ক্ষেত্রে অসহিষ্ণু তারা, একথা বলবো না। রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তার জায়গাতেও তাদের অসহিষ্ণুতা এখন প্রকাশ্য। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, সাংবাদিক সকলে এখন এই অসহিষ্ণুতার দোষে দুষ্ট। নিজের কর্মক্ষেত্রে যেমন ভিন্নমত শুনতে রাজি নন, তেমনি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের বেলাতেও। সর্বত্রই নিজেদের মতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এই যে একটি সমাজ অসহিষ্ণু হয়ে উঠলো এর পেছনে রয়েছে লক্ষ্যহীন বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুশীলনের মঞ্চগুলো তালাবদ্ধ হয়ে থাকা। চিন্তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, মানুষ সামষ্টিকতা থেকে ব্যক্তিতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। বাহ্যিকভাবে আমরা অবয়বপত্রে ভিন্ন ভ্রমণদল, ক্লাবে মানুষদের জড়ো হতে দেখি। কিন্তু তারা আসলে একই চিন্তার গোত্র ভুক্ত। একক চিন্তার সঙ্গে ভিন্ন চিন্তার কোনও মিথস্ক্রিয়া নেই। ফলে একের মত অন্যকে কি উপায়ে সইতে হয়, সেই কৌশলটিই সবাই ভুলে বসে আছি। নিজে যা বিশ্বাস করি তাই সত্য আমাদের কাছে। এই সত্যে যাদের বিশ্বাস বিপুলা পৃথিবীর বালুকণাও আমরা দেখতে পারি না। এক প্রকার অন্ধই বলা যায়। কারণ এই ভূগোলের নানা প্রান্তে সৃষ্টির শুরু থেকে আজ  অবধি কত বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের মতো। কোনও কোনও বিশ্বাস জলছাপ রেখে যেতে পেরেছে, কোনোটির পথরেখা হয়তো মিলিয়ে গেছে। কিন্তু সেই হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসগুলোও পৃথিবীকে তো বটেই, নিজের বিশ্বাসকেও মূল্যায়ন ও সমৃদ্ধ করার সুযোগ করে দেয়। আমরা সেই সুযোগটি নিতে চাই না। জ্ঞানের সেই পথরেখা থেকে কবেই যেন প্রত্যাহার করে নিয়েছি নিজেদের। ফলে উন্নয়ন, সচ্ছ্লতার ঝিকিমিকির নিচের আঁধার এখন আমাদের গ্রাস করে নিতে উদ্যত। আমরা কি আমাদের সকল অর্জনকে সেই আধিপত্যের থাবার কাছে–প্রসাদের মতো নিবেদন করবো?  না, আমি চাই সকল মত ও মনের সামষ্টিক আলো। ভুবন ভরে যাক সেই আলোয়। পরাজিত হোক অসহিষ্ণু শক্তি।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ