তোমার হাতে
তোমার হাতে দিয়ে এসেছি বিপন্ন পাখির বাসা
মা-পাখির জন্য অপেক্ষমান ছানার হা-মুখ
আর সুনসান নদীতীর।
সঁপে এসেছি কোণা-ভাঙা কাঠের শ্লেট আর মায়ের কিচ্ছা ।
আমার বেদখল বটবাগানে চলছে তোমার প্রগাঢ় বিশ্রাম।
তোমার কব্জায় আমাদের শিশুপুকুর ও হিজলের ছায়া
হাঁসের ঠোঁটে গুগলি—তুমি তার চেনো না কিছুই। তবু তুমিই বিকল্প এখন নিঃসঙ্গ ঘুঘুর।
সিমেন্ট পুলের লাফ ও বড়পুকুরের পানা-নৌকা—সব তোমারই খেলার ধনুক।
স্কুলপ্রেমিকা আর জালিবেত সবই তোমার।
তোমার কাছে নীলকভার রুলটানা খাতা, নিঝুম বাঁশঝাড়।
সমর্পিত বেতফল ও মুক্তার বন আছে জমা
মাদ্রাসার ভোর আর ছত্তর হুজুর—সবই তোমার।
তোমার হাতে দেয়া আমার মহাসড়ক, দক্ষিণের বন্দ, অবুঝ স্কুলশিশু।
বেহাত আমার জলমগ্ন মাঠ ও বিচারালয়।
আমার হাতে কিছু নেই, নেই সচিবালয়।
আমার চড়াই-উৎরাই পেরোনো দেশ, নখরে ছিন্ন মাতৃবুক—আজ সবই তোমার।
আমি বিতাড়িত দূরদর্শক। মঞ্চ তোমার।
কলমিঘেরা কবরে
আইসো, এই উত্তরবন্দে, গোরস্থানে
তরপুই গাছের তলে;
স্মৃতি শুকাইতেছে জ্যৈষ্ঠের বাতাস
হিম হিম মান্দারগাছে ভাসতেছে রোদ;
শোঁ শোঁ কেমন কেমন হাওয়া!
বড় পুষ্কুনি হয়া হয়া
চিকনে-চাকনে আহে
আমারে উড়ায়া লয়া যায়
জোড়াশার নিঝুম বন্দে
মক্তবের ঐ বগলে
বাতাস তুমি আইসো মায়ের
কলমিঘেরা কবরে!
কবি
লোকটার হৃদয়ে থাকবে একটা নির্জন রেললাইন,
ব্যক্তিগত একান্ত ওয়াগন, স্নিগ্ধ লোকোমোটিভ। র'বে কলহাস্য ও হীরক আলাপের পিঠে বিষণ্ন কেবিনের মেমোরি। চলন্তে জানলায় দিঘির ভ্রুকুটি নেবেন তিনি, পাহাড়ের পাশে। নেবেন পার্বত্য বুনো খাগড়ার হ্যান্ডশেক।
ককটেল
কান পেতে রাখি জ্যৈষ্ঠের দুপুরে
বিষণ্ন বহুদিনের পিপাসার্ত কান
দূরে শিরিষের পাতার খসখস
আর লোমওঠা ভেড়াটির ডাক
ভাটির ডোবায় অন্ধ টাকির ঘাই
ধাউশ ঘুড্ডির সুতার আচানক সুর
হাওয়ার ভেতর আমগাছ ও বেতফল
মাতাল করে অবসন্ন এ দুপুর
গরুর হাম্বাটি আজ ভেসে আসে
দূরের মাঠ হতে,
কটকটিঅলার হাঁকের সাথে মেশে।
এক অনন্য ককটেল এ দুপুর
পিপাসার্ত এই কানে এসে ঢালে তার গ্লাস।
বোধোদয়
পৌর মাঠে, আমরা, জোয়ালবিদ্ধ বলদের দল
সমবেত হবো
ব্যথা ও ঘন বিলাপ নিয়ে;
ঘাড়ে অসংখ্য বোধোদয়ের সিলমোহর-সমেত;
পাখির ঠোঁটে থাকবে আনবাড়ির খড়
আমাদের চোখে থাকবে
শহরের একমাত্র নদীর ঋণ;
ভুলে যাবো অসুখ, একমাত্র স্যানাটোরিয়াম
মজলুম
দলিত আঙুরের থোকা
হাওয়ায় পুড়ছে সতর্কতা
দেখি ভূলুণ্ঠিত ভোরের
মাথায় মক্তবগামী ব্যথা
ঝুরঝুরে ভঙ্গুর ইয়েমেন
হাওয়ায় নড়ছে সতর্কতা
মানুষ পথে নেই, ঘরেও নেই
বিকেল হলেই শহরের ছাদগুলা ভীষণ
হল্লায় হইতেছে ভরপুর
ঘুড়ি ওড়ার ছড়-ছড় শব্দ আসতেছে কানে।
জানলায় ঝুলতেছে ভোকাট্টা ঘুড়ির শুঁড়
মানুষ পথে নেই, ঘরেও নেই অনেকেই
কিশোরীর গুনগুন গান আর ছাদবাগান
কচলানো তাঁর লেবুপাতার হাত
নিচে নেই চিৎকার ও শোরগোল
ছাদে ছাদে যোগাযোগ, কিয়া বাত!
মানুষ মাটির দিকে ঝুঁকবার আগেই
ঝুঁকুক একটু আকাশের দিকে
একা খাঁ-খাঁ হৃদয়ের শাখা
আর কত হবে ফিকে?
মানুষ পথে নেই, ঘরেও নেই অনেকেই