X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

লড়াই হোক সংস্কৃতির

তুষার আবদুল্লাহ
২৮ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৪৮আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২০, ১৫:৪৯



তুষার আবদুল্লাহ লড়াইটা অবশেষে অনিবার্য হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন আমি এই লড়াইয়ের প্রয়োজন বোধ করে আসছি। এই আয়োজনেও একাধিকবার লিখেছি মুক্তির পথ আছে একমাত্র ওই লড়াইতে। আমরা মাঠ ছেড়ে দিয়ে বসেছিলাম। আমরা নিজেদের শক্তি, বল অনুভব করতে পারছিলাম না। অশুভ শক্তির গর্জনে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছি, অহেতুক আপসও করে গেছি, সেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। অশুভ প্রতিপক্ষ একটিই আমাদের সামনে–মুক্তিযুদ্ধে অবিশ্বাসী পক্ষ। এই পক্ষটি বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধ একটি শক্তি। তারা বাঙালির কোনও আচারকেই সইতে পারে না। বাঙালির সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র এবং লড়াইর ইতিহাস দীর্ঘ। তারা সংস্কৃতির একেকটি অনুষঙ্গে লক্ষ্য স্থির করেছে, এবং সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছে আমাদের আচার। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে, রাষ্ট্রীয় আচারেও সেই বদল দৃশ্যমান। দৃশ্যমাধ্যম বা গণমাধ্যমের সকল শাখা প্রশাখায় সেই পরিবর্তন আজ স্পষ্ট। সেদিকে তাকালে আমরা বিস্মিত হই, আত্মগ্লানিতে নিমজ্জিত হই—তাদের সইয়ে, পথ ছেড়ে দিয়ে কী অপরাধ আমরা করেছি। ভুল বলবো না। অপরাধই বলবো। মূল প্রতিপক্ষ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আমরা গৃহযুদ্ধে শামিল হয়েছিলাম। নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করি। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেওয়ার অনুশীলন থেকে আমরা দূরে সরে ছিলাম। ব্যক্তিগত অর্জনকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, পুঁজির দানব হতে গিয়ে গোত্রে বিভক্ত হয়ে পড়লাম আমরা। সহমতে যোগদান না করলে, দৃশ্যমান আনুগত্য না দেখাতে পারলে, নিজেরাই নিজেদের দিকে আঙুল তুলছি, স্বাধীনতার বিপক্ষ বলে। আমাদের এই গৃহযুদ্ধে বীভৎস হাসি হাসছে অশুভ শক্তি। ওই হাসির আড়ালে তারা ঠিকই এগিয়ে গেছে নিজেদের নকশা মতো। মাঠের যাত্রাপালা, ব্যক্তির পোশাক, চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে বিমানবন্দর এলাকার লালন ভাস্কর্য, সর্বত্র আমরা ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমাদের এই নতজানুতায় ওদের হুঙ্কার, ধৃষ্টতা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে, তারই নিদর্শন- বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরির বিরুদ্ধে ফতোয়া, হুঙ্কার।

বলছিলাম যে লড়াইয়ের কথা,  সেই লড়াই সংস্কৃতির লড়াই। আমাদের গ্রামে গঞ্জে শহরে যে সাংস্কৃতিক অনুশীলন ছিল তা আজ বিলুপ্ত প্রায়। সংস্কৃতি মনষ্ক মানুষেরা আজ বিচ্ছিন্ন বা তাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে। এই বিচ্ছিন্নতারই প্রমাণ–ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দীন সঙ্গীতাঙ্গন পুড়িয়ে দিলো ওরা, আর আমরা মনের সুখে বাঁশি বাজিয়ে গেলাম। তাদের সেই ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ানোর সাহস দেখাতে পারলাম না। ওয়াজে মাহফিলে সংস্কৃতি বিরোধী কথা বলে যায় ওরা আর আমরা শুধু মাথা দুলিয়ে যাই। জঙ্গিবাদের ওই পোকা অভিজাত দালানের যখন ভিত নাড়িয়ে দিলো, তখন আমরা ঠাওর করতে পারলাম ওদের শেকড়ের বিস্তার। তারপরও কি আমরা সচেতন হয়েছি, মনোযোগী হয়েছি নিজেদের অহংবোধের জায়গাটিতে। মুক্তিযুদ্ধের সূবর্ণ জয়ন্তীও পালন করতে যেতে হচ্ছে রাজ্যের অস্বস্তি নিয়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার, স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু  করার পরও, অস্বস্তির জায়গা হলো—ওরা আমাদের বিভক্ত করে ফেলেছে। এখন বিভক্তির সেই আইল ভেঙে দিতে হবে। অসাম্প্রদায়িক জমিনে সংস্কৃতির চাষ শুরু করতে হবে আজই।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য করতে দেবে না ওরা, সেটি বাহ্যিক। কয়টি ভাস্কর্য হবে, ৬৪ জেলা? সব কয়টি উপজেলা কিংবা সকল গ্রামে, সেওতো হাতে গোনা কয়েকটি ভাস্কর্য মাত্র। ৭১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত আসতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মনঘরে বঙ্গবন্ধুর যে ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে, সেই ভাস্কর্য ভাঙার শক্তি ওদের নেই। বহুমুখী ষড়যন্ত্রের পরেও সেই ভাস্কর্য গড়া বন্ধ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কারিগররা যত্নে তৈরি করেছে বীর যোদ্ধাদের সৌধ এবং নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। এখন সেই সৌধ ও ভাস্কর্যের যত্ন নিতে হলে, বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে হলে, মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতিরই শক্তি আছে বাঙালির মুক্তি ও গৌরবের সৌধ ও ভাস্কর্য রক্ষার। সুতরাং বিজয় দিবসের লগ্নে শুরু হোক সেই লড়াই।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ