X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

আসমানে শকুন

তুষার আবদুল্লাহ
০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:৫৬আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:৫৭



তুষার আবদুল্লাহ কুয়াশায় ঢেকে আছে আকাশ । অগ্রহায়ণে রোদহীন থাকা অস্বস্তিকর। বৃষ্টি আসবে না ঠিক। কিন্তু প্রতিমুহূর্তে মনে হচ্ছে টিপ টিপ কুয়াশায় ভিজে যাবো। ভিজতে মন চাইছে সত্যি। রোদের উত্তাপের জন্য কাঙাল হলেও, বারো মাস আষাঢ় থাকুক তাই চাই। জীবনতো আষাঢ়েই। কত স্বপ্ন দেখি আমরা, কত নির্মাণের হই কারিগর। এক সময় দেখি যা কিছু এঁকেছি , যা কিছু তৈরি করেছি, সবই ছিল আষাঢ়ে। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র, এই অভিজ্ঞতা সকলের। রোদ উঠলেই বৃষ্টির স্মৃতি উবে যায়। তবে স্নাত যে রোদ, তা বিরল। বিরল এমন রোদ দেখার চোখও। নিজেই কত বর্ষা পার করেছি এমন রোদ দেখার অপেক্ষায় থেকে। চারপাশের মানুষকে দেখি অভ্যস্ত জীবনে সাঁতার কেটে বেড়াতে। পুকুরের নিরীহ ঢেউতেই সহজাত তারা। উত্তাল ঢেউ দেখলেই, বাওলা বাতাস দেখলেই  কাদায় গিয়ে লুকোয় জিওল মাছের মতো। আমরা কি তাহলে জিওল মাছেরই জীবন চাই?
আমরা যদি জিওল মাছের জীবন দেখি, দেখবো এঁদো, কাদা, কাঁটা ঘেরা এলাকাতেই তার জীবন চক্র আবর্তিত। পুকুর থেকে উঠে এসেও, কয়েক মুঠো জলে তার বন্দি জীবন। এই জীবন থেকে জিওল মাছের মুক্তি নেই। তার চেয়ে বরং মৌরলা মাছের জীবন ভালো। সমবেত স্বচ্ছ চলাচল। জলের ওপর থেকেও স্পষ্ট তাদের জীবন। কোনও লুকোছাপা নেই। নেই লুকানোর ভয়। অন্যের ক্রীড়নক  হওয়ারও সুযোগ নেই। দেখেছি উত্তাল ঢেউতেও তার কেমন অবিচল চলাচল।

মানুষের লুকাছাপা  জীবন কেন, কী প্রয়োজন তার? যখনই মানুষ নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা হারায়, তখনই তাকে অসহায়ত্ব আঁকড়ে ধরে। জীবনের কাছে পরাজয়ের অনিবার্যতাকে সে মেনে নিতে পারে না। তখন সে স্বপ্নবাজ মানুষদের চারপাশে শকুনের মতো ঘুরপাক খেতে থাকে। খামচে ধরতে চায় স্বপ্ন। ধীরে ধীরে স্বপ্নশূন্য, জ্ঞানহীন ও উন্মাদ মানুষগুলোর সমাবেশ ঘটতে থাকে। বাহ্যিকভাবে আসমানে শুধু উড়াল সেই শকুনদের দেখা যায়। তাদের ডানার ঝাপটায় ক্ষণিক আতঙ্কও হয়তো ছড়ায়। দিবস ও রাত্রিকে করে তোলে ভয়ঙ্কর। কিন্তু আমি জানি তার চিৎকারই ততো বীভৎস, যে আসলে নিজের কাছে পরাজিত এবং জ্ঞানশূন্য। সেই মানুষগুলোকে আমি করুণার চোখে দেখি। এই দেখা যেমন ব্যক্তি মানুষের কেন্দ্রিকতা থেকে দেখা, তেমনই রাষ্ট্রের দেখার অভিজ্ঞতাও কিন্তু এক। ১৯৭১, ১৯৭৫ থেকে শুরু করে রাজনীতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে, মেরুকরণ পর্যায়ে রাষ্ট্র তা প্রত্যক্ষ করেছে। ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র উভয় ক্ষেত্রের নির্মম ট্র‌্যাজেডি হলো শকুনের ছোবল খাওয়ার পরেও, আমরা তার মাঝে নান্দনিকতা খুঁজি। নীল আসমানে তার, তাদের ভেসে যাওয়া নিজ লাটাইয়ের ঘুড়ির মতো দেখায়। কিন্তু কখন যে সুতা কেটে যাওয়া ঘুড়ির মতো সে অন্যের স্বার্থের বারান্দায় গিয়ে পরে বুঝে উঠতে পারি না।

রাষ্ট্রও রাজনৈতিক নানা টানাপড়েনে এমন শকুনের মুখোমুখি হয়েছে। এখনও যে রাষ্ট্রের উঠোনে, আসমানে শকুন নেই, সেকথা বলি কী করে। শকুনের ডানা ঝাপটানো আছে, অশুভ শক্তির জোটবদ্ধতা আছে। আছে সংশয়-কুয়াশায় মোড়ানো ডিসেম্বরের আকাশে যে ডানা মেলে আছে, সে কে তিলাঘুঘু , ফিঙে, দোয়েল নাকি শকুন? বিজয়ের ৪৯ বা ব্যক্তিগত পথপরিক্রমার এই লগ্নে এসে, এখনও আকাশের উড়ালকে আমরা নিশ্চিত চিহ্নিত করতে পারছি, এই জিওল মাছের জীবনে?

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ