X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

শতাধিক ভাস্কর্যের মরুদ্বীপ ৭১’ স্বাধীনতা পার্ক

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:০০আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:৪৮

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম লোহাজুড়ী। এখানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শতাধিক ভাস্কর্য দিয়ে প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে সাজানো গোছানো মরুদ্বীপ ৭১’ স্বাধীনতা পার্ক এগুলো তৈরি করেছেন প্রয়াত ভাস্কর মৃণাল হক। এসবের মাধ্যমে গৌরবময় ইতিহাসকে সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

মহান ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১’, কিছুই বাদ যায়নি। বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্য এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। ম্যুরালের মাধ্যমে আলাদা আলাদাভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে। বীরশ্রেষ্ঠদের আলাদাভাবে ম্যুরালের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন প্রজন্মের কাছে।

কিশোরগঞ্জের স্বাধীনতা পার্ক জলাশয়ের ওপর বিজয় পথ সেতুতে উঠলে চোখে পড়ে অস্ত্র হাতে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দাঁড়িয়ে আছেন। কোথাও দেখা মিলবে গেরিলা বাহিনী দূরবীন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে শত্রুর নিশানা খুঁজছে। বাদ যায়নি অপরাজেয় বাংলা কিংবা মুজিবনগর। শেষ হয়েছে ক্ষুদিরামের ফাঁসির মঞ্চের কাজ। দেখা মেলে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির লোকায়ত ইতিহাসের।

চোখের সামনে মুক্তিযুদ্ধকে খুঁজে পেতে দূর-দূরান্ত থেকে কটিয়াদীর অজপাড়াগায়ে প্রতিদিনই ঘুরতে আসেন দর্শনার্থীরা। পার্কে ঘুরতে আসা বকুল মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এত সুন্দরভাবে ইতিহাসকে এখানে ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো হয়েছে, মনে হচ্ছে সত্যিই বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করছেন!’

কিশোরগঞ্জের স্বাধীনতা পার্ক আরেক দর্শনার্থী বাদশা মিয়া প্রথমবার এসেছেন এই পার্কে। তার কথায়, ‘এখানকার ভাস্কর্যগুলোকে জীবন্ত মনে হয়। ইতিহাস সমৃদ্ধ এত সুন্দর একটি পার্কে এসে দারুণ লাগছে। এখানে এলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসহ বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে খুঁজে পাবে।’

কিশোরগঞ্জের স্বাধীনতা পার্ক ২০১৩ ও ২০১৮ সালে কিশোরগঞ্জের পার্কটির বিভিন্ন ভাস্কর্য দুইবার উগ্র মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে। বেশকিছু ভাস্কর্যের হাত-পা ও অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হয়। প্রায় দেড় হাজার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। থানায় দুইবারই মামলা হলেও কাউকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়নি। তবুও থেমে নেই কাজ। এখানে একের পর এক ভাস্কর্য স্থাপন করা হচ্ছে। ভাস্কর্যের মাধ্যমে ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে এখানে।
কিশোরগঞ্জের স্বাধীনতা পার্ক মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জেনারেল এমএজি ওসমানী, মাস্টারদা সূর্যসেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধীসহ ফাঁসির মঞ্চের ক্ষুদিরামকে পাওয়া যাবে পার্কের ভাস্কর্যে। এগুলো নির্মাণ করেছেন প্রয়াত ভাস্কর মৃণাল হকের সহযোগী ভাস্কর মিহির কান্তি বিশ্বাস। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত জনতাসহ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরার কাজ প্রায় সম্পন্ন।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জাকারিয়া রুবেল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্বাধীনতা পার্কে দুর্বৃত্তরা দুইবার হামলা করেছে। জাতির পিতার কয়েকটি ভাস্কর্যসহ অন্য ভাস্কর্যগুলো ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এসব ভাস্কর্য ধরে রাখার বিকল্প নেই।

কিশোরগঞ্জের স্বাধীনতা পার্ক সরকারি কোনও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই জীবনের কষ্টার্জিত সমস্ত অর্থ দিয়ে কটিয়াদীর অজপাড়াগায়ে মরুদ্বীপ ৭১’ স্বাধীনতা পার্ক গড়ে তুলেছেন অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান ইকবাল। ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন ও তারামন বিবি বীরপ্রতীকের পরামর্শে ২০০৮ সালে কাজ শুরু করেন তিনি। পার্কটির পেছনে ১২ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এবারের বিজয়ের মাসে ইতিহাসের সূর্যসন্তানদের নতুন আরও অন্তত ২০টি ভাস্কর্য স্থাপন করা হচ্ছে এখানে। এগুলোর কাজ শেষে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে চান তিনি। ভাস্কর্য ইস্যুতে বর্তমান পরিস্থিতিতে পার্কে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই উদ্যোক্তা।

কিশোরগঞ্জের স্বাধীনতা পার্ক মরুদ্বীপ ৭১’ স্বাধীনতা পার্কের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জীবনে যা উপার্জন করেছি, তার পুরোটা দিয়েই স্বাধীনতাভিত্তিক পার্কটি নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার স্ত্রী একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তারও যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা রয়েছে কাজটির পেছনে। এটি তৈরি করতে গিয়ে অনেকবার বাধার সম্মুখীন হয়েছি। অনেক ভাস্কর্য ভাঙচুর হয়েছে। সরকারের কাছে কিছুই চাই না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে শুধু একটাই দাবি, কাজটি শেষ হওয়া পর্যন্ত যেন দুষ্টচক্রের হাত থেকে নিরাপদে থাকতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই আশ্রয়টুকু চাই। যেদিন আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ শেষ হবে, সেদিনই রাষ্ট্রের জন্য এটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবো।’



/আরআইজে/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী