X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিম কি দুক : কোরিয়ান নিউ ওয়েভের যাযাবর

অনিন্দ্য আরিফ
৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:০০আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:০০

কিম কি দুক : কোরিয়ান নিউ ওয়েভের যাযাবর
‘মানুষ আমাকে যদি প্রশ্ন করে আমি একজন নৈতিক ব্যক্তি কি না, তাহলে আমি সাধারণত প্রত্যুত্তরে বলি যে আমি তা নই। কিন্তু আমি একজন ব্যক্তি যে কোরিয়ান সমাজের অন্ধকার এবং দারিদ্র্যের চিত্রায়ণ করতে ভয় পাই না। এটাই আমার নৈতিকতার জায়গা। আমি আমার আগের সিনেমাগুলোর চাইতে আরও পরিচ্ছন্ন ধরনের চলচ্চিত্র বানাতে পারতাম, কিন্তু এই ধরনের সাধারণ কাজ করতে আমি ভয় পাই। একইসঙ্গে আমি আমার অতীত এবং বিতর্কিত বিষয়গুলোর জন্য ভবিষ্যতেও মূলধারার চলচ্চিত্র বানাতে ভয় পাই।’ [কোরিয়ান সিনেমা টুডে (অক্টোবর, ২০১২ : ভলিউম : ১৪)]
দক্ষিণ কোরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা কিম কি দুক লাটভিয়ার একটি হাসপাতালে গত ১১ ডিসেম্বর কভিড-১৯ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার মৃত্যুর জটিলতার মতো জীবনও জটিলতায় পূর্ণ ছিল। তার চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলোর দিকে লক্ষ করলেও দেখা যাবে যে সেগুলো ছিল নষ্ট, উত্তেজিত, বিদ্রোহী এবং সর্বোপরি, আমরা যাদের ইতর বলে গালি দেই, সেই ইতরবিশেষ। আসলে তার জীবনের এ ধরনের অতীতই তাকে সারা জীবন তাড়া করে বেড়িয়েছে এবং সিনেমায় তিনি সে চরিত্রগুলোই ফুটিয়ে তুলেছেন।
কিম কি দুক ১৯৬০ সালের ২০ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার বোংঘোয়ায় জন্ম নেন। তার বয়সী অন্যসব শিশুর চাইতে তার শৈশব অনেকটা ভিন্ন ছিল। স্কুলের মধ্যমশ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি ড্রপড আউট হন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি কারখানার শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০ বছর বয়সে যোগ দেন মেরিনের চাকরিতে। কিন্তু সে চাকরিও তাকে বেশিদিন আটকে রাখতে পারেনি। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সে বসাবাস করেন। এ সময়ে তিনি নানা পেশায় থেকে জীবিকা নির্ধারণ করতেন। এরমধ্যে রাস্তায় দাঁড়ানো ভবঘুরে চিত্রশিল্পীর কাজও করেছিলেন কিছুদিন। একদিন প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার পর এই মাধ্যমের পোকা ঢোকে তার মাথায়। ১৯৯৩ সালে দেশে ফিরে শুরু করেন চিত্রনাট্য লেখার কাজ। ১৯৯৫ সালে কোরিয়ান ফিল্ম কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় চিত্রনাট্যকার হিসেবে পুরস্কার পান। এটিই চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কিমের প্রথম পুরস্কার। তার প্রথম ছবি ‘ক্রোকোডাইল’ মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। স্বল্প বাজেটের ছবিটি দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। এরপরে কিম ২০টির মতো কাহিনিচিত্র নির্মাণ করেছেন। এমনকি তার সঙ্গে যারা সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র নির্মাণে হাতেখড়ি ঘটিয়েছেন, তাদের অনেকের প্রথম চলচ্চিত্রের প্রযোজনার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কিম তার সারা জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে নিজের নির্মাণগুলো সৃষ্টি করেছেন। তার অনেক নির্মাণ আবার কোরিয়ান দর্শকরা তেমনভাবে নিতে না পারলেও তার তোয়াক্কা না করেই তিনি সৃষ্টি করে গিয়েছেন একের পর এক অবস্মরণীয় চলচ্চিত্র। আর এসব নির্মাণই তাকে দেশীয় স্তর থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নির্মাতায় পরিণত করেছে।
তার সৃষ্ট চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলো কোরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ব্রাত্য হতে পারে। কিন্তু তারপরেও কিম অনবরত এসব চরিত্র দিয়েই কোরিয়ান সমাজের অনবরত সমালোচনা করে গিয়েছেন, তার হাত থেকে নিস্তার পাইনি কোরিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও। কিম নিজেও বুঝতেন যে, বিশ্বের কেউ কেউ তার সিনেমাগুলোকে বিদ্যমান সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতির ধারালো সমালোচনা হিসেবে বুঝতে পারলেও কোরিয়ান দর্শকদের অনেকেই তার কাজগুলোকে ঘৃণ্য, নারীবিদ্বেষী এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবেই বিবেচনা করবেন। কিন্তু তিনি তার কাজের এই ধারা কখনো বদলাননি, প্রচলিত সমাজের সঙ্গে সমাঝোতায় যাননি। তবে তার এই একগুয়েমি কিংবা হার না মানা মনোভাবই তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। আর তার জোরেই তিনি তার পথ চলা অব্যাহত রেখেছিলেন। তার চলচ্চিত্রগুলো কেন এত বিতর্কিত? আবার আমাদের কাছে তার আবেদন কেন এত বেশি?
তার চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলো কখনো সুশীল নাগরিক নন। আর এটা তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই নির্মাণ করেছেন। তার চরিত্রগুলো সমাজের চোখে গ্রহণযোগ্য কোনো মর্যাদাপূর্ণ পেশায় যুক্ত নয়। তারা মূলত অবৈধ, অনৈতিক এবং বিবেকহীন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাদের অনেকেই সমাজচ্যুত, যাযাবর, গৃহহীন এবং নানা দুঃখ-কষ্টের মধ্যদিয়ে যাপিত জীবনের অধিকারী। তারা সবাই লৌকিকতাবর্জিত এবং ঘৃণ্য জীবনের মধ্য থেকে জীবন-সংগ্রামে লিপ্ত। দর্শকদের এসব চরিত্রের গতিধারা চিহ্নিত করতে বেশ সময় লেগে যাবে, কিন্তু তারা কিমের আকর্ষণীয় গল্প বলার ঢঙে বিমোহিত হবেন। বিশেষ করে তার ব্যাকগ্রাউন্ড ভিজ্যুয়ালাইজেশন তাকে একজন সামর্থ্যবান ভিজ্যুয়াল গল্পবলিয়ে হিসেবে উপস্থাপন করে। এই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার শ্যুটিং লোকেশন নির্বাচনের অসাধারণ দক্ষতা। তিনি তার জীবনে নিজের ঢাক নিজেই খুব একটা বাজাননি, কিন্তু তার শক্তিশালী চলচ্চিত্রগুলো তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছে।
সিনেমার মতোই কিমের ব্যক্তিগত জীবনও বেশ খানিকটা বিতর্কিত ছিল। মি-২ আন্দোলনের সময় তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে কোরিয়ান তিনজন অভিনেতার কিমের বিরদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি বেশ ঝড় তুলেছিল। এর জন্য তাকে জরিমানাও গুনতে হয়। ঠিক একই সময়ে আধুনিক কোরিয়ান সিনেমার অনবদ্য নির্মাণ ‘স্প্রিং, সামার, অটোমন, উইন্টার….অ্যান্ড স্প্রিং’(২০০৩) তৈরি করে তিনি গোটা বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দেন। এই চলচ্চিত্রে তিনি একজন জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুর অধীনে থাকা তরুণ ভিক্ষুর জীবনের বিভিন্ন ঋতুর গল্প তুলে ধরেন। কাহিনিতে এই তরুণের পরিপূর্ণ আলোকায়নের পথে অভিযাত্রার শাশ্বত চক্রকে মূর্ত করে তোলেন। পৃথিবীতে এরকম সার্থক আধ্যাত্মিক চলচ্চিত্র খুব বেশি একটা নির্মিত হয়নি। অবশ্য কিম কি দুক তার অন্য সিনেমাগুলোতে আধ্যাত্মিকতার ভিন্ন মাত্রাও দেখিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি চলচ্চিত্র হলো ‘পিয়েতা’ (২০১২), যে সিনেমাটি আবার ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার অর্জন করে। এ সিনেমায় একজন দুবৃত্ত চরিত্রের মুবস্টার সেইসব ব্যক্তিদের দেনা পুনরুদ্ধারের জন্য শিকার বানান, যাদেরকে সে নিজেই ইচ্ছাকৃত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণে বাধ্য করেন এবং দুর্ঘটনায় তাদের ইন্স্যুরেন্সের টাকা নিজের পকেটস্থ করেন। কিন্তু এরকম শিকারে পরিণত করতে গিয়ে সে এমন একজন নারীকে খুঁজে পায়, যে তার অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া মাতা। এই নারী তাকে আঁতুর অবস্থায় পরিত্যাগ করে চলে যায়। এরই পরিণিতিতে আজ সে এরকম অসৎ পথে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই সিনেমার মধ্যদিয়ে কিমের করুণাপূর্ণতার প্রতি মুগ্ধতার সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত প্রদর্শিত হয়। তার তিনটি সহিংস চলচ্চিত্র ‘দ্য আইসল’ (২০০০), ‘বাড গাই’ (২০০১) এবং ‘থ্রি আয়রন’ (২০০৪) এর মধ্যদিয়ে কিম একটা ঘরানাকে অনুসরণ করেছেন। তিনি তার সমসাময়িক মহান কোরিয়ান নির্মাতা পার্ক চ্যান-উকের মতোই তিনি জানতেন সংহিসতাকে কীভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয়। আবার আরেকজন সমসাময়িক লি চ্যাঙ-ডংয়ের মতোই তিনি খ্রিষ্টানটি এবং জীবনের আধ্যাত্মিকতার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। কিন্তু কিমের সিনেমাগুলো মূলত ক্ষয়িষ্ণু বৌদ্ধ মতবাদের একটি বিশেষ ধারার অদম্য বহিঃপ্রকাশ। এখানেই নিহিত কিমের স্বকীয়তা এবং অনন্যতা।
কিম কি দুকের সিনেমা সবসময়ই আপত্তিকর সম্পর্কের উপাখ্যান, তার ন্যারেটিভের বৈশিষ্ট্যতার প্রধান দিকই এটি। তার সিনেমার গল্প দর্শককে অস্বস্তিতে ফেলবে, দর্শক তার সিনেমা দেখে মনে করবে চলমান বিশ্বের আসল জিনিসগুলোকে এমন একটা ছদ্ম-আবরণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করবে, যাতে তাদের মনে হবে বিশ্বকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু খুব গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে এ কাহিনিগুলো আসলে দ্রুত গতির বিশ্বায়িত পৃথিবীরই চিত্রায়ণ। সেই চিত্রায়ণগুলো অদম্য, কঠোর এবং যন্ত্রণাদায়ক বিশ্বেরই প্রতিমূর্তি।
কিমের সিনেমায় সবসময়ই উত্তেজক সম্পর্কগুলো প্রধান হয়ে উঠছে এবং যেন বীণায় তোলা এক চরম আবেগের রাগের ঝঙ্কার। তিনি তাদেরকেই প্রধান চরিত্র বানান, যারা প্রচলিত সমাজের আইন ভাঙ্গতে অভ্যস্ত। তারা কখনো দৃশ্য, কখনো আবার গ্যাঙস্টার আবার কখনো পতিতা হওয়ার চেষ্টারত। তারা জীবন থেকে পালাতে যায়, কিন্তু সবসময়ে ফাঁদে আটকা পড়ে। এগুলো যেন কিম কি দুকের নিজের জীবনেরই গল্প। একদিকে কোরিয়াতে যেমন রোম-কম সিনেমা নির্মিত হচ্ছে, আবার অন্যদিকে অনেক কোরিয়ান থ্রিলার অথবা আ্যাকশন সিনেমা রয়েছে, বেশ কিছু বিতর্ক এড়ানো নির্বিষ আর্ট ফিল্মও রয়েছে। এসব ঘরানার মধ্যে কিম কি দুক তার নিজের একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তার নিজস্ব ন্যারেটিভের মাধ্যমে একটি বাইনারি সৃষ্টি করেছিলেন। একদিকে তিনি তার বেশ কিছু সিনেমায় একই ধরনের একটি থিম তুলে ধরেছেন, যা দুইজন বিচ্ছিন্ন সম্পর্কের স্বতন্ত্র মানুষের কাছাকাছি আসার গল্পের বয়ান তৈরি করে। আরেকদিকে তারা নিজেরা নিজেদের প্রবোধ দিতে থাকে এবং তাদের এই সম্পর্কগুলো আবার নানা ধরনের অবমাননাকর জীবনের প্রতিচ্ছবি, যেটি বুঝতে এবং গ্রহণ করতে অনেক দর্শকের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।
তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ক্রোকোডাইল’ (১৯৯৬)-এ দেখা যায় একজন পুরুষ একজন আত্মহত্যার প্রচেষ্টারত নারীকে রক্ষা করে এবং তারা এক ধরনের অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আবার ‘আইসল’ (২০০০)-এ বাকশক্তিহীন হি জিন এবং পলাতক হুয়ান শিকের মধ্যকার নিষিদ্ধ সম্পর্ক প্রত্যক্ষ করা যায়, পলাতক পুরুষ চরিত্রটি আবার বেশ চড়া মূল্য দিয়ে নারী চরিত্রের আশ্রয় গ্রহণ করে। ‘বাড গাই’ তেও একই ধারার কাহিনি, যেখানে একজন গ্যাঙস্টার এক সুন্দরী তরুণীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে, এতকিছুর পরেও সেই তরুণী সবকিছু সহ্য করে তার ওপর নির্যাতরকারী তরুণের সঙ্গে স্টকহোম সিনড্রমের (যার দ্বারা অপহরিত, তার সঙ্গেই বিশ্বাসের সম্পর্কে জড়ান) মতো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বো (২০০৬)-এ একই ধারার গল্প দেখা যায়। এ সিনেমায় কিম কি দুক বুদ্ধ মতবাদের ‘লোলিটা-এস্কো’র গল্প বিনির্মাণের চেষ্টা করেন এবং সেই প্রতীকি মূর্তিরই প্রতিফলন ঘটান।
আবার কিম কি দুকই এক ধরনের নির্মল এবং সুন্দর কাহিনির বয়ান তৈরি করেছেন (এখানে সহিংসতা খুবই কম দেখানো হয়েছে, তবে সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের অপার্থিব চরিত্রের প্রতি সতর্ক করতে) ‘স্প্রিং, সামার, অটোমন, উইন্টার… অ্যান্ড স্প্রিং’-এর মতো সিনেমায়। এই চলচ্চিত্রে কিম নিজেও অভিনয় করেছেন। তার সিনেমাগুলোকে তিনটি মোটা দাগের মাধ্যমে বিভক্ত করা যায় : অবৈধ বা নিষিদ্ধ কিংবা অসম সম্পর্ক, সহিংসতা এবং আধ্যাত্মিকতা।
সিয়ং-ইল জাংয়ের মতো একজন কোরিয়ান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব কিমকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি কেন উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে চলমান মতাদর্শিক বিতর্কের জটিলতাগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে তার চরিত্রগুলোকে উপস্থাপন করেন। কিম উত্তর দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি আসলে আধুনিক কোরিয়ান সমাজের মূল সমস্যাগুলো নিয়েই কাজ করতে চাই।’ পরে জাং নিজেই লিখেছেন যে অনেক তথাকথিত চলচ্চিত্র সমালোচক যারা নিজেদের বড় বুদ্ধিজীবী ভাবেন, কিন্তু তারা ভাবতে চান না যে কিমের ‘বাড গাই’ আসলে কোরিয়ান সমাজেরই এক ধরনের রূপক। তাই তো মাইউইঙ্গ-জ্যা কিমের মতো কোরিয়ান চলচ্চিত্রবোদ্ধারা কিম কি দুকের চলচ্চিত্রে কোরিয়ান সমাজের আত্মপরিচয়ের সংকটে জর্জরিত হওয়ার বিষয়টিকেই প্রধান করেছেন। আসলে কিম তার প্রায় সব চলচ্চিত্রেই কোরিয়ান সমাজের এই আত্মপরিচয়ের সমস্যাকেই উপজীব্য করতে চেয়েছেন।
কিম কি দুক শেষ জীবনের দিকে নানা বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এবং তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে এক ধরনের ব্রাত্যজনে পরিণত হয়েছিলেন। তার সৃষ্টিশীল নির্মাণও অনেক কমে আসছিল। তিনি তার চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলোর মতোই যাযাবরে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি কাজাখস্তানে বসে তার শেষ সিনেমা ‘ডিজলভ’ (২০১৯) নির্মাণ করেছিলেন। তিনি এরপরে লাটভিয়ায় বসাবাস করছিলেন এবং সেখানে স্থায়ী বসতি গড়ার জন্য ‘বিচ হাউস’ কেনার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু এরমধ্যে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় তাকে।
এই অশান্ত বছরে আমরা অনেক মহান চরিত্রের অদম্য ব্যক্তিদের হারিয়েছি। কিম কি দুকের মৃত্যুতে কোরিয়ান সিনেমার এক অপূরণীয় ক্ষতি যেমন হয়েছে, তেমনি বিশ্বচলচ্চিত্র এসময়ের একজন সৃষ্টিশীল নির্মাতাকে হারাল। তিনি কখনো প্রচলিত নিয়মের তোয়াক্কা করতেন না, নিজেই নিজের নিয়মে চলতেন। তিনি সহিংসতাকে গীতিধর্মী করে তুলেছিলেন, তার মতে প্রকৃত সম্পর্কগুলো আসলে অপ্রকৃত এবং তার আধ্যাত্মিকতা সমস্ত ধরনের ডগমাটিক অ্যাপ্রোচকে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু তিনি ত্রুটির ঊর্দ্ধে ছিলেন না। কিন্তু তার কিছু যেমন ধারণ করাও যাবে, তেমনি কিছু আবার বর্জনও করা যাবে। আমাদের তার এসব অর্জন এবং বর্জনকে নিয়েই বাঁচতে হবে।


তথ্যসূত্র:

১. https://www.theguardian.com/film/2020/dec/11/kim-ki-duk-shock-violence-beauty-south-korea-director

২. https://www.freepressjournal.in/entertainment/remembering-the-korean-maverick-kim-ki-duk

৩. http://www.tasteofcinema.com/2015/filmmaker-retrospective-the-contemptuous-cinema-of-kim-ki-duk/

৪.https://www.academia.edu/16310877/Identity_and_Otherness_in_the_Films_of_Kim_Kiduk

৫.https://www.academia.edu/29628675/Korean_post_new_wave_film_director_series_Kim_Ki_Duk

৬. https://www.sensesofcinema.com/2002/feature-articles/kim_ki-duk/

৭. https://www.france24.com/en/live-news/20201211-kim-ki-duk-controversial-master-of-cinematic-violence

 

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া