X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিষণ্ন ২০২০: প্রেমের পরীক্ষাতে কী ‘অটোপাসে’র সুযোগ আছে তুনাবী?

আহসান কবির
০১ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:১০আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:১৭

আহসান কবির যদি চলে যাই না ফেরার দেশে
জানি কেউ আসবে না আমার শেষে!
বৃথা যাবে স্বজনহীন জানাজা আর যত প্রশাসনিক আয়োজন হোক, শেষযাত্রায়
তোমাকে হারানোর পর এই প্রথম- মরে যেতে ইচ্ছে হলো না আমার!
তুমিও ভালো থেকো করোনার দিনে,

প্রতিষেধক মেলে যদি প্রথমেই কিনে
পাঠাবো তোমাকে
তুনাবী, জানো তো বিরহ প্রেমকেই বেশি মনে রাখে!
প্রিয় তুনাবী
করোনার বিষে নীল হয়েছিল ‘বিশ বিশ’(২০২০ সাল)-এর অধিকাংশ দিন, হোক সেটা শুক্র কিংবা শনি, মঙ্গল কিংবা বৃহস্পতি! প্রেমের ক্যালেন্ডারে যেমন কোনও রবি সোম নেই, তেমনই প্রেমের ভাষাও পুরোপুরি শিখে উঠতে পারিনি এখনও। ঘরবন্দি প্রেম কি বেড়েছে করোনাকালে? আকাশের বর্ণমালা কী ভাসমান মেঘ? তুনাবী, বিরহের যে বেদনা তুমি জলে স্থলে অন্তরীক্ষে এঁকে দিয়ে গেছো, প্রেমের ভাষার ব্যঞ্জন বর্ণ কী সেই বেদনারই বংশধর? বিরহ প্রেমকে যতই মনে রাখুক, পরাজয়ের বেদনা তার সর্বশেষ অলংকার। দম্ভ নিয়ে যাকে ভোট দিয়েছিলে সেই ‘উন্মাদ’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেই যাও! তুনাবী, আকাশ আর প্রেমের বর্ণমালার মতো বেদনার ভাষাটাকে দেখো আসো ২০২০-এর নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তুমুলভাবে পরাজিত ট্রাম্পের কাছে গিয়ে!
তুনাবী, যতই নিজেকে কুলীন মনে করো, সাম্রাজ্যবাদের ভাষা আর রঙ ভিন্ন! সাম্রাজ্যবাদ করপোরেট ক্যারিয়ারের নামে তোমার সব পরিশ্রম শুষে নেওয়ার পর যখন তোমাকে আর দরকার হবে না তখন আমেরিকার সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় জর্জ ফ্লুয়েডের মতো তোমাকে হাঁটুচাপা দিয়ে মারবে! আমেরিকান সাদা পুলিশের হাঁটুচাপায় নিহত হাতে হ্যান্ডকাফ বাঁধা জর্জ ফ্লয়েড যেমন মরার আগে বলতে পেরেছিল আমি শ্বাস নিতে পারছি না, ঠিক তেমনই তুমি চলে যাওয়ার পর আমি কখনও আনন্দে শ্বাস নিতে পারিনি তুনাবী! প্রেমের ক্যালেন্ডারে যেমন রবি সোম নেই তেমনই কোনও প্রেমিক আমৃত্যু অবসরে যেতে পারে না। তোমার প্রিয় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ২০২০ সনের মার্চে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও প্রেম কখনও অবসর মেনে নেয় না। মৃত্যু ছাড়া আমার অবসর মিলবে না তুনাবী!
করোনার সংক্রমণ এড়াতে রাজধানী ঢাকার রাজাবাজারে লকডাউনে থাকার পরেও মরে যাওয়ার জন্য কাঙ্ক্ষিত একটা অবসর মিলে গিয়েছিল তুনাবী। মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো আমিও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম ‘বিশ বিশ’-এর জুলাইতে। আশ্চর্য হবে এটা শুনে যে তুমি চলে যাওয়ার পর এই প্রথম মরে যেতে ইচ্ছে হয়নি আমার! তুনাবী, আমার শেষযাত্রায় কেউ আসবে না তা কি হয়? ইচ্ছে হয়নি বলেই হয়তো বেঁচে ফিরেছি, সাথে করে নিয়ে এসেছি করোনাজনিত কারণে দেখা দেওয়া অন্যান্য উপসর্গ! হৃদয়টা আগেই দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিলে তুমি, করোনার কারণে ফুসফুসটাও এখন বড় বেশি বেদনা দেয়। হয়তো বেঁচে থাকাটাই আসল! তাই করোনার নামে পৃথক হয়েছে মানুষের কাছ থেকে মানুষ, মাস্ক পরে অনেকেই হয়তো মুখোশবদ্ধ হয়েছে আগের চেয়ে বেশি! তুনাবী, মুখঢাকা মুখোশের এই দুনিয়ায়, মানুষকে কী দেখে চিনবে বলো? তাই ছেলে চিনতে চায়নি বাবাকে। করোনায় মৃত্যুর পরে বাবার পেনশন তোলার জন্য মৃতের সার্টিফিকেট তুলে মৃত বাবাকেই হাসপাতালে ফেলে গেছে ছেলেমেয়েরা! মা করোনা আক্রান্ত হলে শেরপুরের নালিতাবাড়ি যাওয়ার পথে অসুস্থ মাকে ফেলে আসে মেয়ের জামাইসহ অন্যরা সখিপুরের জঙ্গলে। আমার আকুতি তুমি যেমন কখনোই শোননি, সারা রাত তেমনি সেই মায়ের আর্তচিৎকার পথের কুকুর ও গাছের পাখি ছাড়া আর কেউ শোনেনি! করোনার এই নীল বিষের বছরে করোনা আক্রান্ত না হয়েও পাঁচ হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন জসিম নামের এক প্রকৌশলী, যিনি সাভারে থাকতেন। মৃত জসিমের আত্মীয়-স্বজন অভিযোগ করেছেন, করোনা সন্দেহে চিকিৎসা না দিয়ে জোর করে (আনসার ডেকে) হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল! পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালিতে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে খোলা রাস্তায় ফেলে যায় স্বজনরা। স্বামী পরিত্যক্তা রেনিসা বেগম মালা সারা রাত এবং পরদিন সকাল পর্যন্ত কাটান খোলা আকাশের নিচে! মিনারা বেগম নামের এক নারী রক্তচাপ মাপতে গিয়েছিলেন বাড়ির পাশের এক ফার্মেসিতে। ফার্মেসিতে ঢোকার আগেই মাথাঘুরে পড়ে যান। এরপর মুখ থেকে ফেনা বের হতে থাকে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। মিনারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সন্দেহে ফার্মেসির লোকজন ফার্মেসি বন্ধ করে চলে যায়। সারা রাত সেখানে পড়ে থাকে তার মৃতদেহ!
তুনাবী, করোনার প্রকোপের প্রথম দুই এক মাসে মানুষ এতটাই নির্মম হয়ে গিয়েছিল। এমনকি করোনায় মৃতদের জন্য ঢাকার খিলগাঁওয়ের যে কবরস্থানে দাফন করা নিশ্চিত করা হয় সেখানে দাফন না করার জন্য ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় কিছু মানুষ। তুনাবী, করোনাকালে আমার মনে হয়েছে তোমার চেয়েও নির্মম মানুষ আছে এই পৃথিবীতে!
আশার কথা এইটুকু যে বিশ বিশের এই নিদানকালেও চোখে পড়েছে বিপরীত চিত্রও। তুনাবী, মৃতদেহ দাফনের জন্য খাটিয়া দেয়নি নিকটস্থ মসজিদের কেউ। দুই ছেলে ও বাবা এরপর তার সেই সন্তানের মৃতদেহ কাঁধে বয়ে নিয়ে দাফন করতে যান এবং এই ছবি ভাইরাল হয়। ঢাকার মিরপুরের আহমেদনগর পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা দুই ছেলে সকাল থেকে মৃত মাকে নিয়ে বসেছিলেন। ছেলেরা জানান তাদের মা জয়গুন নেসা (৮৫) কিডনিজনিত সমস্যায় ভোর রাতে মারা যান। কিন্তু মায়ের দাফন কাফনের জন্য এগিয়ে আসেননি কোনও পাড়া প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়-স্বজন। পরে ছেলেরাই পুলিশের সহযোগিতায় মার মরদেহ দাফন করেন! জানাজা পড়াতে রাজি হননি যখন কোনও মসজিদের ইমাম এবং আসেনি কোনও একান্ত স্বজন তখন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা শুভ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী নিজ কাঁধে খাটিয়া তুলে সহকর্মীদের সাথে নিয়ে জানাজা পড়িয়েছেন। মানবিকতার এই গল্প বেঁচে থাকতে অনুপ্রেরণা জোগায়, অনুপ্রেরণা এবং ভরসার প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন নারায়ণগঞ্জের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম খন্দকার খোরশেদ। করোনায় নারায়ণগঞ্জের খোকন সাহা মারা গেলে সৎকারের জন্য এগিয়ে আসেন খোরশেদ, খোকন সাহার মুখাগ্নি করেন তিনি! করোনা আক্রান্ত মানুষের এই একান্ত স্বজন নিজেও আক্রান্ত হন করোনায়, সুস্থ হয়ে আবারও ফিরে যান জনসেবায়। বদরুদ্দোজা শুভ আর মাকসুদ আলম খন্দকার খোরশেদের জন্য তিন অক্ষরের ভালোবাসা-স্যালুট!
স্যালুট মাশরাফির জন্য যিনি তার ষোল বছরের ব্যবহৃত ব্রেসলেটটা নিলামে তুলে প্রাপ্ত ৪২ লাখ টাকা দান করেছেন করোনাক্রান্তদের চিকিৎসা ফান্ডে। একইভাবে ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান তাদের ব্যাট নিলামে তুলেছিলেন, প্রাপ্ত টাকা দিয়েছেন একই ফান্ডে। তুনাবী, তোমাকে পাইনি আমি কিন্তু এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো অর্জনটা পায় খেলাধুলোতে। অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। একটা লেখার শিরোনাম ছিল এমন- উনিশের হাত ধরে বিশে কাপ জয়! জ্বলেপুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়! তোমাকে হারিয়ে আমিও ভেঙে পড়িনি তুনাবী, যদিও করোনার কারণে মার্চের পর থেকেই ফুটবলার ও ক্রিকেটাররা গৃহবন্দি হয়ে পড়েন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকে সব ধরনের খেলাধুলা।
খেলাধুলা বন্ধ হয়ে আবার চালু হলেও মার্চ থেকে বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল বছরের শেষ পর্যন্ত। যারা ‘বিশবিশে’র বছরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তাদের জন্য ‘অটোপাস’ ঘোষণা করা হয়েছে! যারা গতবার এইচএসসি পরীক্ষায় এক বা দুই বিষয়ে ফেল করেছিলেন, যারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিলেন বা যারা মান উন্নয়ন পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন ২০২০ সালে, তাদের ফলাফল কীভাবে ঘোষণা করা হবে তা এখনও জানা যায়নি। তুনাবী, প্রেমের পরীক্ষাতে কী অটোপাসের কোনও সুযোগ আছে? যতই নির্মম হও করোনার জন্য কী একবার আমাকে তোমার কাছে আসার সুযোগ দেবে তুনাবী? বিশ্বাস করো, সুযোগ পেলে আমি মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তোমার সাথে শুধু একটিবার কথা বলবো!
তুনাবী তুমি জানো, বাংলাদেশের মতো সারা পৃথিবীতে নতুন করে জনপ্রিয় হবার সুযোগ পেয়েছে আইটি বা ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যবসা। ঘরে ঘরে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবসা যেমন জমজমাট হয়েছে তেমনি জনপ্রিয় হয়েছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ পদ্ধতি। জনপ্রিয় হয়েছে ‘জুম অ্যাপস’ আর ‘ই-কমার্স সাইট’। কেউ কেউ নাম দিয়েছেন এসবের-‘অন্তরীণ সহায়ক ব্যবসা’। ‘কোয়ারেন্টিন’ শব্দটা ১৯১৬ সালেই শরৎচন্দ্রের লেখাতে পাওয়া গিয়েছিল। করোনার কারণে কোয়ারেন্টিন আবারও প্রচলিত হলে কেউ কেউ কবিতা লিখেছেন এভাবে- ‘বাংলাটাও ভালো। অন্তরীণ! শরৎবাবু আপনার গফুর ও আমিনার আবার খবর নিন!
তুনাবী তুমি জানো, তবু হয়তো আমার চিঠি পড়ে তোমার মন ভেঙে যাবে এ কারণে যে করোনার কারণে এ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিচিত মানুষ চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মারা গেছেন তোমার খুবই প্রিয় দুই ‘সাদা চুল ও সাদা মনে’র মানুষ। শিক্ষাবিদ ও লেখক প্রফেসর আনিসুজ্জামান এবং কামাল লোহানি। তুমি যার সুর করা গান সবচেয়ে বেশি গাইতে সেই আলাউদ্দীন আলী আর বাংলা সিনেমার প্লেব্যাকের বরপুত্র এন্ড্রু কিশোর মারা গেছেন এ বছর। মারা গেছেন বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের প্রায় অপরিহার্য মানুষ বিশিষ্ট অভিনেতা ও লেখক আলী যাকের। আর কখনও শোনা যাবে না তার সেই দীপ্ত উচ্চারণ- জাগো বাহে কোনঠে সবাই! মারা গেছেন অভিনেতা আব্দুল কাদের। তার সেই ডায়ালগ- মাইরের মধ্যে ভাইটামিন আছে কিংবা বডি টারমারিক(গায়ে হলুদের ইংরেজি!) কী কখনো ভোলা সম্ভব?
মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলী, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও লেখক রশীদ হায়দার, প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী, শিক্ষাবিদ এমাজউদ্দীন আহমদ, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন যিনি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ শাজাহান সিরাজ, মোহাম্মদ নাসিম এবং বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনও মারা গেছেন এই ‘বিশবিশ’-এর বছরে। মারা গেছেন ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার লতিফুর রহমান, যমুনা গ্রুপের নুরুল ইসলাম বাবুল এবং পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার আবুল হাসেম।
তুনাবী, তোমার কাছে লেখা আমার চিঠির মতো ‘বিশবিশ’-এর বছরে মানুষের মৃত্যুর তালিকা আরও দীর্ঘ! আরও কত দীর্ঘ হবে শিক্ষাঙ্গনের ছুটির দিন কেউ জানে না। কেউ জানে না কারা এই করোনাকালে নেদারল্যান্ডের লরেন শহরের ‘সিংগার লরেন’ জাদুঘর থেকে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যানগগের ‘স্প্রিং গার্ডেন’ নামের চিত্রকর্মটি চুরি করেছে। চোর এখনও ধরা পড়েনি! তুনাবী, আমি এমন চোর হতে চাই যে তোমার হৃদয় চুরি করার পরেও ধরা পড়বো না। প্রয়োজনে ভ্যানগগের মতো আমি কান কেটে তোমাকে উপহার পাঠাতে চাই! তাই বলে আমার কাছ থেকে গরুর হিসি দিয়ে তৈরি স্যানিটাইজার কিংবা গোবর দিয়ে তৈরি সাবান উপহার হিসেবে চেয়ো না। ভারতের কোনও কোনও রাজ্যে এসব দেদার বিক্রি হলেও আমি তোমাকে পাঠাতে পারবো না! প্রয়োজনে আমি তোমার অনলাইন ক্লাসে প্রতিদিন যুক্ত থাকবো। করোনার কারণে সারাদেশে যেমন ‘আমার ঘরে আমার ক্লাস’ নামের অনলাইন পাঠদান শুরু হয়েছে। নতুন এই প্রযুক্তির পাঠদানে সবাই যেমন আধুনিক মোবাইল নিয়ে ক্লাসে হাজির হতে পারে না, আমিও হয়তো হৃদয়ের সব দ্যোতনা নিয়ে তোমার প্রেমের ক্লাসে হাজির হলেও তোমাকে পাবো না!
হয়তো পঙ্গপাল হানা দেবে আফ্রিকা কিংবা ভারতে, ধুলোঝড় ঢেকে দেবে আফ্রিকা ও এশিয়ার মরুভূমি, ২০১৯-এ বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোতে ৪২টি ছবি মুক্তি পেলেও ২০২০-এ যেমন ১২টি ছবি মুক্তি পেয়েছে, ৪০৩টি থেকে কমতে কমতে এখন যেমন আশিটি হলে ছবির প্রদর্শনী হয় তেমনি আমার প্রতি তোমার চিঠি পড়ার ভালোবাসাটুকুও কমে আসবে! এ বছর অস্ট্রেলিয়ার দাবানল যেমন পুড়িয়েছে গাছপালা আর মানুষ ঠিক তেমনি তোমাকে না পাওয়ার বেদনা আমাকে পোড়াবে। করোনার কারণে এবার হজ পালনে যেমন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সৌদি সরকার ঠিক তেমনি আমার প্রেমের প্রতিও তোমার আজীবন নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে! শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গাতে লঞ্চডুবিতে যেমন ৩৪ জন মারা গিয়েছিল, যেভাবে মারা গিয়েছিল বৎসোয়ানায় হাতিরপাল, তেমনি না হলেও তোমার প্রেমের মাশুল দিতে গিয়ে আমি হয়তো এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ারের নামে মেজর (অব.) সিনহার মতো নিহত হবো! সিনহার পরিবার কতটা বিচার পাবেন সেই প্রশ্ন না তুলেও বলতে পারি, তুনাবী তোমার প্রেমের বিচারহীনতার নির্দয় শিকার হয়ে আমাকে ধুঁকে ধুঁকে মরে যেতে হবে একদিন!
তুনাবী, আমার সারা মাথাই কপাল। কারণ, আমাকে করোনায় কিংবা মেজর সিনহার মতো মরতে হয়নি! বেঁচে আছি এ কারণে যে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসেছে। হয়তো ২০২২ সালে চালু হয়ে যাবে পদ্মা সেতু!
তুনাবী ভালো থেকো ততদিন। আমি পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে যেদিন খুলনা যেতে পারবো সেদিন থেকে তোমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। নিদেনপক্ষে পদ্মার সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করবো- আমি তোমার জন্য আর কখনও আমেরিকা যাবো না!
ইতি,
তোমার চালচুলোহীন মুনাদ।
লেখক: রম্যলেখক

/এসএএস/এমওএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ