X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

শতবর্ষে আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়কে যেমন দেখতে চাই

লীনা পারভীন
২৩ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:০৪আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:০৪

লীনা পারভীন গর্ব করে বলি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। জীবনের আমার একটাই চাওয়া ছিল আর সেটা হলো আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে ভর্তি পরীক্ষার তালিকায় কেবল এই একটা অপশনই রেখেছিলাম। সবাই যখন সারা দেশের এই মাথা সেই মাথায় দৌড়ে দৌড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছিলো আমি তখন চোখ বন্ধ করে কেবল ঢাবির ফরমটাই কিনলাম আর পরীক্ষায় বসে গেলাম। হয়তো ভাগ্যটা ভালো ছিল আর সাথে ছিল এসএসসি ও এইচএসসি'র ফলাফল। একবারেই সুযোগ পেয়ে গেলাম আর মোটামুটি তালিকার উপরের দিকেই। ঢাবিতে সুযোগ না পেলে কী করতাম সেটাও ভেবে রাখিনি কখনও। ভর্তি হলাম। শুরু হলো আমার বিশ্বকে চেনার অধ্যায়। আগের আমি আর পরের আমির মধ্যে পার্থক্য হয়ে গেলো আকাশ-পাতাল। বলা হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেলেও যে জ্ঞান পাওয়া যায় সেটা হয়তো অনেকের সারা জীবনের অধ্যাবসাতেও অর্জিত হয় না। আর এই কারণেই আমার গর্ব। আমি জীবনকে আজ যতটা চিনি বা জানি তার পুরোটাই এই ক্যাম্পাসের অবদান। অনেক অনেক বই পড়ে বা পরীক্ষার ফলাফল হয়তো অনেকেই প্রথম স্থান অর্জন করে থাকে কিন্তু জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই যদি না গড়ে উঠে তাহলে সেই অর্জন অর্থহীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কখনই একজন ছাত্রকে কেবল পাস দিয়ে বড় চাকরি পাওয়ায় হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় মানে বিশ্বকে চেনার বিদ্যালয়। এখানে একজন ছাত্র যেমন নিজেকে চিনবে তেমনি জানবে বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সম্পর্কেও। আর সব মিলিয়েই গড়ে তুলতে শিখবে একটি জীবনবোধ। এই “বোধের” জন্ম দেয়াতেই স্বার্থকতা।

আমার ভালোবাসার বিশ্ববিদ্যালয় আজ শতবর্ষে। প্রতিটা জন্ম মানেই অভিজ্ঞতার ঝুলি। ঢাবির অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ আছে একটি দেশের জন্মের ইতিহাস দিয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়ের সাথে জড়িয়ে আছে আমার প্রাণের বাংলাদেশের পরিচয়। বিশ্বের অনেক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা। কেন? এর উত্তরটিকে বুঝতে হবে অনেক গভীরে গিয়ে। অনুধাবন করতে হবে রাজনৈতিক সচেতনতা দিয়ে। বিশ্বের আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একটি ভাষার জন্ম দেয়নি, একটি দেশ , একটি ভুখণ্ডকে জন্ম দেয়নি। অথচ ঢাবির ছাত্ররা এই কাজটি করে গেছে সবসময়। যতবার দেশের উপর ঝড়, ঝাপ্টা এসেছে সেখানেই শিল্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রত্যাশার তালিকাটা অনেক বেশি। জ্ঞান, বিজ্ঞান, গবেষণা, নতুন সৃষ্টির জগতে উজ্জ্বল দেখতে চাই ঢাবিকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও একই আশা ব্যক্ত করেছেন। তিনিও এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ছাত্র। আরেকটু গর্ব করে বলাই যায় যে তিনি আমার হলের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন শতবর্ষের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি নিজেও আবেগাপ্লুত হয়েছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী নয়, কথা বলেছেন একজন সাবেক ছাত্র হিসাবে। আর এটাই ঢাবির সৌন্দর্য। আমরা এখনও আবেগী হই আমার ক্যাম্পাসের কোনও ঘটনায়।

রাজনৈতিক উত্থান পতনে অনেক পিছিয়েছি আমরা। কিন্তু আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলাতে হলে আর পিছিয়ে থাকার উপায় নেই। একটা সময় ঢাবি মানেই যেমন মেধার চর্চা মনে করতো ঠিক তেমনি এমনও সময় এসেছিলো যখন ঢাবি মানেই অস্ত্রের ঝনঝনানীর শব্দ পাওয়া যেত। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোচনা বা কবিতা, গানের কলকাকলীর জায়গাটি দখল করে নিয়েছিলো গুলির শব্দ। সেসব দিন আর নেই। এখন আমরা একটি উন্নত দেশের নাগরিক হবার স্বপ্ন দেখছি। এই স্বপ্নের সবচেয়ে বড় সারথী হতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। এখান থেকেই জন্ম নিবে আগামীর জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন বোস, অ্যারিস্টটল বা আইনস্টাইনের মতো দার্শনিক বা বিজ্ঞানীরা। যাদের সৃষ্টিতে স্বপ্নের বুনন গড়বে বাংলাদেশ। মান্ধাতার আমলের চিন্তা নিয়ে পড়ে থাকার সময় আর নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে কর্মচারী সবার মধ্যেই আসতে হবে এই পরিবর্তনের চেতনা।

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের অনেক সূচকে আমরা এগিয়েছি সবার চেয়ে বেশি। অর্থনৈতিক ভিত্তি হচ্ছে দৃঢ়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন ঢাবির যেকোনও উন্নয়নে তিনি পাশে আছেন। সুযোগ নিতে হবে এই বিশ্বস্থতার। প্রতিদান দিতে না পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে আবারও। চাকরির বাজারে বাড়ছে প্রতিযোগিতা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট পালটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই পাল্টে যাওয়ার সাথে নিজেকেও পাল্টাতে হবে শিক্ষক এবং ছাত্র সবাইকে। মগজে মননে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে হবে। কেবল বিদ্যায় এগুলেই হবে না, পরিবর্তন আনতে হবে মগজের দিকেও। খোলামনে যুক্তিতর্কের মাঝেই গড়তে হবে নিজের মেধাকে। একজন মেধাবী মানে কেবল সার্টিফিকেটের নম্বর নয়। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিস্তৃত হতে হবে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে। আগামীর বাংলাদেশ মানে যেন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তোলার। এই মানবশক্তি গড়ে তোলায় ঢাবির ভূমিকা হতে হবে রোল মডেল। দেশের নয় কেবল, বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুস্বরণ করবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে। এমনটাই স্বপ্ন দেখি আমি। গবেষণা এবং নতুন নতুন সৃষ্টির অপর নাম যেন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

একটা সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। আমি ব্যক্তিগতভাবে অন্য কারও মতো হতে চাওয়াতে কোনও স্বার্থকতা পাই না। তাই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অক্সফোর্ড বা ক্যামব্রিজ নয় দেখতে চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই যেন প্রাচ্য, প্রতীচ্যের অন্যান্যরা আমাদের কাছ থেকে উদ্যম পায়, এগিয়ে যাবার নতুন পথ খুঁজে পায়। সাংস্কৃতি চর্চার আঁধার হবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়। বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোন, শিক্ষকরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের যে মাস্টারপ্ল্যাণের কথা বলেছেন আশা করবো সেখানে তিনি সবদিক বিবেচনায় এনেছেন যেখানে কেবল শিক্ষার্থীদের বিষয় নয়, থাকবে শিক্ষকদের উন্নয়নের বিষয়টিও।

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ