X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিদিন লক্ষ যাত্রীর মলমূত্র সরাসরি নদীতে!

বাহাউদ্দিন ইমরান
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:০০আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:১১

দেশের নদীপথগুলোতে ছুটে চলেছে বেশকটি ফেরি ও লঞ্চ। প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী পারাপারে এসব বাহনের বেশিরভাগগুলোতেই নেই পর্যাপ্ত টয়লেট। থাকলেও দেখা যায় নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। আর তাই প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মানববর্জ্য সরাসরি পড়ছে পানিতে। মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে নদী। সেই পানিতেই চলছে নদীর পাড়ে থাকা মানুষজনের ধোয়ামোছার কাজ।

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া; এ দুটি বড় নৌ-রুটেই প্রতিদিন চলছে চলছে ফেরি ও লঞ্চ। সেগুলোর টয়লেটের দুরবস্থা দেখে ভড়কে যেতে হয় অনেককে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বিপাকে পড়ে বেশি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব টয়লেটে পয়োনিষ্কাশনের ছিটেফোঁটাও নেই। কেউ মলত্যাগ করলেই তা সরাসরি পড়ছে নদীর পানিতে। সে মল ভাসতে ভাসতে ছড়িয়ে পড়ছে নদীর পাড়গুলোতে।

এদিকে ফেরি বা লঞ্চে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য যে পানি সংরক্ষণ করা হয়, তাও আসছে ওই একই নদী থেকে। মোটর বা টিউবওয়েল ব্যবহার করে তোলা হচ্ছে পানি। তাতেই যাত্রীরা ধুচ্ছেন হাত-পা, মুখ। লঞ্চ-ফেরির কর্মীরাও নিয়মিত ওই পানি দিয়ে সারছেন গোসল।

এ ছাড়াও নদীর পাড়ে যারা থাকেন, তাদের পরিচ্ছন্নতার কাজে নদীই ভরসা। দূষিত পানিতে গোসল, থালা-বাসান, কাপড় ধোয়ার কাজ করতে দেখা গেছে অনেককে।

মানুষের মলমিশ্রিত পানি ব্যবহারে শরীরে প্রবেশ করতে পারে মারাত্মক জীবাণু। যা থেকে দেখা দিতে পারে সংক্রমিত রোগ। এমনটাই জানালেন চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদ্মায় আগের মতো আর জোয়ার-ভাটা হয় না। ফলে এসব পানিতে মানুষের মল সরাসরি পড়ছে বলে পানি দূষিত হচ্ছে। এই পানি ব্যবহারে হতে পারে টাইফয়েড, কলেরা, ডায়রিয়াসহ, নানা ধরনের চর্মরোগ।’

পরিবারসহ মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী হয়ে গন্তব্যে ছুটছেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আফরোজা আহমেদ। কথা প্রসঙ্গে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বাস থেকে নেমে সন্তানদের নিয়ে লঞ্চে উঠেছি। লঞ্চে ওঠার পর টয়লেটে যাওয়ার চেষ্টা করেও ফিরে এসেছি। পরিবেশ দেখে চুপচাপ এখানে এসে বসে আছি। আমার সন্তানরাও কেউ টয়লেটে যেতে পারেনি। একেবারে বাড়িতে যাওয়া ছাড়া আর উপায় দেখছি না!’

এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) তথ্য অনুসারে, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাঁচ বছরের নিচের শিশু এবং অতি দরিদ্ররা। টেকসই লক্ষ্যমাত্রা উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জনে বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকাকে বড় বাধা বলে মনে করা হয়।

ডা. তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, মল দ্বারা দূষিত নদীর পানি ব্যবহারে চরাঞ্চলে বাসরত মানুষদের মধ্যে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। 

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সরকারিভাবে পয়োনিষ্কাশনের সুব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে নদীর পানি দূষণ রোধ জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি পরিচালক পার্থ হেফাজ শেখ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘রেলওয়ের স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং খুলনাতেও পাবলিক টয়লেট নিয়ে আমরা কাজ করছি। এর ধারাবাহিকতায় নৌপরিবহন থেকে অবাধে মল বের হয়ে যেভাবে পানি দূষিত করছে, তা বন্ধে কাজ করবো। তবে এটি সময়সাপেক্ষ।’

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে ফেরিতে চড়ার আধঘণ্টা পর কথা হলো শিক্ষার্থী ওসমান গনীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চাকরির ভাইভা দিতে ঢাকা যাচ্ছি। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে এই পথে চলাচল। এতদিনেও এ রুটের ফেরির টয়লেটে কোনও পরিবর্তন দেখলাম না। ভেবেছিলাম করোনা পরিস্থিতিতে ফেরিতে হাত ধোয়ার জন্য পানি ও সাবান থাকবে। কিন্তু এখনও আমাদের টনক নড়েনি। টয়লেটে গিয়ে দেখি মলমূত্র সরাসরি নদীর পড়ছে। সেই পানিই আবার অন্যদিক দিয়ে তোলা হচ্ছে হাত ধোয়ার কাজে।’

নদীর পানি দূষণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদারকিতে নৌপরিবহন অধিদফতর মাঠে রয়েছে বলে জানালেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (টিএ, নদী রক্ষা ও টাস্কফোর্স) এটিএম মোনেমুল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছি। বাস্তবায়নের জন্য সেটা নৌপরিবহন অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। গাইডলাইন অনুসারে কোনও নৌপরিবহন মালিককে নতুন করে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় জোর দিচ্ছি। মেশিনের মাধ্যমে যেন মল রিসাইক্লিং করা যায়, সেটিও গাইডলাইনে রয়েছে। যদিও এ ধরনের মেশিন বেশ ব্যয়বহুল, তবুও এর বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এমনকি পুরনো নৌপরিবহন থেকে পানি দূষণ বন্ধেও অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি।’

 

 

 
 
/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘গাজার গণকবরে অন্তত ২০ জনকে জীবন্ত দাফন’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়তে হবে’
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
উত্তাল চুয়েট, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা