X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

অসুন্দর আনন্দ চাই না

তুষার আবদুল্লাহ
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৩৯আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৫৫

তুষার আবদুল্লাহ আমার শুধু ছেলেটির ফুটফুটে অবয়বটিই মনে পড়ছে। একদম শিশির ভেজা মুখটি। আমার সামনে খেলতে খেলতে টলে পড়তো। ধীরে ধীরে ও যখন বড় হচ্ছিল, তখন অনেকদিন ওকে আর দেখা হয়নি। এই না দেখার সময়কালটাও পেরিয়ে গেছে দেড় যুগ। চোখের পলকে সময় পেরিয়ে যায়। ভেবেছিলাম ও হয়তো স্কুল পেরিয়েছে। কিন্তু যখন শুনলাম ও মৃত্যু শয্যায়, তখন জানতে চাইলাম কোথায় পড়ছিল ও, জানা গেল- উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ যাওয়ার চেষ্টায় ছিল। তার মানে সেই ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। ও মৃত্যু শয্যায় এই বাস্তবতা মেনে নিতে আমার অনেকটা সময় নিতে হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ওর অসুস্থতার কারণ হিসেবে জানতে পারি- শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে জ্ঞান হারিয়েছে। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফিরিয়ে আনতে। এরমধ্যে শুনলাম ছেলেটি বেঁচে নেই। আফসোস হচ্ছিল। ভাবছিলাম ওর বাবা মায়ের কথা। কীভাবে এই শোক সইবেন। এই শোকের সঙ্গে আরো কিছু শোকের খবর যোগ হচ্ছিল। পরিচিত বন্ধু-বান্ধবদের পরিবারের কয়েকজনের আকস্মিক মৃত্যুর খবর পেলাম। এই আকস্মিক মৃত্যুর কারণ কী? মৌনতা সকলের মাঝে। কেউ কেউ কথা বলেছেন ফিসফিস করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কিছু লেখালেখি হলো। জানলাম- এই মৃত্যুর কারণ মদ্যপান। মদে ভেজাল ছিল। ভেজাল মদ খাওয়ার কারণেই এদের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে মূলমাধ্যমেও ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। সেখান থেকেই জানা আমাদের তরুণরা বা শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন ওই মদ খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন। মারা গেছেন জনাচারেক। এই তথ্য মৃত্যু সংবাদের চেয়েও বিষাদের।

যেহেতু পারিবারিক ও বন্ধুমহলে ঘটেছে বিষয়গুলো তাই আমি একটু ঘটনার গভীরে যেতে চাইলাম। দেখলাম যারা এই ঘটনার শিকার তাদের প্রায় সবার বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশাটা ছিল বেপরোয়া। পরিবারের কাছে ছিল না জবাবদিহিতা। যখন খুশি, যেখানে খুশি বন্ধুদের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়ার অনাপত্তিপত্র ছিল। বন্ধুর বাসায় রাতে থেকে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে দূর কোথাও চলে যাওয়া যেত নির্বিঘ্নে। এই ছাড়পত্রের বদৌলতে যা খুশি তাই করতে গিয়েই নীরিক্ষার অংশ হিসেবে মদ বা বিভিন্ন নেশাদ্রব্যের স্বাদ নেওয়া নিত্যকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে কিশোর তরুণ বয়সীদের মধ্যে। ছেলে-মেয়ে কেউই পিছিয়ে নেই। গত কয়দিনে বিষাক্ত মদ বা নেশা দ্রব্য খেয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের মধ্যে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে, কিন্তু তাদের আড্ডা বা একত্রিত হওয়া বন্ধ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকার সময়ও এধরনের ফুর্তিতে তারা আরো মেতে থেকেছে। কোনও কোনোটির খবর আমরা জানতে পেরেছি দুর্ঘটনা ঘটলে। ৯৯ ভাগই জানা হয় না।

আমাদের সন্তানরা মাদক ও অন্যান্য সামাজিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এই খবরটি আমাদের অজানা নয়। একথাতো ঠিক কেউই ইচ্ছে করে অপরাধে ঝাঁপ দেয় না। মোহ এবং কৌতূহল মেটাতে গিয়ে তারা আর ফিরে আসতে পারে না। এক সময় নিজে নিজে চেষ্টা করেও ফিরে আসতে পারে না। তখন তাদের পাশে কাউকে দাঁড়াতে হয়। তখন সবচেয়ে দরকার হয়ে পড়ে পরিবারের বন্ধুসুলভ আচরণ। দেখা গেছে সন্তানদের সঙ্গে আমাদের যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই তারা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে সেই খবরটি পাচ্ছি না। কোনও কোনও পরিবার আবার সন্তানের অনেক বন্ধু বান্ধব আছে, তা নিয়ে গর্ববোধ করেন। বন্ধুরা কে কেমন, কোন পরিবার থেকে আসা। বন্ধুরা লেখাপড়া ও সৃজনশীল কাজের সঙ্গে কতটা যুক্ত সেই খবরটিও রাখার চেষ্টা করেন না। বন্ধুদের বাড়িতে রাত কাটানো, এক সঙ্গে বাড়ির বাইরে যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে, কী করছে সেদিকেও নজরদারী নেই। সন্তানের মধ্য অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হলেও, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। এই যে সম্পর্ক এবং জবাবদিহিতার ফারাক, সেখানেই সন্তান বেপরোয়া হওয়ার সুযোগ পায়। মাদক, সন্ত্রাসসহ নানা রকম অনৈতিক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার পথ পেয়ে যায়। যে পথ শুধুই খাদের কিনারে পৌঁছে দেয়। আমার পরিচিত সেই ফুল সদৃশ্য সন্তান এমন এক খাদের কিনারে গিয়ে আর ফিরে আসতে পারেনি। তার শেষ গন্তব্য হয়েছে খাদের অতল গহবর।

আমরা যখন এভাবে অসময়ে সন্তান হারাই, তখন শুধু বিলাপ করি। দিন ফুরোবার আগেই আমাদের শোকের আয়ু ফুরিয়ে যায়। সন্তান হারানোর বেদনার মতোই ভুলে যাই সন্তান হারানোর কারণ। তাইতো কিশোর গ্যাং নির্মূল হওয়ার চেয়ে, বিস্তার হচ্ছে বেশি। নানা অভিযানের পরেও পাড়া মহল্লা এখনও মাদকের হাট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদক সেবনের অভয়ারাণ্য।

সন্তানদের কথা বললাম। বিশেষ করে বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থীদের কথা। কিন্তু বিদ্যায়তন ডিঙিয়ে যখন তারা কোন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করছেন চাকরি বা দায়িত্ব নিয়ে, সেখানেও কিন্তু রয়ে যাচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত যাপন। যার কিছু তথ্য প্রমাণ আমরা সাম্প্রতিক সময়েও পেয়েছি। মূলকথা হলো পরিবার থেকে যদি জীবন যাপনের শৃঙ্খলার বাঁধনটি পোক্ত করে না দেওয়া হয়, তাহলে এপ্রকারের অপমৃত্যুর শোক সইতেই হবে। আমি জীবন উদযাপনের বিপক্ষে নই। তবে মাত্রার সীমারেখা অতিক্রম সমর্থন করি না।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ