লাদাখ নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতা অনুযায়ী, প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ থেকে দুই দেশের সেনারা আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। ভারতের পার্লামেন্টে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
প্যাংগং লেকের উত্তরের তীর থেকে চীনা সেনারা পূর্ব দিকে নিজেদের স্থায়ী শিবিরে যাবে। আর ভারতীয় সেনারাও ফিঙ্গার পয়েন্ট চার থেকে সরে গিয়ে স্থায়ী শিবিরে ফিরে যাবে। তবে সেনা সরবে পর্যায়ক্রমে। ফলে ফিঙ্গার পয়েন্ট চার থেকে আট পর্যন্ত কারও দখলে থাকবে না। পেট্রোলিং এখন বন্ধ থাকবে। রাজনাথের দাবি, ভারত তার এক ইঞ্চি জমিও হারায়নি।
রাজনাথ জানিয়েছেন, আলোচনা চলতে থাকবে। আরও কিছু বিষয়ের সমঝোতা হওয়ার বাকি আছে। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, দুই পক্ষকে এলএসি মানতে হবে। কেউ একতরফা কোনও পরিবর্তন করতে পারবে না। কোনও জমি দখল করতে পারবে না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুই দেশের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা আবার আলোচনায় বসে বাকি বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা করবেন।
চীনের বক্তব্য
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুই দেশের কোর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে সেনা সরানো নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। দুই সরকারের সম্মতিতে যে মানদণ্ড তৈরি হয়েছিল তা মেনেই প্যাংগং থেকে সেনা সরানো নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। বুধবারও বৈঠক হয়েছে। তবে এখনও সেনা সরানোর কাজ শুরু হয়নি। সেনা ও কামান সরাতে কয়েকদিন সময় লাগে। তাই অন্তত তিন-চার দিন সময় লাগবেই। আর আলোচনায় এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেনা সরানোর কাজ শুরু হবে বলে ঠিক হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মত
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, না আঁচালে বিশ্বাস নেই। সেটাই মনে পড়ে যাচ্ছে। আগে ভারত ফিঙ্গার তিন পর্যন্ত ছিল। ফিঙ্গার চার থেকে আট পর্যন্ত এলাকা কারও দখলে ছিল না। সেখানে ভারতীয় সেনা পেট্রোলিং করতে পারতো। কিন্তু চীন এসে ফিঙ্গার চার পর্যন্ত এলাকা দখল করে নেয়।
তার মতে, চীনকে এখন ফিঙ্গার পয়েন্ট আটে ফিরতে হবে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, সেনা সরালেও তারা ট্যাঙ্ক ইত্যাদি রেখে যায়। যাতে তারা দরকার হলেই দ্রুত চলে আসতে পারে। এখানে সেনা প্রত্যাহার মানে সব কিছু নিয়ে আগের অবস্থানে ফিরতে হবে।
বিজেপি নেতা ব্রিগেডিয়ার অনিল গুপ্তার মতে, সমঝোতা হয়েছে। এখন বাস্তবে কীভাবে সেনা সরানো যায় সেটা দেখতে হবে।
তিনি বলেন, ভারত কী করে সেনা সরাবে? সব পাস বরফে ঢাকা। এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে তারা যেতে পারবে। চীনকে সেনা ও কামান সব সরাতে হবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি এস পান্নু একটি টিভি চ্যানেলে বলেছেন, দুই দেশ সেনা সরানোর কথা বলছে। এটা খুবই আশার কথা। কিন্তু সাত থেকে নয় মাস ধরে সেনা সেখানে আছে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দুই দেশের সেনাদের মধ্যে আস্থার অভাব আছে।
তার মতে, ভারত কিছু জায়গা বিশেষ করে কৈলাস রেঞ্জ থেকে সরে গেলে চীন সেখানে চলে আসতে পারে। তখন কী হবে? তাই চীনকে আগে সেনা ও কামান সরাতে হবে। চীনকে ফিঙ্গার ৮ থেকেও আরও সরতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপ যেন রেকর্ড করা থাকে।
ব্রিগেডিয়ার রাহুল ভোঁসলের মতে, এই সমঝোতা শুধু প্যাংগং এর উত্তর ও দক্ষিণ তীর নিয়ে হয়েছে। বাকি জায়গায় যে বিরোধ রয়েছে তা নিয়েও দ্রুত সমঝোতায় আসতে হবে। সূত্র: ডিডব্লিউ।