X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
শুভ জন্মদিন

গীতিকবি সংঘের আয়োজনে অশ্রুসিক্ত মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

সুধাময় সরকার
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২৩:১৮আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:৫১

কিংবদন্তি গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের ৭৮তম জন্মদিন ছিল বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ভিন্ন এক উদযাপনের আয়োজন করে গীতিকবি সংঘ।

এদিন রাত ৮টায় ভার্চুয়াল প্রযুক্তির মাধ্যমে পালিত হয় এই জন্মোৎসব। সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের সঞ্চালনায় এই আয়োজনে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানকে শুভেচ্ছা জানাতে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন নিবেদন-এর প্রধান বিশ্বজিৎ রায়। আরও ছিলেন গীতিকবি সংঘের উপদেষ্টা নাসির আহমেদ, সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, সহ-সভাপতি গোলাম মোর্শেদ, সাধারণ সম্পাদক (যুগ্ম) আসিফ ইকবাল ও কবির বকুল, অর্থ ও দফতর সম্পাদক মাহমুদ মানজুর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জয় শাহরিয়ার, সাধারণ সদস্য অধরা জাহান প্রমুখ।

অতিথিরা প্রত্যেকেই মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের জীবন ও কর্ম নিয়ে বক্তব্য রাখেন। জন্মোৎসবের সূচনা হয় গীতিকবি সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেলের সূত্র ধরে। তিনি বলেন, ‘আমার পরম সৌভাগ্য রফিকউজ্জামান স্যারের স্নেহ ও দিকনির্দেশনা পেয়েছি। শুদ্ধ গান রচনার ক্ষেত্রে আমার শিক্ষাগুরু তিনি। তাঁর শতায়ু কামনা করছি।’

এরপর উৎসবের সূচনা বক্তব্য রাখেন গীতিকবি সংঘের সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। স্মৃতিকাতর হয়ে এই গীতিকবি বলেন, ‘মনে পড়ে পুরনো দিনগুলোর কথা। এলিফ্যান্ট রোডের হোটেল ব্লুনাইল-এর কথা। যেখানে রফিকউজ্জামান ভাই তার সাহিত্যচর্চা করতেন। আড্ডা হতো শিল্প-সংস্কৃতির মানুষদের। তরুণ হিসেবে তখন সেখানে যাওয়া হতো আমার। তাঁর সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ হতো। সেটি পরম পাওয়া ছিল।’

এরপর নিবেদন সাংস্কৃতিক দলের প্রধান বিশ্বজিৎ রায় তার বক্তব্যে গীতিকবি সংঘের এই বিশেষ আয়োজনটির জন্য সাধুবাদ জানান সংশ্লিষ্টদের।

সংঘের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কবির বকুল মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আপনি আছেন বলেই বাংলা গান সমৃদ্ধ হচ্ছে। আপনি আছেন বলেই আমরা শুদ্ধভাবে গান লিখতে পারছি। কারণ, নিয়ম মেনে গান লেখার চর্চাটা তো ছিল না। আমার প্রথম দিককার কিছু গানে ভুল আছে, সেগুলো দেখলে এখন লজ্জাই লাগে। স্যার দিকনির্দেশনা না দিলে এই ভুলের পরিমাণ হয়তো আরও বাড়তো।’

বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘রফিকউজ্জামান সম্পর্কে ভাবতে হলে আমাদের যেতে হবে যশোরে। কারণ, সেখানেই তার গড়ে ওঠা। সেখানকার লাইব্রেরি, নাটক, গান, কবিতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। এরপর ঢাকায় এসে উপস্থাপনা, গান লেখা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে যান। তিনি চারুশিল্পীও বটে। তিনি এত এত কাজ করেন, ফাঁকে আড্ডাও দিতেন প্রচুর। সব মিলিয়েই একজন অনন্য মানুষ হয়ে উঠেছেন।’

গীতিকবি সংঘের সহ-সভাপতি গোলাম মোর্শেদ তার প্রতিক্রিয়ায় ছোট্ট করে বলেন অসাধারণ কথাটি, ‘এখনও রফিক ভাইয়ের তুমুল তারুণ্য দেখে আমরা যারা সিক্সটি প্লাস তারা আশান্বিত হই।’

সংঘের সদস্য অধরা জাহান বলেন, ‘আমরা নবীনরা শুদ্ধ করে গান লেখার শিক্ষা ও চর্চা আপনার কাছ থেকেই পেয়েছি। আপনাকে জানাই শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা।’

কেক কাটার মুহূর্তে স্ত্রীসহ মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সঙ্গে (বাঁদিক থেকে) কবির বকুল, আসিফ ইকবাল ও জুলফিকার রাসেল এ পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন গীতিকবি সংঘের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল। তিনি বলেন, ‘আপনি (মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান) আমাদের জন্য একটা অনন্য বাতিঘর। আপনি আলো দেন, আমরা পথ চলি। অশুদ্ধতা থেকে শুদ্ধতার পথে হাঁটি। আমরা একটা ক্রান্তিকাল পার করছি। যেখানে অশুদ্ধতার চর্চা বেড়ে চলেছে। গানের কবিরাও তার বাইরে নয়। সেই সময়ে রফিক ভাই যে শুদ্ধতার চর্চা ও বার্তা দিয়ে চলেছেন, তা আমাদের পথের পাথেয়। এই শুদ্ধতার যুদ্ধ আপনি চালিয়ে যাবেন, সেই প্রত্যাশা করি।’

পুরোটা সময়জুড়েই প্রত্যেক অতিথি ও আয়োজক ছিলেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলাদা আলাদা যুক্ত। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে এসে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের প্রতিক্রিয়া শোনার অধীর অপেক্ষায় সবাই। বক্তব্য শুরু করার আগমুহূর্তেই ঘটলো নাটকীয় এক ঘটনা। অনুষ্ঠান সঞ্চালক জুলফিকার রাসেল মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানকে অনুরোধ করেন, তার রুম থেকে বেরিয়ে একটু ড্রয়িংরুমে যেতে!

যাওয়ার পর জন্ম হলো অন্য এক বিস্ময়ের। সেখানে কেক, ফুল আর উপহার নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন দেশের তিন জন নন্দিত গীতিকবি আসিফ ইকবাল, কবির বকুল ও জুলফিকার রাসেল। অন্তর্জালে যুক্ত অন্য অতিথিরা চমকে যান এমন আয়োজনে। এরপর কাটা হয় কেক, জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা আর তুলে দেওয়া হয় উপহার সামগ্রী।

শেষে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। চোখ মুছতে মুছতে ভেজাকণ্ঠে এই কিংবদন্তি বলেন, ‘তোমরা আমাকে এভাবে আবেগতাড়িত করবে ভাবিনি। সারা দিনেও ভাবিনি সন্ধ্যায় আমার জন্য এমন একটি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। সন্ধ্যার পর জানতে পারলাম। গীতিকবি সংঘের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমার অনুভূতি, এই করোনাকালে এই অসময়েও এতগুলো মানুষকে এক করা- এটা অসম্ভব সুন্দর একটি বিষয়। আসিফ, বকুল, রাসেল আমার বাসায় চলে আসা- এই যে আন্তরিকতা, সেটা আমাকে মুগ্ধ করেছে বটেই। আমার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। একা নই, বরং বড় বেশি একাত্ম অনুভব করছি আজ। সবার প্রতি ভালোবাসা রইলো।’

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
‘জংলি’ মিশনে সিয়ামের সঙ্গী বুবলী
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
শিল্পকলায় মঞ্চায়িত হলো আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ‘হি-রোজ’
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…