X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনের আশেপাশে সব ধরনের শিল্পায়ন বন্ধের দাবি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:৫২আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:৫২

সুন্দরবনের আশেপাশে সব ধরনের শিল্পায়ন বন্ধ করতে হবে। বনের চারপাশের মানুষের জন্য শিক্ষা ও বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া রামপাল,বরগুনার তালতলি ও পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ বন্ধ করে সৌর এবং বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি।

রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ‘সুন্দরবন দিবস’ উপলক্ষে  যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত  ‘সুন্দরবন রক্ষায় করণীয় ও দাবি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে সংগঠন দুইটি  এই সুপারিশ  করে।

অনুষ্ঠানে ইস্তেহার পাঠ করেন বাপা ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি সুলতানা কামাল।

বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ‘সুন্দরবন আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে  রয়েছে এক আন্তঃসম্পর্ক। এই পরিবেশ ও প্রকৃতির যারা ক্ষতি করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। ২১ বছর ধরেই আন্দোলন করছি। দক্ষিণ এশিয়ার ফুসফুস বলা হয় সুন্দরবনকে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ক্ষতি করছে এই ফুসফুসের। এই বন বাঁচাতে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের কোনও বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুও এই সুন্দরবনের কথা বলে গেছেন। তার কন্যাও সেই সুন্দরবন বাঁচাতে কাজ করবেন বলে আশা করি।’

অনুষ্ঠানের শেষে তিনি এই দুই সংগঠনের যৌথ দাবিগুলো পড়ে শোনান। দাবিগুলো হচ্ছে—সুন্দরবনের পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ, তাদের জীবিকা, সকল বন, গাছপালা, জীববৈচিত্র্য, নদ-নদী এবং জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে।

জাতিসংঘ নির্দেশিত টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বরের মধ্যে সকল নদনদী এবং জলাশয়কে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে সকল নদনদী এবং জলাশয়ে বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

সুন্দরবনের লবণাক্ততা কমাতে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় ন্যায্যতাভিক্তিক পানি বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।

অপরিকল্পিত স্লুইসগেট নির্মাণ, জোয়ার ভাটা নিয়ন্ত্রণের নামে খালকে ড্রেনে রূপান্তর করা যাবে না। শিল্পায়নের নামে নদী এবং খাল ভরাট করা যাবে না।

এছাড়া নদী প্রস্থের তুলনায় কম প্রস্থের সেতু নির্মাণ করে, নদীকে সংকুচিত এবং নাব্য কমানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবন অঞ্চলের সব নদী, খাল, দখল এবং ভরাট বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবন দখলের জন্য আগুন লাগিয়ে বন ধ্বংস বন্ধ করতে হবে। এছাড়া সুন্দরবনে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করতে হবে।

অপরদিকে নদী থেকে অবাধে বালি উত্তোলন, বড় আকারের ড্রেজিং নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। সংগঠন থেকে বলা হয়—  কারখানার বিষাক্ত পানি বনের পরিবেশ নষ্ট করছে। সুন্দরবনের আশেপাশে সব ধরনের শিল্পায়ন বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবনের চারপাশের মানুষের শিক্ষা এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। সুন্দরবনের পাশে রামপাল, বরগুনার তালতলি এবং পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ বন্ধ করে সৌর এবং বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে ইউনেস্কোর নির্দেশিত পরিবেশগত সমীক্ষা চালাতে হবে।

সমুদ্র উপকূলে পরিবেশ ধ্বংসকারী সকল শিল্প নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালন করতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাপা নির্বাহী সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘স্থানীয়দের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে বনের ওপর চাপ কমবে। ৯০ দশকের পর থেকে শিল্পায়ন শুরু হয়েছে। প্রায় ১৪০টি শিল্প কারখানা করা হয়েছে। বাফার জোনের ভেতরেও করা হচ্ছে।  এই বন থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। চারটি ইউনিট করার কথা ছিল। আন্দোলনের চাপে এখন একটি কেন্দ্র করা হচ্ছে। আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতেই হবে।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, বলেন, ‘অনেকেই বলেন সুন্দরবন ঠিক আছে, আসলে সুন্দরবন ঠিক নেই। ওপর থেকে ছবি তুললে দেখা যায়, বনের ভেতরে বহু জায়গায় গাছ প্রায় নেই। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া দরকার। অনেকেই মুখে মুখে অনেক কথাই বলেন, কিন্তু সুন্দরবনের দূষণ  বেড়েই চলেছে। পশুর নদীর মাছের পোনার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে।’

এছাড়া মধ্যে বাপা’র বন, জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জ্বালানি বিষয়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ, জেন্ডার ও পরিবেশ বিষয়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ, যুব বাপা/ যুব আন্দোলন বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রাওমান স্মিতাসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

/এসএনএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লিঙ্গবৈচিত্র্য ও পুরুষতন্ত্রের মেনে নেওয়া-না নেওয়া
লিঙ্গবৈচিত্র্য ও পুরুষতন্ত্রের মেনে নেওয়া-না নেওয়া
তীব্র গরমে কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে
তীব্র গরমে কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে
গাজা নিয়ে মার্কিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় গণগ্রেফতার
গাজা নিয়ে মার্কিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় গণগ্রেফতার
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মশলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মশলা
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি