X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিক্ষা সফরের’ গাড়ি আর চলবে কতদূর?

রবিউল ইসলাম
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:৫২আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:৫২

‘এই টেস্ট থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি, পরের টেস্টে কাজে লাগাবো’- কথাগুলো গত ২০ বছর ধরে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মুখে মুখে। গত দুই দশকে যে ‘শিক্ষা’ ক্রিকেটাররা নিতে পারেননি, সেটি আর কবে নেবেন? ‘শিখছি’ বলে মুমিনুল হকদের যে ‘শিক্ষা সফর’ চলছে, সেটিই বা কবে নাগাদ শেষ হবে? রবিবার বিরুদ্ধ কন্ডিশনে হোয়াইটওয়াশের আনন্দ-উৎসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো টেস্ট ক্রিকেটে কতটা পিছিয়ে বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম ও ঢাকাতে দুই রকম অভিজ্ঞতা হলো। চট্টগ্রামে বড় স্কোর গড়েও ক্যারিবীয়দের থামাতে না পারা বাংলাদেশ এবার ‘অনুকূলে’ থাকা লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারলো না। চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৯৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু সেই লক্ষ্যে ছুটে চলা সফরকারী ব্যাটসম্যানদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি বাংলাদেশি বোলাররা।

এদিকে ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসের ব্যর্থতায় শুরুতে বড় লিড পায় সফরকারীরা। তবে বোলারদের দাপুটে দ্বিতীয় ইনিংসে খুব বেশি দূর যেতে পারেনি ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটরা। ঢাকায় জিততে মুমিনুলদের করতে হতো ২৩১ রান। সেই লক্ষ্যে প্রথম ইনিংসের মতো আবারও ব্যর্থ মুশফিক-মুমিনুলরা। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের সাহসী ব্যাটিংয়ে স্বাগতিক সমর্থকদের মন জুড়ালেও ঠিকই ১৭ রানে হারতে হয়েছে মুমিনুলদের।

হোয়াইটওয়াশ হওয়া এই সিরেজে নিশ্চিতভাবে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। অভিজ্ঞতার দিক থেকে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন এক দশকের বেশি টেস্ট খেলা তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিম। মুমিনুল-মোহাম্মদ মিঠুন-লিটন দাসরাও কম অভিজ্ঞ নন। সেই তুলনায় কাইল মায়ার্স, এনক্রুমা বনার, জোশুয়া দা সিলভা, রাকিম কর্নওয়ালরা মাত্রই শুরু করেছেন পথচলা। অথচ অভিজ্ঞ বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে ছিল না অভিজ্ঞতার ছাপ!

এক মুমিনুল ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনও ব্যাটসম্যানের নেই ৪০ গড়! যদিও আন্তর্জাতিক আঙিনায় বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক পা রেখেছেন মুশফিক-তামিমের পর। চট্টগ্রামে উইকেট আঁকড়ে পড়েছিলেন মায়ার্স। উপমহাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস ওলটপালট করে ক্যারিবিয়ানদের জয় উপহার দিয়েছেন অভিষেক টেস্ট খেলা এই ব্যাটসম্যান। তার ইনিংস দেখেও শিক্ষা নিতে পারেননি তামিম-মুশফিকরা। ক্যারিবীয়দের কাছে হারের পর তাই প্রশ্নটা জমাট বাঁধছে, কবে শেষ হবে ক্রিকেটারদের এই ‘শিক্ষা সফর’?

টেস্ট ক্রিকেটে যেখানে ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য ও দৃঢ়তার পরীক্ষা দিতে হয়, সেখানে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান। চট্টগ্রাম টেস্টের পর ঢাকা টেস্টেও একের পর এক ব্যাটসম্যান নাম লিখিয়েছেন আত্মহুতির মিছিলে। তবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করছেন মিরাজ। এই সিরিজে ব্যাটসম্যান মিরাজকে খুব ভালোভাবেই আবিষ্কার করা গেছে। 

মিরাজ কিছু করে দেখালেও বাকি ব্যাটসম্যানরা হতাশার গল্প লিখেছেন। রবিবার তামিমের শুরুটা ভালো হলেও দায়িত্ব-জ্ঞানহীন শটে দলকে অথৈ সাগরে ফেলে ফিরে গেছেন। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয় মুশফিককে। ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসেই দলকে বিপদে ফেলেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চার ইনিংসে একটি সেঞ্চুরি পেলেও মুমিনুলকে কখনোই সহজাত খেলা খেলতে দেখা যায়নি।

শুধু কি ব্যাটসম্যানদের দায়? দায় নিতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকেও! উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোকে পরীক্ষায় ফেলতে স্পিন-নির্ভর উইকেট বানিয়ে থাকে বাংলাদেশ। আফিগানিস্তানের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও নিজেদের ফাঁদেই পা দিয়েছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। আফগানিস্তানের সঙ্গে একমাত্র টেস্টে টার্নিং উইকেট বানিয়ে মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও জহির খানের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। ওই অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে হেরেছিল ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে।

ঠিক একইভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টার্নিং উইকেট বানিয়েও বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম ও ঢাকাতে জোমেল ওয়ারিকান ও রাকিম কর্নওয়ালের ঘূর্ণি জাদুর সামনে হিমশিম খেয়েছে মুমিনুলরা। দুই টেস্টে কর্নওয়াল নিয়েছেন সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট। অন্যদিকে ওয়ারিকানের উইকেট সংখ্যা ১০। সেই তুলনায় বাংলাদেশি স্পিনারদের দাপট দেখা যায়নি। মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানের বিপক্ষে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকাকে এমন উইকেটের ‘ফাঁদে’ ফেলে সাফল্য পেলেও আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিছুই পায়নি। তাই আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৫ ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্টে ঘর ফাঁকা!

২০০০ সালে ভারতের সঙ্গে টেস্ট দিয়ে এই আঙিনায় পথচলা শুরু বাংলাদেশের। গত দুই দশকে টেস্ট খেলেছে ২২১টি। যার মধ্যে ১৪ জয় ও ১৬ ড্রয়ের বেশিরভাগই দেশের মাটিতে। বিপরীতে হেরেছে ৯১ টেস্টে। অর্থাৎ, ৮০ শতাংশ ম্যাচেই হেরেছে। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, টেস্ট জেতার মতো দল এখনও হয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ।

লাল বলের ক্রিকেটে ভালো করতে না পারার অন্যতম কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্বল অবকাঠামো। ক্রিকেট বিশ্বের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদের প্রস্তুত করে জাতীয় দলে সুযোগ পান। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটে উল্টোটা! এখানে খেলতে এসেই ক্রিকেটাররা অভিজ্ঞ হন। যদিও তাদের অভিজ্ঞতার ফসল ম্যাচে খুব একটা দেখা যায় না। যার নির্মম বাস্তবতা নাজমুল হোসেন শান্ত। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেই জাতীয় দলের ছায়ায় ঢুকে যাওয়া শান্তর ব্যর্থতার গল্প দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডে অভিষেক হওয়া শান্তর ১২ ইনিংসে ফিফটি একটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ চার ইনিংসে তার সর্বোচ্চ রান ২৫।

অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়িয়ে, প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে শান্তর মতো ক্রিকেটারদের তৈরি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঠাতে পারতো বিসিবি। হয়তো এমন করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে এর ফলও ভোগ করতে পারতো বাংলাদেশ দল। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য, ক্রিকেট প্রশাসনে যারা আছেন, তাদের সব ভাবনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ঘিরেই। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ভাবার সময় খুব বেশি নেই তাদের।

ক্রিকেট অভিভাবকদের সঠিক উদ্যোগের অভাবে টেস্ট ক্রিকেটে এখনও ‘শিশু’ বিশেষণ বসে যায় বাংলাদেশের নামের পাশে। সমান্তরালে চলতেই থাকে ‘শিক্ষা সফরের’ গাড়ি!

/কেআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতে আজ তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে
ভারতে আজ তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলছে
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস