X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাইলে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করতে পারতাম: তথ্যমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৯:৪৭আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:০১

সরকার চাইলে বাংলাদেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করতে পারতো বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলেই এ দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি। মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আল জাজিরায় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে যে রিপোর্ট হয়েছে তাতে শিরোনামের সঙ্গে তথ্যের মিল নেই। এ রিপোর্ট আল জাজিরাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, বাংলাদেশে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচণ্ডভাবে লোপ পেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিশ্বব্যাপী তাদের বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলেই এ দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি।’

মন্ত্রী বলেন, “আল জাজিরার জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে যে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ রিপোর্টটি দেওয়ার পর তারা বাংলাদেশে প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা প্রচণ্ডভাবে লোপ পেয়েছে। রিপোর্টের শিরোনাম দিয়েছে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’, আর ভেতরের প্রতিবেদনটি হচ্ছে সেনাপ্রধান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। আর প্রতিবেদনটা দেখেশুনে মনে হয়েছে এটি ব্যক্তিগত আক্রোশবশত, এনিমোসিটি-বশত। আল জাজিরার মতো একটা টেলিভিশনে এই ব্যক্তিগত আক্রোশবশত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আল জাজিরার গ্রহণযোগ্যতা বহুগুণে কমেছে এবং বিশ্বব্যাপী আল জাজিরার নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা এবং তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্টিং—এগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”

তিনি বলেন, ‘অবশ্য আল জাজিরা নিয়ে এই প্রশ্ন আজই যে প্রথমবার উঠেছে তা নয়। এ প্রশ্ন বহুবার বহু দেশে উঠেছে। আল জাজিরার সম্প্রচার এখনও অনেক দেশে বন্ধ আছে। এমনকি ভারতেও বন্ধ করা হয়েছিল।’

দেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি—এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবস্থা নিতে পারতাম। অন্য দেশে যেভাবে বন্ধ করা হয় আমাদের দেশে চাইলেই সেভাবে বন্ধ করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। কারণ, আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু অবাধ স্বাধীনতার পাশাপাশি সমস্ত গণমাধ্যমেরও নিজস্ব দায়িত্ব থাকে। আল জাজিরা এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বশীলতা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একটি পক্ষ হয়ে কাজ করেছে এবং আমরা যতটুকু শুনেছি সম্ভবত এটির সঙ্গে আরও বহুপক্ষ যুক্ত আছে। সেনাপ্রধানকে টার্গেট করে সরকারের সমালোচনা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ রিপোর্টের সঙ্গে সরকারের বা প্রধানমন্ত্রীর কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু কোনও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি আদালতে যান, সেক্ষেত্রে আদালত থেকে যদি কোনও নির্দেশনা পাই, তাহলে আদালতের নির্দেশনা অবশ্যই পালন করবো।’

প্রতিবেদন সহযোগীদের মধ্যে ডেভিড বার্গম্যান সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বার্গম্যানের বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। পরে তিনি হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন এবং দেশত্যাগ করে চলে গেছেন। আল জাজিরার রিপোর্টে একসময় বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ‘ইসলামিক ক্লার্জি’ বা ‘ইসলামী বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ডেভিড বার্গম্যান তাদের পক্ষ নিয়েছিল। আর সেখানে যে মূল বক্তা মিস্টার সামি, তার আরও অনেক নাম আছে। তার ফিরিস্তি আগে আমি জানতাম না, রিপোর্ট হওয়ার পরে সব ফিরিস্তি বেরিয়েছে, কখন তার পিতা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন, কখন তিনি চুরিতে ধরা পড়েছেন। এ ধরনের লোককে নিয়ে যখন রিপোর্ট তৈরি করা হয়, তখন গণমাধ্যমেরই ক্ষতি হয়।’

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ‘আল জাজিরা রিপোর্টের পর দিল্লির সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বেড়েছে’—এ মন্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রিজভী সাহেব মাঝে মধ্যে কিছু উদ্ভট কথাবার্তা বলেন, এটিও তার চিরাচরিত বিভিন্ন উদ্ভট কথার একটি। আমাদের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বহু দিনের এবং ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। ভারতের সঙ্গে আমাদের সব সময় সুসম্পর্ক এবং বর্তমান ভারত সরকারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রী এ সময় তার সদ্যসমাপ্ত ভারত সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, কলকাতায় তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধনের সময় সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘আ ডটার্স টেল’ দেখে মানুষ অশ্রু বিসর্জন করেছেন। এছাড়া কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রায় ১৫ লাখ বাঙালির সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ স্মরণে একই স্থানে সমাবেশে যোগদান ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ভারতীয়দের সম্মাননা প্রদান, কিংবদন্তি সংগীত প্রতিভা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মুম্বাইয়ের ফিল্মসিটিতে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের শুটিং পরিদর্শন কার্যক্রম সংক্ষেপে তুলে ধরেন মন্ত্রী।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চিরন্তন গান ‘বঙ্গবন্ধু, ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি/ আজ ঘরে ঘরে এত খুশি তাই/ কী ভালো তোমাকে বাসি আমরা/ বলো কী করে বোঝাই’ বাজিয়ে শোনান।

 

/এমএইচবি/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা