X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববাসী দেখুক জনগণের অধিকার এখানে সুপ্রতিষ্ঠিত: বঙ্গবন্ধু

উদিসা ইসলাম
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:০০আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:০০

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে তিনটি জনসভায় ভাষণ দেন। এসব জনসভায় তিনি সোনার বাংলা গড়ার জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, তিনি তাঁর জীবদ্দশাতেই সোনার বাংলা দেখে যেতে চান। জনসভায় প্রধান অতিথি যেসব বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সেগুলো হলো—সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আসন্ন নির্বাচন, আটক বাঙালি, যুদ্ধাপরাধের বিচারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, জনগণের দুঃখ-কষ্ট মোচনের জন্য সরকারি পদক্ষেপ এবং জাতীয় পুনর্গঠন।

হবিগঞ্জের জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য এ দেশের মানুষ বিগত ২৫ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনামলে সংগ্রাম করে এসেছেন, দেশের সংবিধানে জনগণের এই অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে।’ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ইচ্ছে করলে তিনি আরও দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতি তিনি কখনও করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি যা চাই, তা হলো—বিশ্ববাসী দেখুক যে জনগণের অধিকার এখানে সুপ্রতিষ্ঠিত।’

দৈনিক বাংলা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ দেশের শান্তি বিঘ্নকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি

হবিগঞ্জ থেকে বাসসের খবরে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দেশের শান্তির জন্য নির্বাচনে কাউকে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। আনসার গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত এই জনসমাবেশে বক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাউকে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।’

বাসস জানায়, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে অনুষ্ঠিত জনসভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, কাউকেই সাম্প্রদায়িক শান্তি বিঘ্নিত করতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের মাটি থেকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ নির্মূল করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, মুসলমান-হিন্দু-খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সব নাগরিক সমান এবং তাদের সমান অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকায় জনগণ ভোট দেবেন কিনা, বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করলে জনসভায় সমবেত মানুষ সম্মতিসূচক জবাব দেয়। আসন্ন নির্বাচনের মুখে দেশে কায়েমি স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক শান্তি বিঘ্নিত করার প্রচেষ্টা রুখে দিতে জনগণকে আহ্বান জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে আটক ৪ লাখ নিরীহ বাঙালিকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান এবং যে আড়াই লাখ অবাঙালি পাকিস্তানে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তাদের পাকিস্তানে যেতে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, সেই পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু তার সরকারের দৃঢ় ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বিরাট ত্যাগ স্বীকারের পর দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এখন আমাদের সবারই দেশের পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করা দরকার।’

দৈনিক বাংলা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সিলেটের জনসভায় বঙ্গবন্ধু

এদিন বিকালে সিলেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেন, ‘জনগণ তাঁর সরকারকে চারটি রাষ্ট্রীয় নীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে সমর্থন করে।’ তাই সাধারণ নির্বাচনের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এযাবৎকালের বৃহত্তম জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, এই নীতির ভিত্তিতে তাঁর সরকার কর্তৃক গৃহীত সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সাধারণ নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে হবে।

ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা

সুনামগঞ্জ থেকে বাসস জানায়, এদিন এক বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার কোনও অপচেষ্টা সরকার বরদাশত করবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত বিপ্লবের পর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতিকে সংবিধান দেওয়া হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ মুক্ত দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবে।’ প্রধানমন্ত্রী দেশের খাদ্য পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, ‘বিদেশ থেকে কোটি কোটি মণ খাদ্য আমদানি করা হয়েছে। এরমধ্যে চার ভাগের এক ভাগই দিয়েছে আমাদের চরম সংকটের দিনে বন্ধু দেশ ভারত।’ তিনি বলেন, ‘কিছু লোকের আজকাল স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে যে ভারতের সমালোচনা করা। কিন্তু তারা ভুলে গেছে যে আমাদের চরম সংকটের দিনগুলোতে ভারতই আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। পাশে দাঁড়িয়েছিল আমাদের মরণপণ সংগ্রামে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের জনগণ এজন্য ভারতের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞ।’

বাংলাদেশ অবজারভার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ মিথ্যা আশ্বাস দিতে পারেন না

চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি চাকুরে হতে যাচ্ছেন এবং তারা আইনত প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণকে তিনি মিথ্যা আশ্বাস দিতে পারেন না এবং দেবেন না। সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে তিনি তা করেননি। তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভালোবাসে বলেই আমার পক্ষে ভোট দেবেন। এটা আমার দোষ নয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি সারা বিশ্বের জনগণের কাছে ঋণী, কিন্তু সিলেটবাসীর কাছে আরও বেশি। সিলেটবাসী তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে তাঁর মুক্তির ব্যাপারে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে বসবাসকারী সিলেটের লোকজন মামলা পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
রাহমানের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’, ভিডিও করলেন মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা