X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কসোভোর ১৩তম স্বাধীনতা দিবসে এক চিমটি আশাবাদ

গুনের ঊরেয়া
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:১৩আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৭:১৩

গুনের ঊরেয়া প্রতিটি দেশের নিজস্ব ইতিহাস, অগ্রাধিকার এবং এমনকি নিজস্ব নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও সব পরিস্থিতিতে আমাদের একটু হলেও আশাবাদী থাকা উচিত। আমাদের দেশে, কসোভোতে, এই ইতিবাচক মনোভাবটি রয়েছে এবং আমি আশা করি যে সমস্ত দেশ ও সমাজ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তারাও আশাবাদী হোক।

আমাদের স্বাধীনতার এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আমরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সচেষ্ট এমন কয়েকটি চেনাশোনা গোষ্ঠীর অনর্থক চেষ্টার কারণে প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। স্বাধীনতার ১৩তম বার্ষিকীতেও আমাদের এই জাতীয় বিষয় নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে যে, যারা আমাদের দেশ এবং জনগণকে বাধা দিতে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করে, তাদের প্রতি আমাদের হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। একটি আন্তর্জাতিক আইনি বিষয় হিসেবে, আমরা কোনও পক্ষকে ক্ষিপ্ত না করে, আমরা নিজেদের শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সংলাপের চ্যানেলগুলো উন্মুক্ত রেখে আমাদের পন্থায় অটল থাকবো। যারা শান্তিতে এবং তাদের জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয় তাদের সঙ্গে আমরা নিবিড়ভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো।

কসোভো প্রজাতন্ত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় সমর্থন নিয়ে তার স্বাধীনতা ঘোষণা করার সময়, সামাজিক শান্তি, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং টেকসই উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হয়েছিল। কিছু দুর্বলতা, অসুবিধা এবং অসন্তুষ্টি থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ের তুলনায় আমরা যে অগ্রগতি করেছি, আমরা কসোভাররা তার জন্য অনেক গর্বিত।

কসোভোর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি তরুণ জনসংখ্যা আমাদের দেশে। কসোভোর জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশেরও বেশি ৩০ বছরেরও কম বয়সী এবং প্রায় ৫০ শতাংশ ২৫ বছরের কম বয়সী। তরুণ জনগোষ্ঠী কোনও দেশের মানবসম্পদের প্রাথমিক সূচক। ১৯৯৯ সালে যুদ্ধ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশের তুলনামূলক উচ্চতর মানব উন্নয়ন সূচি থাকাও খুব মূল্যবান। তদুপরি, তুলনামূলক কম ‘গিনি কো-ইফিশিয়েন্ট’ কসোভোয় সামাজিক সাম্যতা সম্পর্কে আমাদের আশাবাদী করে তোলে। মহামারি থেকে আমরা যদি দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে পারি এবং যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বার্ষিক গড় প্রায় ৪ শতাংশ থেকে কমপক্ষে ৬ শতাংশ অর্জন করি, তবে কসোভো একটি উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও বহুলাংশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কসোভো এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রধান কেন্দ্রগুলোর মধ্যে নতুন মহাসড়ক রয়েছে, তবে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বিকাশের জন্য নতুন প্রকল্প রয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, দু’দশক আগে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।

নব্বইয়ের দশকে প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার অপ্রত্যাশিত ভাঙনের ফলে পুরো অঞ্চলই অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অতীতের ক্ষত নিরাময়ে, কসোভো আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং ভালো প্রতিবেশী সম্পর্কের জন্য সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে, যা শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কসোভো ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি তার কর্তব্য পালনে আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা পশ্চিম বলকান রাজ্যের মধ্যে পুনর্মিলন এবং সহযোগিতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো।

কসোভো জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আগ্রহী। এখানে উল্লেখযোগ্য, দেশ হিসেবে কসোভো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সংস্থার সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার লক্ষ্য রাখে।

এই বছরগুলোতে, রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কৃতিত্বের পাশাপাশি কসোভোর ব্যক্তিরাও আত্মবিশ্বাস নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। আমাদের ক্রীড়াবিদরা রিও অলিম্পিক গেমস ২০১৬, আন্তর্জাতিক এবং ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছে। আমাদের কয়েকজন গায়ক বিশ্বব্যাপী খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। আমাদের চলচ্চিত্র নির্মাতারা, অভিনেত্রী এবং অভিনেতারা বিভিন্ন সুপরিচিত প্রযোজনার অংশ। আমাদের বিজ্ঞানী, লেখক, ফ্যাশন ডিজাইনার এবং অন্য পেশাদাররা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় সাফল্য অর্জন শুরু করেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, স্বাধীনতার আগে এটি এরকম ছিল না। বহির্বিশ্বে কাজ করার মাধ্যমে বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমে কেবল কয়েকজন কসোভরই তাদের প্রতিভা প্রকাশ করে সফল হয়েছিল। একটি নতুন দেশ হিসেবে আমরা সকলের জন্য এবং তাদের প্রত্যেককে নিয়ে গর্বিত।

কসোভো প্রজাতন্ত্র তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক সম্পর্ক স্থাপন করতে বদ্ধপরিকর। বৈশ্বিক উষ্ণতা, বৈশ্বিক সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ এবং অন্যান্য হুমকির মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, অন্যদিকে দেশগুলোর মধ্যে বিরোধগুলো সমাধান করার জন্য, আমাদের অবশ্যই একে অপরের সঙ্গে আরও সহযোগী মনোভাব পোষণ করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট ‘চক্রের’ কসোভোর সার্বভৌম অস্তিত্বের বিকাশ রোধে সৃষ্ট নীতিগুলো সর্বদা ব্যর্থ হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার কোনও সমাধান আনেনি। আমরা আমাদের উত্তরের প্রতিবেশী সার্বিয়ার কাছ থেকে পারস্পরিক স্বীকৃতির বিষয়ে একটি কঠিন এবং তুলনামূলক কম জনপ্রিয় কিন্তু সঠিক এবং সাহসী সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করছি, যা আমাদের অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে এবং মানবতার জন্য এটি খুব ভালো উদাহরণ হবে।

প্রত্যাশা হচ্ছে যে মানবতা প্রতিদিন যেসব হুমকির মুখোমুখি হয় তার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিটি দেশ সমানভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

এক চিমটি আশাবাদ এবং উৎসর্গ দিয়ে আমাদের আগামীকাল আজকের চেয়ে অবশ্যই সুন্দর হবে।

লেখক: বাংলাদেশে নিযুক্ত কসোভোর রাষ্ট্রদূত

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বক্তারাবাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ