X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড.শামসুজ্জোহা দিবস: ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় ছাত্র-শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি

রাবি প্রতিনিধি
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:২৪আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:২৪

ড. সৈয়দ শামসুজ্জোহার তার ছাত্রদের বাচাঁতে গিয়ে নিজে আত্মাহুতি দিয়েছেন। বিভিন্ন সময় এ দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি উঠেছিল। কিন্তু জাতীয় শিক্ষক দিবস বলতে কেবল শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হয়। অথচ সেদিন (১৮ ফেব্রুয়ারি) ড. শামসুজ্জোহা পাক-বাহিনীর গুলিতে আহত শুনে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তার ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়ে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র নূরুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। ড. জোহার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ছাত্রদের রক্ষার জন্য যেমন ড. জোহা মৃত্যুবরণ করেন, তেমনই তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে গিয়ে একজন ছাত্রও প্রাণ দেন। তাই এই দিনটিকে কেবল শিক্ষক দিবস না করে ছাত্র-শিক্ষক বা শিক্ষক-ছাত্র দিবস করতে হবে।

দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহার ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকীকে (১৮ ফেব্রুয়ারি) সামনে রেখে ‘ড. জোহা: ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় স্যার জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের লেকচার থিয়েটারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস) এই সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও তৎকালীন ছাত্রনেতা রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবার থেকে বিচ্ছিন্ন। অথচ জোহা সর্বোচ্চ মানবিক আচার-আচরণ দিয়ে ছাত্রদের মন জয় করেছিলেন। সবাই জোহাকে চিনতেন, তিনি জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন। শিক্ষকরা তার এই আত্মহুতির দিনটিকে বলেন ‘শিক্ষক দিবস’। আমরা কিন্তু এটাকে ‘ছাত্র-শিক্ষক দিবস’ হিসেবেই জানি। সেটা কেন? ড. শামসুজ্জোহা গুলিতে আহত শুনে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র নূরুল ইসলাম নগরের সোনাদীঘির কাছে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তার ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার মাথার ঠিক মাঝখানে গুলি করলে তিনি ড. জোহার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।

রুহুল আমিন প্রামাণিক বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীর শিক্ষক-ছাত্র দিবস করতে হবে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় দাবি জানিয়েছি, এটা ছাত্র-শিক্ষক বা শিক্ষক-ছাত্র দিবস করতে হবে।

রাবিসাসের সাবেক সভাপতি ও তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহমদ সফিউদ্দীন বলেন, সেদিন ড. জোহা শহীদ না হলে, সারা দেশে গণঅভ্যুত্থান না হলে পাকিস্তানিরা হয়ত বঙ্গবন্ধুকে হত্যাই করতো। তাহলে আর আজকের বাংলাদেশ হতো না। ড. জোহা শহীদ হয়েছিলেন। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্র নূরুল ইসলাম ও আব্দুস সাত্তার শহীদ হয়েছিলেন। আজ আমরা তাদের অনেককেই ভুলে গিয়েছি।

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারিকে আমরা কিন্তু কেবল শিক্ষক দিবস নয়, ছাত্র-শিক্ষক দিবস হিসেবে দাবি করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, একজন ছাত্র মারা যাচ্ছে তার জন্য শিক্ষক এগিয়ে আসছেন। আবার একজন শিক্ষক মারা যাচ্ছেন তার জন্য ছাত্র প্রাণ দিচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষকের সম্প্রীতির এই বিষয়গুলো বর্তমানে আমরা তেমন একটা জানার চেষ্টা করি না। এই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, ড. জোহার মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী পরেও কেন আমাদের দাবি (জাতীয় শিক্ষক দিবস) পূরণ হয়নি। তবে এটি কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি প্রজন্ম বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের ঘটনা নয়। এটি সারাদেশের ছাত্র-শিক্ষক সম্প্রীতির একটি নিদর্শন।

প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, একজন মানুষের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান তার নিজের জীবন। ড. জোহা ছাত্রদের রক্ষার্থে নিজের জীবন দিয়ে অতুলনীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের ব্যুরোপ্রধান রফিকুল ইসলাম বলেন, ড. জোহা কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারা দেশকে রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নিজের জীবন দিয়েছিলেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান খান ও সদস্য সুলতানা পারুল’র যৌথ সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন আব্দুল কাইয়ুম, সংগঠনের সাবেক সভাপতি মুস্তাফিজ রনি, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক রনজু হাসান এবং হ্যালো রাজশাহী ম্যাংগোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল অন্তিকাম বন্ধন বক্তব্য দেন। রাবিসাসের সভাপতি শাহীন আলম আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।

প্রসঙ্গত, সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাওয়ার চেষ্টা করে। কাজলা গেটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সে মিছিলে গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় ড. সৈয়দ শামসুজ্জোহা নিজের পরিচয় দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা তার দাবি মানতে অস্বীকার করলে তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন ড.জোহা। এক পর্যায়ে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা তাকে গুলি করে। পরে তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় । এরপর থেকে প্রতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারিকে রাবি প্রশাসন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে। এবং এই দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি করে আসছে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুজিবনগর দিবস পালনের নির্দেশ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই ধাপে কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালনের নির্দেশ
টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি নিলে ব্যবস্থা
সর্বশেষ খবর
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো বাঘ, নিয়ে গেলো গহীন বনে
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি