X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
ফিলিস্তিনি গল্প

কারামা ফাদেলের ‘অপেক্ষার যন্ত্রণা’

অনুবাদ : ফজল হাসান
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

[সীমান্তের কড়াকড়ি নিয়ম-কানুনের জন্য গাজা ভূখণ্ডের বাসিন্দারা সীমানা অতিক্রম করে অবাধ যাতায়াত করতে পারে না। তাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে হলে ফিলিস্তিন এবং ইজরায়েলি সামরিক কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হয়। উল্লেখ্য, ছয়টি সড়ক পথের সীমান্ত ইজরায়েলিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যেখানে মাত্র একটি (এরেজ) বেশিরভাগ দিনই খোলা থাকে, কিন্তু খুব সীমিত ক্ষেত্রে প্রস্থানের অনুমতি দেওয়া হয়, বিশেষ করে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা এবং সরকার প্রদত্ত বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা, যারা তাদের জন্য হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক। তাই বলা যায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ভ্রমণ করা ভীষণ কঠিন, ধীর প্রক্রিয়া এবং অপমানজনকও। যদিও ফিলিস্তিনিদের ভ্রমণ করার একাধিক কারণ রয়েছে, কিন্তু সবকিছুর চূড়ান্ত লক্ষ্য এক এবং অভিন্ন, অর্থাৎ অপেক্ষার যন্ত্রণা। বলাবাহূল্য, ‘অপেক্ষার যন্ত্রণা’ নিয়ে অসংখ্য গল্প আছে। তার মধ্যে কারামা ফাদেলের দুটি গল্প অনুবাদ করা হলো—অনুবাদক]

 

সব সময় ভালোবাসা পায় না খুঁজে পথ

নূরের বয়স পঁচিশ বছর এবং সে কখনই ভাবেনি যে, তাকে একদিন গাজার বাইরে ভ্রমণ করতে হবে। সে জানতো গাজা ভূখণ্ড থেকে বাইরে কোথাও যাওয়া হলো সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জ।

‘ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া একজন মিশরীয় পুরুষের সঙ্গে আমি যখন প্রেমে পড়ি, তখন থেকেই আমরা জানতাম আমাদের বিয়েটা হবে খুবই কঠিন, কিন্তু আমাদের প্রেম ছিল যে কোনো কিছুর চেয়ে শক্তিশালী,’ বললো নূর।

প্রথম বাঁধা আইন, যা মিশর এবং গাজা উভয় জায়গায়ই প্রযোজ্য। নূরের গাজা ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে না, যদি না সে ইতোমধ্যে বিবাহিত হয় এবং সে তার স্বামীর কাছে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছে। তার অর্থ হলো গাজায় বিয়ে অবশ্যই আইন মাফিক হতে হবে। যাহোক, গাজার আইন অনুযায়ী বিয়ের সময় কনের সঙ্গে তার বাবা অথবা একজন ভাই উপস্থিত থাকতে হয়। নূরের বাবা অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছেন এবং তার ভাইয়েরা গাজা ভূখণ্ডের সীমানার বাইরে বসবাস করে। তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে একটি ‘হলফনামা’ পেতে দুই সপ্তাহ লেগেছিল, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে বোনকে সে একজন মিশরীয় পুরুষকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে।

অবশেষে দু’মাস পর নূর এবং তার মিশরীয় প্রেমিক সরকারিভাবে বিয়ে করে। তবে নূর এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখিন হয় : স্বামী ছাড়া সে কী পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করবে, নাকি মা ছাড়া তার বিয়ের অনুষ্ঠান মিশরে স্বামীর সঙ্গে উদযাপন করবে? এটা তার জন্য খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। কনের মা ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান কেমন করে হতে পারে? কিন্তু যেহেতু তার বেশির ভাগ আত্মীয়-স্বজন গাজা ভূখণ্ডের সীমানার বাইরে থাকে, তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বিয়ের অনুষ্ঠান মিশরে নতুন পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করবে।

মিশরে প্রবেশ করা হবে তার পরবর্তী চ্যালেঞ্জ।

‘মার্চে আমি গাজা কর্তৃপক্ষের কাছে আমার নাম তালিকাভুক্ত করেছিলাম, কারণ মিশরের যাওয়ার জন্য রাফাহ সীমান্ত যখনই খুলবে, তখনই আমি যেন সীমান্ত অতিক্রম করে আমার স্বামীর কাছে যেতে পারি,’ বলেছে নূর। ‘কিন্তু দুঃখজনক, তারপর থেকে সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়নি। প্রতিদিন আমি সংবাদ পড়ি এবং প্রত্যেকবার শুনি যে, সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে। আসলে মিথ্যা খবর। অবশেষে ঘোষণা করা হয় যে, ১৯ জুন সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে। খবর শোনার পর আমার খুবই খুশি লাগছিল। নতুন পরিবারের লোকজনদের জন্য গাজায় আমি যেসব উপহার কিনেছিলাম, সেগুলো-সহ ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হই। পরদিন মিশরীয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে, সিনাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার জন্য সীমান্ত খোলা হবে না।’

আজও নূর অপেক্ষায় আছে। তার ব্যাগ গোছানো। সেদিন আমি যখন তাকে দেখতে গিয়েছিলাম, সে শুধু কাঁদতেই পেরেছে।

 

দ্বিখণ্ডিত পরিবার

সাজেদা ২০১০-এর পর থেকে তার সন্তানদের দেখেনি। তার দুই ছেলে সুইজারল্যান্ড এবং সুইডেনে বসবাস করে। তারা মায়ের ভিসার জন্য চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা প্রত্যাখিত হয়েছে। এক মেয়ে থাকে নরওয়ে। তারা কেউ গাজায় ফিরে আসতে পারে না, কেননা সীমান্তের অনিশ্চয়তা—তাদের প্রবেশ করতে বা বেরিয়ে যেতে দেওয়া হবে কিনা—তা নিয়ে তারা সন্দিহান।

‘বিগত সাত বছরে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে, যা আমাদের পরিবারে মাইলফলক হয়ে আছে। আমি সেই সব অনুষ্ঠানের একটাতেও অংশগ্রহণ করতে পারিনি,’ সাজেদা বললো। ‘সবচেয়ে বেশি যে ঘটনা আমাকে আহত করেছে, তা হলো আমি আমার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি, অথবা তার অস্ত্রোপচারের সময়ও পাশে থাকতে পারিনি। উপরন্তু, আমার একটা নাতি আছে। তার বয়স এখন তিন বছর। আমি তাকে স্পর্শ করিনি, এমনকি দেখিওনি।’

ইউরোপের ভিসা নিয়ে সন্তানদের এবং নাতিকে দেখার পরিবর্তে মিশরে তাদের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব। কিন্তু সে অযথা অপেক্ষা করছে কখন রাফাহ্ সীমান্ত খুলে দেবে এবং তার নাম তালিকায় সংযুক্ত হবে। তার পক্ষে ঘুষ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে তা সম্ভব হলেও সে অনিশ্চিত যে, সীমান্ত আদৌ খুলবে কিনা। কারণ তাকে গাজায় পরিচালিত কিন্ডারগার্টেনে ফিরে আসতে হবে।

‘আমরা কী পরিবার হিসেবে সবাই আবার একত্র হতে পারবো,’ সাজেদা ভাবে।

 

লেখক পরিচিতি : ফিলিস্তিনি নারী লেখক কারামা ফাদেলের জন্ম ১৯৯০ সালে। তিনি গাজার আল-আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। তিনি বিদেশিদের আরবি ভাষা শেখান। এছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের একজন অবৈতনিক কর্মী। কারামা ফাদেল মূলত ছোটগল্প লেখিক। ‘We Are Not Numbers’ ওয়েবসাইট ছাড়াও তার গল্প ‘কফি আনান ফাউন্ডেশন’-এ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি গাজা শহরে বসবাস করেন।

গল্পসূত্র : ‘অপেক্ষার যন্ত্রণা’ কারামা ফাদেলের ইংরেজিতে ‘দ্য পেইন অব ওয়েটিং’ গল্পের অনুবাদ। গল্পটি ‘We Are Not Numbers’ ওয়েবসাইটে (https://wearenotnumbers.org) ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট প্রকাশিত হয় এবং সেখান থেকে নেয়া হয়েছে।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫