কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে টুইটারে ‘টুলকিট’ শেয়ার করার পর গ্রেফতার হওয়া ভারতীয় পরিবেশকর্মী দিশা রবির জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সেদেশের আদালত। পাশাপাশি আদালত শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিল্লি পুলিশের অভিযোগ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে। দিল্লি পুলিশকে আদালতের প্রশ্ন, ‘এই টুলকিট শেয়ার করার মাধ্যমে কিভাবে দেশদ্রোহিতার মতো গুরুতর অপরাধ করলেন দিশা? এর স্পষ্ট কোনও যুক্তি আছে, নাকি পুরোটাই সন্দেহের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে?’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কৃষক আন্দোলনকে সমর্থনের ডাক দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি টুলকিট শেয়ার করেছিলেন দিশা। তাতেই দেশদ্রোহিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল। ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পরিবেশকর্মী দিশার বিরুদ্ধে ওই টুলকিটটি তৈরির অভিযোগও এনেছিল দিল্লি পুলিশের তদন্তকারীরা। যদিও দিশা জানিয়েছিলেন, তিনি টুলকিটটি বানাননি।
দিশা শনিবার স্পষ্টই আদালতে জানিয়েছেন, ‘‘আমি কর্নাটকের বাসিন্দা ২১ বছরের দিশা রবি। আমার সঙ্গে কোনও ভারত বিরোধী শক্তির যোগাযোগ নেই। পুলিশ একটিও চ্যাট দেখাতে পারবে না, যেখানে আমি সরাসরি খলিস্তানপন্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি।’’
শনিবার দিশার আইনজীবী জামিনের আবেদন করে বলেন, এই টুলকিট একটি সামান্য তথ্যপত্র মাত্র, এর দ্বারা কিছু প্রমাণিত হয় না। পাল্টা দিল্লি পুলিশ তখন অভিযোগ করে, টুলকিটে দেওয়া ছিল একটি বিশেষ ওয়েবসাইটের লিংক, যেটির মাধ্যমে খালিস্তানপন্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হত। সেই কারণেই এটিকে দেশদ্রোহিতার অংশ বলা হচ্ছে।
দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়, তদন্তে সাহায্য করছেন না দিশা রবি। দিশার থেকে প্রাপ্ত কম্পিউটার হার্ডডিস্ক পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, সেখান থেকে বেশ কিছু জিনিস ডিলিট করা হয়েছে। একে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
এ সব শুনেই বিচারপতি ধর্মেন্দ্র রাও প্রশ্ন করেন, কী করে দুই অপরিচিত ব্যক্তির মধ্যে দেশদ্রোহিতার ষড়যন্ত্র চালানোর মতো যোগসূত্র তৈরি হতে পারে? পুলিশ পাল্টা বলে, খালিস্তানপন্থী নেতা এমও ধালিওয়ালকে সবাই চেনে। বিচারপতি বলেন, "না, আমরা চিনি না।" পাশাপাশি আদালত প্রশ্ন তোলে, ২৬ জানুয়ারিতে ঘটা দিল্লির সহিংসতার সঙ্গে দিশা রবির পোস্ট করা টুলকিটটির সংশ্লিষ্টতা কোথায়? পুলিশ বলে, এই ধরনের ঘটনায় সকলের একই ভূমিকা থাকে না। হতে পারে, টুলকিটটির জন্য কেউ না কেউ হামলায় ইন্ধন পেয়েছে।
তখনই আদালত জানতে চায়, এভাবে সম্ভাবনার ভিত্তিতে কোনও কিছু বলা যায় না। পুলিশের কাছে এই বিষযে স্পষ্ট কোনও প্রমাণ আছে, নাকি সবটাই সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে বলা হচ্ছে? পাশাপাশি শনিবার আদালত ‘টুলকিট’ বিষয়টি ঠিক কী, সেই বিষয়েও বিস্তারিত জানতে চায়। সরকারি আইনজীবী জানান, এই প্রচার পুস্তিকার মতো তৈরি টুলকিটটির মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে। কৃষক আন্দোলনের উছিলায় ভারত বিদ্বেষী মতামত তৈরির করার জন্যই এটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত দিশার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। সে পর্যন্ত দিশাকে জেলেই থাকতে হচ্ছে।
