X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছাসেবীদের যুদ্ধ জয়ের গল্প

জাকিয়া আহমেদ
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০০আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০০

‘এই সেন্টারে একটি অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে টিকা কার্ডের কিউআর কোডটি স্ক্যান করা হলে তার টিকা দেওয়ার তারিখ কবে ছিল, নামসহ সবকিছু চলে আসবে। এগুলো আমরা এন্ট্রি করি নির্ধারিত ডাটাবেজে। এন্ট্রি করার পরই তার দ্বিতীয় ডোজের তারিখ কবে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এন্ট্রি হয়ে যায়। কেউ যখন তার দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসবে, তখন তার নাম ডাটাবেজে দিলে তাকে শনাক্ত করাটা আমাদের জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে’ —বলছিলেন আমিনা রহমান সুপ্তি।

সুপ্তি লেখাপড়া করছেন বেসরকারি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা নিয়ে। এখন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে, যেখানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হচ্ছে।গত ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ জাতীয়ভাবে টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিন থেকে সুপ্তি এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।

ঢাকা মহানগরীর ভেতরে যে কয়েকটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টার তার অন্যতম। শুরু থেকেই এখানকার ঝকঝকে, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে টিকা নিতে পেরে অনেকেই ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

স্বেচ্ছাসেবীদের যুদ্ধ জয়ের গল্প ৬৭ বছরের নূরুন্নাহার এসেছে বাসাবো থেকে টিকা দিতে। এসেছেন ছেলের হাত ধরে। তবে মূল ভবনে প্রবেশ করেই ছেলে গেলেন কী এক কাজে তথ্যকেন্দ্রে। আর ঠিক তখনই কোথা থেকে লাল টিশার্ট পরা দুজন তার পাশে গিয়ে হাত ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন, কথা বললেন। হাত ধরেই হেঁটে এগিয়ে দিলেন টিকা দেওয়ার বুথে। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ টিকাদান কেন্দ্রে কাজ করছেন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরাও। আর টিকা দিতে আসা মানুষ বলছে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কাজ মন জয় করে নিচ্ছে। কতভাবেই না সহযোগিতা করছেন তারা।

তাদের প্রশংসা করছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন বলছেন, এই স্বেচ্ছাসেবকদের ছাড়া এত সুন্দরভাবে ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো কীনা সন্দেহ। এসব স্বেচ্ছাসেবকরা কাজের মান বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের জয় করে নিচ্ছে।

আমিনা রহমান সুপ্তি বলেন, সবাই টিকা নেওয়ার পর খুঁজে খুঁজে বলছেন, তুমি ভালো থেকো, অনেক ধন্যবাদ—এটা আসলে কতোটা ভালো লাগা জুড়ে দেয় জীবনে, সেটা বলতে পারবো না।

কেন করোনার টিকাদান কেন্দ্রে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার শুরু থেকেই রেড ক্রিসেন্ট অনেক কাজ করেছে। কিন্তু তখন আমি কিছু করতে পারিনি পরিবারের বৃদ্ধ মানুষদের কথা ভেবে। যাদের কথা আমাকে চিন্তা করতে হয়েছে।কিন্তু টিকাদান কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাউকে না কাউকে তো কাজটা করতে হবে। তখন চিন্তা করলাম, সেই মানুষটা আমি না কেন, আমি কেন এই সুযোগটা আমি কেন হাতছাড়া করবো। কিন্তু এখানে আসার জন্য যখন বাসায় অনুমতি চাইলাম, তখন মা রাজী ছিলেন না,আমিও ভয়ে ছিলাম। কারণ, এখানে এত মানুষকে হ্যান্ডেল করতে হবে, বাসায় ফিরতে হবে—সবকিছু মিলিয়ে ইচ্ছে এবং ভয়ের প্রতিযোগিতায় ভয় হেরেছে। তবে আমার বাবা শুরু থেকেই আমাকে সাপোর্ট করেছেন। সেই থেকেই আমার কাজ করতে আসা।

‘এখানে আমরা সবার আগে আসি, টিকাদান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর সবার শেষে আমরা যাই। আমাদের কোনও আলসেমি কাজ করে না, কোথা থেকে যেন যুদ্ধ জয়ের একটা নেশা চলে আসে—কোনও ক্লান্তিই কাজ করে না’— বলছিলেন আরেক স্বেচ্ছাসেবী সামিয়া হক।

 

করোনার এই ভ্যাকসিন প্রোগ্রামে কাজ করার জন্য ছয় ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে গত চার ফেব্রুয়ারি এসব স্বেচ্ছাসেবীদের। তারা এখানে আসেন টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবার একঘণ্টা আগে আর এখান থেকে সব কাজ সেরে নিজ বাসাতেও যান একঘণ্টা পরে।

নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো বায়োলজিতে পড়া সামিয়া বলেন, যখন কেউ বলে থ্যাংক ইউ,সেটা অনেক কিছু। সামিয়া বলেন, টিকা নিতে আসা মানুষদের সিরিয়াল মেইনটেইন করা, বুথ অনুযায়ী তাদেরকে বুথে বসিয়ে দেওয়া, সিরিয়াল অনুযায়ী তাদেরকে টিকা নিতে সাহায্য করাসহ নানা কাজে আমরা মানুষদের সহযোগিতা করছি।

তবে বাবা-মায়ের সাপোর্ট সামিয়া শুরু থেকেই পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করে, একইসঙ্গে আমিও আমাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করি, এরকম একটা কাজে—একটা প্যান্ডেমিকে আমি আমার জায়গা থেকে কাজ করতে পেরেছি, মানুষকে যে কোনও ভাবেই হোক সহযোগিতা করতে পেরেছি।

এই সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবীদের টিম লিডার হিসেবে কাজ করছেন রেজওয়ানুল ইসলাম শোভন। জানালেন, করোনার শুরুর দিকে যখন কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ডিজইনফেক্ট করার কাজ করেছেন তখন তাদের ২০ সদস্যের মধ্যে ১৭ জনই করোনাতে আক্রান্ত হন।

‘আমরা এর আগে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গুর সময়েও কাজ করেছি। তবে সেটা ছিল রেডক্রিসেন্টের উদ্যোগে। আগের কাজগুলো এবারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেটা নোটিশ করে রেড ক্রিসেন্টকে জানায়। তাই এবারই প্রথম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা অফিসিয়ালি কাজ করছি’—বলেন রেজওয়ানুল ইসলাম।

জানালেন, কেবল রাজধানী ঢাকাতেই ৮০০ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন তাদের। প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে দুজন করে স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। এই সেন্টারেরে আট বুথে দুইজন করে ১৬ জন আর আরও অতিরিক্ত হিসেবে আছেন চারজন। মোট ২০ জন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন।আর পুরো বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ১৪ হাজার রেড ক্রিসেন্ট কর্মী কাজ করছেন।

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দক্ষিণ লেবাননে ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নিচ্ছে ইসরায়েল
দক্ষিণ লেবাননে ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নিচ্ছে ইসরায়েল
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯ মাসে ৪৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯ মাসে ৪৩৫৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি
সেতুমন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি
সেতুমন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা