X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

মশা বেড়েছে চার গুণ!

শাহেদ শফিক
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০০আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২৩:০৭

বছরের অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে ঢাকায় কিউল্যাক্স মশা বেড়েছে প্রায় চারগুণ। আগে যেখানে প্রতি ডিপ-এ (মশার ঘনত্ব বের করার পরিমাপক) মশার ঘনত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫টি, সেখানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০টির মতো। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জরিপ চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

মশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সিটি করপোরেশনের অবহেলা ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করছেন কীটতত্ববিদরা। তারা বলছেন, বছরজুড়ে যেখানে মশা নিধন পরিচালনা করার কথা সেখানে ডেঙ্গু কমতে থাকার পর দুই সিটি করপোরেশনে কোনও কাজই হয়নি। মশার ওষুধ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন খোদ কাউন্সিলররাই।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এডিস মশার উপদ্রব না থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীতে মারাত্মক হারে বেড়েছে কিউল্যাক্স মশা। চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত রোগ ছড়াতে যারা বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।

সম্প্রতি মশা বেড়ে যাওয়ায় সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের ওপর সন্দেহ বাড়ছে নাগরিকদের। তাদের দাবি, যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তা কোনও কাজ করে না। মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে কাউন্সিলররাও নগর ভবনকে জানিয়েছেন।

এদিকে মশা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করলেও দক্ষিণ সিটিতে তা একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু সংস্থাটি তার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মশক নিধন কর্মীর সংখ্যা কমিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথাও বলতে রাজি নয় সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগ।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। প্রতি বছরের এ সময় মশার আধিক্য দেখা যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুরু থেকেই ওয়ার্ডগুলোতে জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে ক্র্যাশ প্রোগাম চালানোর দরকার ছিল। বছরজুড়ে দুই সংস্থার এই কাজে অবহেলা ছিল। মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে প্রতি সাত দিন অন্তর ড্রেন, ডোবা ও নোংরা এলাকা পরিষ্কার করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জরিপ করে দেখেছি, বছরের অন্য যে কোনও সময়ের তুলনায় এখন মশার ঘনত্ব তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে। মশার প্রজননস্থলগুলো পরিষ্কার করে এ উপদ্রব কমিয়ে আনা সম্ভব। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে মার্চের পর থেকে আরও বাড়তে থাকবে।’

মশার উপদ্রব যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে কালবৈশাখী ঝড় না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মশা নিয়ে অভিযোগ করেছেন খোদ করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মশক নিধনে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও। ডিএসসিসির ৬৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. ইবরাহীম সংস্থার মেয়রকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, তার ওয়ার্ডের জন্য সিটি করপোরেশনের বরাদ্দকৃত মশার ওষুধ প্রতিদিন ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

ডিএসসিসির স্বাস্থ্যবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন অনেক কাউন্সিলরের ফোন পাই। সবারই অভিযোগ- ওষুধ কাজ করে না। তারা ওষুধ পরীক্ষার দাবি করেছেন।

খিলগাঁওয়ের রিকশাচালক সোলায়মান মিয়া বলেন, আগে গ্যারেজে রিকশা রেখে রিকশাতেই ঘুমিয়ে যেতাম। এখন রাস্তায় দুই মিনিট দাঁড়ালেই মশা ছেঁকে ধরে।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইডিং ওষুধের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে ডিএসসিসি। তাতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিটি কোম্পানি ‘অতিরিক্ত’ দর দেওয়ায় তা বারবার রি-টেন্ডার করে ডিএসসিসি। প্রায় চার দফায় টেন্ডার দিয়ে গতবছরের অক্টোবরের দিকে ওষুধ ফরমুলেশনের কাজ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে সংস্থাটি। এই দীর্ঘ সময় সংস্থার কাছে ওষুধই ছিল না। অলস সময় কাটিয়েছিল মশককর্মীরা।

মশক নিধনে যেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ৪০ জন কর্মী রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, সেখানে ১৩-১৮ কর্মী রয়েছে সিটি করপোরেশনে। এদের মধ্য থেকে আবার ১০-১২ জনকে রেখে বাকিদের সচিব দফতরে বদলি করা হয়েছে। ডেঙ্গুর এই মৌসুমে কর্মী কমানোকে চরম অবহেলা হিসেবে দেখছেন কীটতত্ত্ববিদ ও নাগরিকরা।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ। সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদের দফতরে গেলে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশার ওষুধ আমরা পরীক্ষা করি না। কাজটা করে আইইডিসিআর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের প্লান্ট প্রটেকশন। তারা যে ওষুধ সার্টিফায়েড করে আমরা সেটাই ব্যবহার করি।'

উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘মশা বেড়েছে সত্য। বিগত সময়ে আমরা কয়েকবার চিরুনি অভিযান করেছি। এখনও বিশেষ অভিযান চলছে।’

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট