X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের ‘গলার কাঁটা’

প্রভাষ আমিন
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৩৫আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৩৫

প্রভাষ আমিন খাওয়ার মাঝখানে গলায় মাছের কাঁটা আটকানোর অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। কাঁটার ভয়ে অনেকে মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কাঁটার ভয়ে আমার ছেলে প্রসূন মাছ খেতে চায় না। তবে ইলিশ মাছ তার খুব প্রিয়। তাই খাওয়ার সময় কলেজপড়ুয়া প্রসূনের মাছের কাঁটাও বেছে দিতে হয়। ছোটখাটো কাঁটা হলে এক মুঠো শুকনো ভাত গিললেই সেটা চলে যায়। কিন্তু কাঁটাটা একটু বড় হলেই বিপদ। ‘না গেলা যায়, না উগরানো যায়’। মাছের কাঁটা নিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত ছুটে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও কম নয়। মাছের কাঁটা আটকানোর সমস্যাটা ছোট, ভোগান্তিটা বড়। তেমনই এক মাছের কাঁটা আটকেছে আওয়ামী লীগের গলায়। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, কাঁটাটা আটকেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গলায়। আপন ছোট ভাই দিনের পর দিন তার বিরুদ্ধে, তার স্ত্রী বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে, পুলিশের বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছেন। কেউ তাকে থামাতে পারছেন না। যিনি থামাতে যাচ্ছেন, তিনিই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ওবায়দুল কাদের তার আপন ভাইকে থামাতেও পারছেন না, ফেলতেও পারছেন না।

কাদের মির্জা প্রথম মুখ খোলেন গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। সেদিন তিনি দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের ৩/৪ জন ছাড়া বাকিরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না। তারপর থেকে তার এই সত্যবচন চলছেই। অনেকেই ভেবেছিলেন কাদের মির্জা হয়তো নির্বাচনে জয় পাওয়ার কৌশল হিসেবে এসব বলছেন। কিন্তু নির্বাচনে জয়ের পরও থামেনি তার সত্যের লড়াই। কাদের মির্জা জানিয়েছেন, অসুস্থতার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি সত্য বলবেন এবং বলেই যাচ্ছেন।

কাদের মির্জার এ লড়াই সবচেয়ে বেশি বিব্রত করেছে তার বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরকে। বসুরহাটে এখন আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ– একটি কাদের মির্জার, অন্যটি ওবায়দুল কাদেরের। বিএনপি বা বিরোধী দল বছরের পর বছর সরকার বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ বা ওবায়দুল কাদেরকে যতটা বিব্রত করতে পেরেছে, কাদের মির্জা একা করেছেন তারচেয়ে অনেক বেশি। এ যেন ‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা’। ওবায়দুল কাদের প্রতিদিন বিএনপিকে নানা নসিহত করেন, কিন্তু ঘর সামলাতে পারেন না। আগে তার ঘরে নজর দেওয়া উচিত। কাদের মির্জা প্রায় দুই মাস ধরে বলেই যাচ্ছেন। সব শুনে আমার মনে হয়েছে, অসুস্থতা বা রাজনৈতিক কৌশল নয়; এটা নিছকই দেবর-ভাবির পারিবারিক লড়াই। কাদের মির্জার দাবি অনুযায়ী, ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী এক বছর আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। সে রাগেই তিনি এই ‘সত্যের লড়াই’ শুরু করেছেন। ওবায়দুল কাদেরকে পাশে না পেয়ে এখন তাকেও প্রতিপক্ষ বানাচ্ছেন। এমনকি ওবায়দুল কাদেরের মন্ত্রণালয়ে কী হয়, ফান্ড কোথায় যায়; তাও ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরের দীর্ঘ সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এত বড় বিপর্যয় আর কখনও ঘটেনি।

কাদের মির্জার দাবি অনুযায়ী তিনি ৪৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ করছেন। তার লড়াই হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে। ৪৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ করলে তিনি দলের শৃঙ্খলাটাও জানেন। সব কথা সব সময় প্রকাশ্যে বলা যায় না। কিন্তু কাদের মির্জার সমস্যাটা হলো, যার কাছে অভিযোগ করার কথা, অভিযোগ তার বিরুদ্ধেই। তাই হয়তো ঘরে বা দলে বিচার না পেয়েই তিনি মাঠে নেমেছেন। কাদের মির্জাকে থামানো একটু কঠিন। কারণ, তিনি যা যা বলছেন, মোটা দাগে তার সত্যতা আছে। নির্বাচন নিয়ে, প্রশাসন নিয়ে, পুলিশ নিয়ে, দলের নেতাদের নিয়ে তার যে বক্তব্য তা সাধারণ মানুষের ধারণার সঙ্গে মেলে। তাই সাধারণ মানুষ তার কথাকেই সত্য বলে ধরে নিচ্ছে। কাদের মির্জার বক্তব্য সাধারণ মানুষের ধারণাকে বিশ্বাসে বদলে দিচ্ছেন। কাদের মির্জার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা যেতে পারে, কিন্তু তাকে পাগল বলে তার বক্তব্য উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের শত্রু নয়, আওয়ামী লীগের বিবেকের মতোই কথা বলছেন।

এতদিন কথার লড়াই ছিল। কিন্তু সেই লড়াই এখন রক্তক্ষয়ী রূপ নিয়েছে। দুই গ্রুপের লড়াইয়ে প্রাণ গেছে সাংবাদিক মুজাক্কিরের। এখন সরকার হোক, দল হোক; কোম্পানীগঞ্জে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। এরই মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ কাদের মির্জাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। পরে আবার তা প্রত্যাহারও করেছে। তবে কাদের মির্জাকে দল থেকে বহিষ্কার কোনও সমাধান নয়। ‘মাথা কেটে ফেলা’ কখনোই মাথাব্যথার সমাধান নয়। কাদের মির্জা যা যা বলছেন, তা আমলে নিতে হবে। তদন্ত করতে হবে। সত্য হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মিথ্যা হলে কাদের মির্জার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে না।

ত্যাগী আওয়ামী লীগারদের সঙ্গে ক্ষমতালোভী হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের লড়াইটাও পুরনো। কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সেই পুরনো আবেগে টোকা দিয়েছেন। একটা কড়া শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে দলকে হাইব্রিড, চাঁদাবাজ, ধান্ধাবাজ, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসীমুক্ত করাটা এখন সময়ের দাবি। কাদের মির্জার সত্যের লড়াইয়ে শুরু হোক সঠিক পথে আওয়ামী লীগের নবযাত্রা।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ