এতোদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিটাগুড় রফতানি করা হতো। তবে দেশীয় চিনিকলগুলোর মুমূর্ষু অবস্থায় এবং দেশের বাজারে ভালো চাহিদা তৈরি হওয়ায় প্রথমবারের মতো দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের সড়ক ও রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে চিটাগুড় আমদানি করা হচ্ছে।
গত রবিবার ভারতের মধ্যপ্রদেশ থেকে বেনাপোল রেলপথ বন্দর দিয়ে চিটাগুড় বহনকারী ৫০টি ওয়াগন দেশে প্রবেশ করে। এর পরে ঈশ্বরদিতে ২০টি ওয়াগন রেখে ৩০টি ওয়াগন নিয়ে হিলি রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়। জয়পুরহাটের মেসার্স আনোয়ারুল হক এসব চিটাগুড় আমদানি করছেন। একইভাবে সম্প্রতি হিলি স্থলবন্দরের সড়ক পথ দিয়েও ভারত থেকে চিটাগুড় আমদানি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার ইস্টার্ন এন্টারপ্রাইজ এসব চিটাগুড় রফতানি করছে ও জয়পুরহাটের ফজলুর রহমানসহ অনেক আমদানিকারক চিটাগুড় আমদানি করছেন। ভারত থেকে প্রতিটন চিটাগুড় ১১০ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে। প্রতিটন চিটাগুড় আমদানিতে সরকারকে শুল্কপরিশোধ করতে হচ্ছে চার হাজার ২০০ টাকার মতো।
চিটাগুড় আমদানিকারক আনোয়ারুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে চিনিকলগুলো চালু থাকার কারণে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিটাগুড় উৎপাদন হতো। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভালো চাহিদা থাকার কারণে বাড়তি চিটাগুড় হিলি স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি করা হতো। সম্প্রতি লোকসানের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানের বেশ কিছু চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে চিটাগুড়ের উৎপাদন কম হওয়ায় সরবরাহ কমেছে। দেশের বাজারেও চিটাগুড়ের ভালো চাহিদা তৈরি হয়েছে। সেই চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বাড়তি দামে চিটাগুড় আমদানি করতে হচ্ছে।
তিনি জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো হিলি স্থলবন্দরের রেলপথ দিয়ে প্রথমবারের মতো আমার আমদানিকৃত (৫০টি ওয়াগনে) আড়াই হাজার টন চিটাগুড়ের প্রথম চালানে ৩০টি ওয়াগন হিলি রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়। বর্তমানে যা খালাস কার্যক্রম চলছে। এসব গবাদিপশু, মুরগি ও মাছের খাদ্য তৈরির বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করা হবে। তবে সড়কপথে পণ্য আমদানিতে বেশ ঝামেলা। বন্দরের ভেতরে জায়গা নেই, গাড়ি সময় মতো বেরোতে পারে না। এরকম অনেক ঝামেলা পোহতে হয়। বিপরীতে রেলপথে আমদানিতে তেমন সমস্যা নেই। যার কারণে রেলপথ দিয়ে চিটাগুড় আমদানি করা হচ্ছে।
হিলি রেলস্টেশন মাস্টার তপন কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বছরে করোনার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। সেসময় প্রথমবারের মতো হিলির রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির মধ্য দিয়ে হিলি রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি শুরু হয়। এর পর এই পথ দিয়ে নিয়মিত পেঁয়াজ, পাথর, গম, ভুট্টা আমদানি হতে থাকে। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো চিটাগুড় আমদানি হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০টি ওয়াগনে আড়াইহাজার টন চিটাগুড় দেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে ৩০টি ওয়াগন হিলি রেলস্টেশনে এসে পণ্য খালাস করছে। বাকি ২০টি ঈশ্বরদিতে রয়েছে। এগুলো খালাস কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সেই ২০টি ওয়াগন আবারও হিলি রেলস্টেশনে এসে পৌঁছাবে। রেলপথ দিয়ে চিটাগুড় আমদানির মাধ্যমে রেলের ভাড়া বাবদ আয় হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টাকার মতো। হিলি রেলস্টেশনের অবকাঠামোগত আরও কিছু উন্নয়ন করা হলে রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি যেমন বাড়বে, তেমনি আমদানি অব্যাহত থাকলে হিলি রেলস্টেশনের আয় আরও বাড়বে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চিটাগুড় আমদানির কার্যক্রম সম্পন্নকারী সিআ্যন্ডএফএজেন্ট শ্যামল কিশোর দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভারতের বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের রফতানিকারকেরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চিটাগুড় দীর্ঘদিন ধরে ভারতে রফতানি করেছেন। সম্প্রতি উল্টো চিত্র দেখতে পাচ্ছি। এতোদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিটাগুড় রফতানি হলেও বর্তমানে ভারত থেকে দেশে চিটাগুড় আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। আমরা এর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দিচ্ছি।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিটাগুড় রফতানি হলেও সম্প্রতি বন্দর দিয়ে চিটাগুড় আমদানি শুরু হয়েছে। এতে করে সরকারে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্দরের আয়ও বেড়েছে। গত কয়েকদিনে বন্দর দিয়ে ১০টির মতো কনসাইনমেন্টের চিটাগুড় আমদানি হয়েছে। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।