X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন

বেরোবিতে হল ও ভবন নির্মাণে অনিয়ম, উপাচার্যকে দায়ী করে প্রতিবেদন

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
০৩ মার্চ ২০২১, ১৩:০৮আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২১, ১৩:০৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের অংশ হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে প্রকল্পের ব্যয় নতুন করে ১০৮ ভাগ বৃদ্ধির নামে লুটপাটের ঘটনায় ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তদন্তে পুরো ঘটনার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ও তার ভাগনে প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদেরসহ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের দায়ী করা হয়েছে। অনিয়মের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্তে উপাচার্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির আরও তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিবেদনে উপাচার্য কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও তার ভাগনে মঞ্জুর কাদেরকে প্রকল্পের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান, কাজ শেষ হওয়ার আগে কনসালটেন্সি বাবদ দেওয়া ৪০ লাখ টাকা ফেরত নেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বেরোবিতে হল ও ভবন নির্মাণে অনিয়ম, উপাচার্যকে দায়ী করে প্রতিবেদন তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে অবহেলা, দীর্ঘসূত্রিতা ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, এর জন্য কর্তৃপক্ষের অনৈতিক আচরণ, অদক্ষতা, এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ও শিক্ষা গবেষণা সুযোগ সৃষ্টির পথে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রধান ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকার জন্য বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহকেই সব দায় নিতে হবে।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ১৩ জানুয়ারি একনেক সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯৭ দশমিক ৫০ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে শেখ হাসিনা হল ও প্রধানমন্ত্রীর স্বামীর নামে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য স্বতন্ত্র ভবন নির্মাণের জন্য ৭৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৫ থেকে ২০১৮ জুন পর্যন্ত। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব ও প্রাকৃতি নির্মাণ লিমিটেডকে যৌথভাবে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ওই সময় উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. একেএম নুরন্নবী।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ১৪ জুন অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ তদারকির জন্য তার ভাগ্নে প্রকৌশলী মঞ্জুর কাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। অথচ মঞ্জুর কাদের উন্মুক্ত দরপত্রে অংশগ্রহণকারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েটের মালিক। কিছুদিন পর আইন ও চুক্তি লংঘন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিব ও প্রাকৃতি নির্মাণ লিমিটেডের কার্যাদেশ বেআইনিভাবে বাতিল করে মঞ্জুর কাদেরকে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেন উপাচার্য।

এতে আরও বলা হয়, এদিকে অনুমোদিত ডিপিপির তোয়াক্কা না করে ভবন দুটির নকশা পরিবর্তন করা হয়। পাশাপাশি, নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয় দ্বিগুণেরও বেশি। ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভবন নির্মাণে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬১ কোটি কোটি টাকা করা হয়। অন্যদিকে শেখ হাসিনা হলের ৫১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৭ কোটি টাকা করা হয়। অন্যদিকে মূল ডিপিপিতে পরামর্শক ফি না থাকলেও উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ সেই খাতে ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন।

এদিকে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচািলকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে নানান অসঙ্গতি নজরে আসলে ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সদস্যরা হলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান এবং অতিরিক্ত পরিচালক দূর্গারানী সরকার। তদন্ত কমিটি গত ১৭ জানুয়ারি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নির্মাণাধীন দুটি প্রকল্পের কাজ দেখে হতবাক হয়ে যান। তারা দেখতে পান প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত নকশা পরিবর্তন করে কোনও অনুমতি ছাড়াই প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ করে কাজ চলছে।

কমিটি অগের নকশা অনুযায়ী কাজ করার সুপারিশ করেন এবং উপাচার্যের ভাগ্নের তৈরী করা নকশা বাতিল করে দেন। তদন্ত কমিটি উল্লেখ করেছে, যেহেতু প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিবের তৈরি করা ড্রয়িং বা ডিজাইনের ওপর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান, সে কারণে ওই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্যের ভাগনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিজের ইচ্ছেমতো যত্রতত্র ভবনের এরিয়া বাড়িয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প শেখ হাসিনা হল নির্মাণে অনুমোদিত নকশার বাইরে এবং নতুন করে নকশা সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় ১০৭ ভাগ বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা ক্ষমতার দাপট ছাড়া আর কিছুই নয়। একইসঙ্গে আগের নকশা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ করতে দেওয়া হলে অনেক আগেই এর কাজ শেষ হয়ে যেতো এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধান হতো।

সার্বিক বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন ইউজিসিতে জমা দেওয়া হয়েছে।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বাধিক পঠিত
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!