X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মরোক্কো থেকে পাচার হওয়া যুবকের ফোন, নোয়াখালীতে চক্রের সদস্য গ্রেফতার

নোয়াখালী প্রতিনিধি
০৩ মার্চ ২০২১, ১৯:৫৪আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২১, ১৯:৫৪

নোয়াখালীতে মানবপাচারকারী সন্দেহে এক ব্যক্তিকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেছে জেলা সিআইডি পুলিশ। তার ব্যক্তির নাম মো. হানিফ ওরফে মাসুদ (৪০)। মরোক্কোতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া এক বাংলাদেশি ও তার স্ত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার মো. হানিফ একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী দলের সদস্য বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ব্যাপারে অভিযোগকারী মো. আলাউদ্দিনের (৩৯) অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হানিফ বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউপির ৮ নং ওয়ার্ড বসন্তের বাগের মৃত আলী আজমের ছেলে।

বুধবার (৩ মার্চ) বিকাল ৩টায় জেলা সিআইডি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ধৃত আসামিসহ সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের অপরাপর সদস্যদের ধোঁকায় পড়ে উপজেলার একলাশপুর গ্রামের রফিক উল্যার ছেলে মো. আলাউদ্দিন বর্তমানে মরোক্কোর নাদোর শহরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ওই ভিকটিম দেশে বেকার থাকায় ২০১৯ সালে বিদেশে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য মো. হানিফ ইউরোপের দেশ স্পেন যাওয়ার জন্য ভিকটিমকে প্ররোচিত ও প্রলুব্ধ করে। বিনিময়ে ভিকটিমের কাছে ১১ লাখ টাকা দাবি করে। এসময় হানিফ কৌশলে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় ঘটিয়ে দিয়ে তার সরল মনে বিশ্বাস তৈরি করে যারা সবাই প্রকৃতপক্ষে মানবপাচারকারী দলের সদস্য। এরপর ভিকটিম সরল বিশ্বাসে প্রলুব্ধ হয়ে নগদ ১১ লাখ টাকা হানিফসহ মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টাকা পাওয়ার পর গত ২০১৯ সালের ২০ মার্চে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার এরাবিয়ার বিমানযোগে ভিকটিম আলাউদ্দিনকে দুবাই পাঠিয়ে দেয়। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে ভিকটিম আলাউদ্দিনকে পাচারকারীদের অপর দুই সদস্য রিসিভ করে তাদের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে রাখে। ভিকটিম আলাউদ্দিন এর সঙ্গে থাকা ৩০০০ (তিন হাজার) ইউরো পাচারকারীরা জোর করে নিয়ে নেয়। এরপরও পাচারকারীরা আরও টাকা পাচারকারীদের মনোনীত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিতে বললে ভিকটিমের ছোট ভাই মনির হোসেন আজিম গত ২০১৯ সালের ২৫ মার্চে ওয়ান ব্যাংকের চৌমুহনী শাখায় নগদ ৫০ হাজার টাকা পাচারকারীদের অ্যাকাউন্টে জমা করে। পরবর্তীতে পাচারকারীরা দুবাই থেকে ভিকটিম আলাউদ্দিনের পাসপোর্টে আফ্রিকার দেশ মালির ভিসা ইস্যু করে। ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে ইথিওপিয়া এয়ারলাইন্সে আফ্রিকার দেশ মালিতে পাচার করে দেয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মালিতে গিয়ে আলাউদ্দিন পড়েন সেখানকার মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য আফ্রিকান ইউরো ও ইব্রাহিমের খপ্পড়ে। তারা মালির বামাকো এয়ারপোর্ট থেকে ভিকটিমকে রিসিভ করে তাদের বাড়িতে জিম্মি করে। সেখানে অস্ত্রের মুখে আলাউদ্দিনের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। এরপর তার মতো মানবপাচারের শিকার মোট ১৯ জনের একটা দল তৈরি করে। এই আফ্রিকার দেশ মালি থেকে এই দুই রিং লিডারের নেতৃত্বে পায়ে হেঁটে অনেকটা পথ যাওয়ার পর লরি গাড়িতে চড়িয়ে সাহারা মরুভূমি ও বড়বড় পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দেয় তারা। একটানা ৫ দিন এভাবে অনাহারে রেখে সাহারা পাড়ি দিয়ে আফ্রিকার মরক্কোর নাদোর শহরে পাচার করে দেয়। সেখানে তাদের রিসিভ করে মানবপাচারকারী চক্রের অপরাপর সদস্যরা। এরা আলাউদ্দিনসহ মোট ৯ জনকে তাদের নাদোর শহরের ভাড়াবাড়িতে জিম্মি করে রাখে। সেখান থেকে ভিকটিম আলাউদ্দিন জিম্মির বিষয়টি তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার নুপুর (২৫) কে ফোনে জানালে, ভিকটিমের মুক্তির জন্য তার স্ত্রী ১ লাখ চল্লিশ হাজার টাকা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য ওই মো. হানিফ ওরফে মাসুদকে মুক্তিপণ হিসেবে দেয়।

এরপর, নুপুর বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে মো. হানিফসহ মানবপাচারকারী চক্রের অপরাপর সদস্যদের বিরুদ্ধে গত ১০ ডিসেম্বর এজাহার দায়ের করেন। মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় সিআইডি, নোয়াখালী মামলাটি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের হাতে নেয়। এদিকে,মামলায় সিআইডি যুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে আসামিরা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। তবে বাদীর দেওয়া তথ্য উপাত্ত ও প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে টিম সিআইডি নোয়াখালীতে আসামিদের শনাক্ত ও তাদের অবস্থান খুঁজে পায়। পরবর্তীতে বিশেষ পুলিশ সুপার সিআইডি, নোয়াখালী এর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ প্রচেষ্টায় মো. হানিফ ওরফে মাসুদকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের পর হানিফ ঘটনা স্বীকার করে ভিকটিম আলাউদ্দিনের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ঘটনায় তার ভাই আব্দুল ওয়াদুদসহ আরও কয়েকজন জড়িত বলে জানিয়েছে সে। অপর আসামিদের গ্রেফতারে সিআইডির অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে লিবিয়ার মানবপাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি খুন হওয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এরপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ধরপাকড় চালিয়ে সারাদেশে মানবপাচারকারী চক্রের শতাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করলেও এখনও মো. হানিফদের মতো মানবপাচারকারীরা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!