X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কেন এতোটা গুরুত্ব পাচ্ছে মতুয়ারা?

বিদেশ ডেস্ক
০৫ মার্চ ২০২১, ১৮:০৫আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২১, ১৮:০৫

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরে গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের আদি ধর্মস্থানে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওড়াকান্দি হচ্ছে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা কয়েক কোটি মতুয়ার কাছে সম্প্রদায়টির প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের 'লীলাক্ষেত্র'। সে রকম একটি ধর্মীয় স্থানে মোদি এমন একটা সময়ে যেতে পারেন, যার একদিন পর থেকেই শুরু হবে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন।

মতুয়া মহাসংঘের একাংশের সঙ্ঘাধিপতি ও বিজেপির এমপি শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের আদি পীঠস্থানে যান, তার একটা প্রভাব তো এখানকার রাজনীতিতে পড়বেই।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কেন, কোনও পর্যায়ের কোনও মন্ত্রী সেখানে কখনও যাননি। ওড়াকান্দি মতুয়াদের কাছে একটা আবেগের জায়গা।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের এবারের নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। একদিকে যেমন এ সম্প্রদায়ের একাংশ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে এবার লড়াই এতোটাই হাড্ডাহাড্ডি হতে যাচ্ছে যে, মতুয়া ভোট অনেক আসনেই নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। তাই এ জনগোষ্ঠীর মন জয় করাটা বিজেপির কাছে বিশেষ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতার সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুন্ধতী মুখার্জি।

অরুন্ধতী মুখার্জির ভাষায়, ‘এবারের নির্বাচনেই দেখছি ছোট ছোট সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীর ভোটের জন্য কী তৃণমূল কংগ্রেস কী বিজেপি – উভয় পক্ষই উঠেপড়ে লেগেছে। বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নাগরিকত্ব আইন চালু না হওয়ায় মতুয়াদের একটা বড় অংশ হতাশ হয়ে পড়েছে। তাই ভোটের আগে ওই ধর্মীয় তীর্থস্থানে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়াটা নিশ্চিতভাবেই তাদের মন জয় করার একটা চেষ্টা।’

বিজেপির এমপি শান্তনু ঠাকুরও এটা স্বীকার করেন যে, নাগরিকত্ব আইন চালু না হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছিল। তবে তার দাবি, অমিত শাহ-র সাম্প্রতিক সফরে মতুয়াদের প্রধান কেন্দ্র ঠাকুরনগরে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে সেটি কেটে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কেন এতোটা গুরুত্ব পাচ্ছে মতুয়ারা?

কারা এই মতুয়া সম্প্রদায়?

এরা আসলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নমঃশূদ্র গোষ্ঠীর মানুষ। গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুর এবং গুরুচাঁদ ঠাকুর এই সম্প্রদায়ের সূচনা করেন। ভারতের স্বাধীনতার পরে তারা নিজেদের বড় সংখ্যক শিষ্যদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। উত্তর ২৪ পরগণার ঠাকুরনগরে নিজেদের ধর্মীয় কেন্দ্র গড়ে তোলেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, ভোটের রাজনীতিতে মতুয়ারা কি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেও বিদেশ সফরে গিয়ে তাদের আদি ধর্মস্থানে যেতে হবে? কেন তাদের এতোটা গুরুত্ব পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে? বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে অতি সক্রিয় এই সম্প্রদায় পশ্চিমবঙ্গের অনেকগুলো আসনেই নির্ণায়ক শক্তি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্য বলেন, পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় মতুয়াদের ভোট আসলে হারজিত নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তার ভাষায়, ‘বনগাঁ ও বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত অন্তত ১৪টি বিধানসভায় মতুয়া ভোটই ঠিক করে দেয় যে কে জিতবে। এছাড়া নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগণার মতো জেলাগুলোর প্রতিটি বিধানসভার ক্ষেত্রেই কোথাও পাঁচ, কোথাও ১০ হাজার করে মতুয়া আছেন।’

তিনি বলেন, ‘এবারের ভোট যেহেতু খুব হাড্ডাহাড্ডি হবে, তাই ওই পাঁচ-দশ হাজার ভোট কিন্তু নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে। সেজন্যই মতুয়া ভোট নিশ্চিত করা বিজেপি বা তৃণমূলের কাছে অতি জরুরি।’

রাজনীতিতে সক্রিয়

মতুয়া সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মগুরুরা স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। এক সময়ের সঙ্ঘাধিপতি প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর ছিলেন কংগ্রেসের এমপি। তার ছেলে, পুত্রবধূ এবং নাতিরাও সক্রিয় রাজনীতিতে রয়েছেন।

একটা সময় এই মতুয়ারা প্রায় সবাই ভোট দিতেন বামফ্রন্টকে। ২০১১ সাল থেকে তারা ভোট দিতে শুরু করলেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। আর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া মহাসংঘে চিড় ধরে। একটা অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে রইলো। অন্য অংশটির প্রধান শান্তুনু ঠাকুর বিজেপির টিকিটে জিতে এমপি হলেন।

শান্তনু ঠাকুর মনে করেন যে, ওড়াকান্দিতে মোদির সফর পশ্চিমবঙ্গের ভোটে একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তার দলের ওপর। তবে তৃণমূল কংগ্রেসপন্থী মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্যকরী সভাপতি সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাসের এক্ষেত্রে দ্বিমত রয়েছে।

সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, বিজেপির ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন মতুয়াদের আদি ধর্ম-পীঠে গিয়ে সেই ক্ষতি পূরণ করা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। তার ভাষায়, ‘এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তারা নাগরিকত্ব আইন চালুর প্রতিশ্রুতি একাধিকবার দিয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও এসে বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তো কবে আইন চালু হবে, তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই। ঠাকুর হরিচাঁদ গুরুচাঁদের আদি লীলাক্ষেত্রে গিয়ে সেই ড্যামেজ কি আর কন্ট্রোল করতে পারবে বিজেপি?’

পশ্চিমবঙ্গে এবারের ভোটে খুব বেশিভাবে প্রকট হয়ে উঠেছে সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতি। ছোট ছোট যেসব সম্প্রদায় আছে একেকটি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়ে, তাদের সমর্থন পেতে চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়েই। এটা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একেবারেই নতুন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
স্বার্থে আঘাত করলে কঠোর জবাব দেবে ইরান: রাইসি
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নৌকাডুবিতে নিহত ৪
সর্বশেষ খবর
অ্যাটলেটিকোকে বিদায় করে ১১ বছর পর সেমিফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগঅ্যাটলেটিকোকে বিদায় করে ১১ বছর পর সেমিফাইনালে ডর্টমুন্ড
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
চ্যাম্পিয়নস লিগঅবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়