‘সব নাগরিকের নিরাপত্তা-মর্যাদা-সমঅধিকার ও বাক-স্বাধীনতা আদায়ে এক হও’, – এই আহ্বানে নারী সমাবেশ করেছে নারী সংহতি।
শুক্রবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা ছয়টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশের শুরুতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও নিপীড়িত নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন,এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করা হবে। স্বাধীন দেশে নারীরা নিরাপদে চলতে পারবে ও তাদের সব অধিকার নিশ্চিত হবে, এমন কথা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারীরা আজও নিরাপদে রাস্তায় চলতে পারেন না। শ্রমজীবী নারীরা তাদের কর্মস্থলে নিরাপদে কাজ করতে পারেন না। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে তার কোনও কিছুই বর্তমান বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং অতীত ও বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা শাসকেরা দেশকে একাত্তরের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে চালিয়েছেন। এখানে নারীরা চরম অনিরাপত্তা, নিপীড়ন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধারাবাহিকভাবে নিপীড়িত হচ্ছেন।
বক্তারা আরও বলেন, এখানে কোনও মানুষের কোনও নিরাপত্তাই নেই। ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও লালন-পালনে গুম-খুন, সন্ত্রাস চলছে। এখানে একের পর এক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটলেও অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসে না। স্বাধীন দেশে তনু ধর্ষণ-হত্যার বিচার হয় না। উন্নয়নের নামে সরকার এখানে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মর্যাদা কেড়ে নেয়। এর বিরুদ্ধে দেশের রাজনৈতিক সচেতন নাগরিকেরা কথা বললে, প্রতিবাদ জানালে, তারা সরকারের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ সরকারের নিবর্তনমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে কারাগারে আটক অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ মারা গেছেন। একই আইনে আটক কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তার ওপরে হওয়া অমানবিক নির্যাতনের বিবরণ জানা যায়। নিবর্তনমূলক এ আইনের বিরোধিতা করায় ছাত্রদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে।
সমাবেশে দেশের মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
তারা বলেন, দেশে সমতলের মানুষের পাশাপাশি নিপীড়ন-ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন পাহাড়ি নারীরাও। নির্বাচনে ভোটবিহীনভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে রাখা এ সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহির কোনও জায়গায় রাখেনি। এত বছরেও নিরাপদে চলাচল করতে পারে না নারীরা। দেশে নারী-পুরুষ সাম্য চাই। নারীর ক্ষমতায়নের নামে মুষ্টিমেয় মানুষের ক্ষমতায় গিয়ে তার অপব্যবহার চাই না।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন— গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সীমা দত্ত, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির দফতর সম্পাদক মুসা কলিমুল্লাহ, কবি ও শিক্ষক রুমিয়া রুমি প্রমুখ।
সমাবেশে নারী সংহতির সদস্য রেক্সোনা পারভীন সুমির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন— নারী সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, দফতর সম্পাদক নাসরিন আকতার, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, লেখক ও নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, গবেষক ও লেখক মাহা মির্জা, ইনডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিথিলা মাহফুজ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফাসহ আরও অনেকে।
সমাবেশ শেষে তারা পতাকা র্যালি করেন। র্যালিটি শাহবাগ থেকে কাঁটাবন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।