গৃহকর্মীদের হয়রানি বন্ধে তাদেরকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তিসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে ‘ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার’ ও ‘ন্যাশনাল ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স সেন্টার’। সোমবার (৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধন ও র্যালি থেকে এই দাবি জানায় তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ১৭ লাখ গৃহকর্মীর অধিকার সুরক্ষা এবং তাদের শ্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকারসহ সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে হলে যত দ্রুত সম্ভব আইএলও কনভেনশন-১৮৯ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ বাস্তবায়ন জরুরি।
বক্তারা বলেন, ২০১৬-১৭ সালের শ্রম শক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর্মজীবী নারীদের একটি বড় অংশ গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত, যাদের প্রায় ৯০ শতাংশ নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় তাদের অধিকার এবং শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কোনও প্রাতিষ্ঠানিক নিরীক্ষণ ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত কার্যকর হতে পারেনি।
বক্তারা আরও বলেন, জরিপে দেখা যায়— ২০২০ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশে ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জনের রহস্যজনক মৃত্যুসহ মোট ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১২ জন। শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চরমভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১২ জন, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন। এসব ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানায় একটি করে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। গৃহকর্মে নিয়োজিত রয়েছে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তাদের কথা আমাদের ভাবতে হবে এবং প্রত্যেকের ঘর থেকেই সেটি আমাদের শুরু করতে হবে। গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি- ২০১৫ বাস্তবায়ন এবং এটিকে আইনে রূপান্তর করতে হবে।
বক্তারা বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নেতিবাচক মানসিকতার কারণে গৃহকর্মীরা স্বীকৃতি পাননি। এ মানসিকতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। গৃহকর্মের মর্যাদা দিতে হবে। জনগণ ও সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবপক্ষ যদি গহশ্রমিককে মর্যাদা দিতে পারে, তাহলেই তাদের মর্যাদার জায়গাটি পরিবর্তন সম্ভব হবে। শ্রমিক হিসেবে শুধু স্বীকৃতি দিলেই হবে না। তাদের শিক্ষার ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে।
এ সময় পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হচ্ছে— গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি, নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে, গৃহশ্রমিকদের শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন-১৮৯ অনুসমর্থন ৩, স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে গৃহশ্রমিক নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করতে হবে, মজুরি বোর্ড ঘোষণা করতে হবে , গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় দ্রুত জেলা ও উপজেলা মনিটরিং সেল ও পরিদর্শন টিম গঠন করতে হবে, গৃহশ্রমিকদের হত্যা,নির্যাতন, হয়রানি বন্ধে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
ন্যাশনাল ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স সেন্টারের সভাপতি সেলিনা বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন— সাধারণ সম্পাদক কল্পনা আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফা আক্তার, কোষাধ্যক্ষ শান্তিয়ারা বেগম, মমতাজ, অরুনা, দোলনা, হাসিনাসহ নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন— ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের সভাপতি সুলতানা বেগম, সাধারণ সম্পাদক মো.ইলিয়াস, যুগ্ম সম্পাদক খাদিজা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ উদ্দীন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রোজিনা আক্তার সুমি, প্রচার সম্পাদক মো. তাহেরুল ইসলাম, সেলিনা হোসেন, রাবেয়া ইসলামসহ প্রমুখ।
