X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সামনে রোজা, টিসিবি কি প্রস্তুত?

শফিকুল ইসলাম
১০ মার্চ ২০২১, ২০:৩৯আপডেট : ১০ মার্চ ২০২১, ২১:২৮

রোজা এলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো ছিল ব্যবসায়ীদের  দীর্ঘদিনের একটা প্র্যাকটিস। এখন সেই প্র্যাকটিস বদল করেছেন তারা। এখন আর রোজার সময় পণ্যের দাম বাড়ে না। যা বাড়ার তা রোজার এক-দেড় মাস আগেই বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা ঘরে তোলেন ব্যবসায়ীরা। ফলে রোজার সময় বাড়তি মুনাফাযুক্ত পণ্যমূল্যে স্থির থাকে বাজার। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতারা অনেকেই মনে করেন, রোজার মাসে পণ্যের দাম বাড়েনি। আর এ কথাটিই বারবার সুযোগ পেলে সরকার তথা বাণিজ্যমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা, ‘এ বছরও কিন্তু রোজার সময় পণ্যের দাম বাড়েনি। রোজার মাসে পণ্যের দাম না বাড়ানোর সরকারের অনুরোধ আমরা রক্ষা করেছি।’

সূত্র জানায়, আসলে বাজার পরিস্থিতি ভিন্ন। রমজানকে সামনে রেখে এরমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলের। একই অজুহাতে দাম বেড়েছে মসুর ডাল ও চিনির। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমদানি পণ্য না হলেও দাম বেড়েছে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের। এতসব পণ্যের দাম বাড়ার কারণ একটাই, সামনে রোজা। আর রোজার সময় এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে। ফলে সেই চাহিদা পুঁজি করে দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে অনৈতিক মুনাফা নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখন এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথাবার্তা বললেও রোজা শুরু হতে হতে এসব আলোচনাও কমে যাবে। ফলে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতীতের ন্যায় এবারও বলবে—‘এ বছরও রোজার সময় কোনও পণ্যের দাম বাড়েনি।’

তবে রোজাকে সামনে রেখে সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, রোজার সময় প্রয়োজনীয় সকল প্রকার নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যগুলো, বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুরের পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তোলা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। এসব পণ্যের মজুত ও সরবরাহে কোনও সংকট হবে না।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। 

এদিকে আগামী রমজানকে সামনে রেখে অতি প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, খেজুর, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ—এই ছয়টি নিত্যপণ্যের মজুত, সরবরাহ ও এর যৌক্তিক মূল্য নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কোনোভাবেই হোক সংশ্লিষ্টদের রমজানের আগেই এসব নিত্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য, সরবরাহ ও মজুত পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখারও কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে কোনও আলোচ্যসূচি না থাকলেও গত মঙ্গলবার (৯ মার্চ) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে জানতে চেয়েছেন, রমজানে প্রয়োজনীয় এই ৬টি নিত্যপণ্যের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরবরাহ, যৌক্তিক মূল্য ও পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে? রমজানের জন্য কবে নাগাদ এসব পণ্য সরকারের হাতে এসে পৌঁছাবে এবং বাজারে ছাড়া হবে? 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদকে জানিয়েছেন,  রোজায় অতি প্রয়োজনীয় ছয়টি পণ্যের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল, খেজুর ও পেঁয়াজ—এই ছয়টি পণ্য টিসিবির মাধ্যমে আমদানি করা হবে। রোজায় অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে এরইমধ্যে মাঠ জরিপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে বিপণন সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির বিষয়টিও নজরদারিতে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজানে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা ও খেজুরের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এর বাইরে মসুর ডাল, বেসন, পেঁয়াজ, ময়দাসহ কয়েকটি পণ্যের চাহিদাও কিছুটা বাড়ে। এরমধ্যে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে সয়াবিন, পামসহ ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। রোজায় এ চাহিদা ২০ শতাংশের মতো বাড়ে। একই অবস্থা চিনির ক্ষেত্রেও। বছরব্যাপী দেশে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে রমজানে চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে। চিনির মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়।

জানা গেছে, সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রোজার সময়ের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১৭ হাজার টন ডাল, ৬০০ টন ছোলা, আড়াই কোটি লিটার ভোজ্যতেল, ১৩ হাজার টন চিনি ও অন্যান্য পণ্যের মজুত নিয়ে সুলভ মূল্যের বাজার ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভোজ্যতেলসহ আরও কিছু পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। টিসিবি বলেছে, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণ মজুত সক্ষমতা নিয়ে তারা রোজার আগেই মাঠে নামছেন। আরও কিছু পণ্যের মজুত বাড়াতে বিভিন্ন উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, রোজায় বাজারে ছাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্যমন্ত্রী ও সচিব সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন টিসিবি সংগ্রহের প্রস্তুতি নেবে এবং বাজার পর্যালোচনা করে দাম নির্ধারণ করবে। টিসিবির সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পণ্য মজুত বাড়ানো হচ্ছে এবং পবিত্র শবেবরাত থেকে বিক্রি শুরু হবে। এ বছর সারাদেশে প্রায় ৫০০টি খোলা ট্রাকে  পণ্য বিক্রি করা হবে। তবে তা যথেষ্ট কিনা এবং টিসিবির এই উদ্যোগ বাজারে তেমন প্রভাব ফেলবে কিনা, তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারা দেশের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সব আমদানিকারককে নিয়ে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। অচিরেই টিসিবি এসব পণ্য নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বাজার শুরু করবে। অনলাইন মার্কেটেও কিছু পণ্য বিক্রি করা হতে পারে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাজারে ক্রেতার আচরণেও পণ্যের দাম বাড়ে।’ তিনি ক্রেতাসাধারণকে অতিরিক্ত পণ্য কিনে বাজারকে চাপে না ফেলার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘রমজানের সময় আমাদের বাজারে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ২৫ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে যাচ্ছি টিসিবির মাধ্যমে, যাতে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো যেতে পারে।’   

টিপু মুনশি আরও বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ বেড়ে গেছে। আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। এই বাজারটা আমাদের ওপর নির্ভর না। ভোজ্যতেলের বাজার আন্তর্জাতিক বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। টিসিবি সাহায্য করবে নিম্ন আয়ের মানুষকে। পেঁয়াজ আমাদের দেশে ৭৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। বাকি ২৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। আশা করছি, রমজানের আগেই আমদানিনির্ভর পণ্য সবকিছু এসে যাবে। রমজানের সময় সমস্যা যেন না হয়, সে প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা রমজানের আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এটা ব্যবসায়ীদের নতুন কৌশল হতে পারে, এ বিষয়ে আমি একমত। সুযোগ পেলে তো ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ নেবেনই। আমরা চেষ্টা করবো, দয়া করে ভিত হয়ে অতিরিক্ত কেনাকাটা যেন না করি। কেনাটা স্বাভাবিক রাখুন। কেনাকাটা সীমানার মধ্যে রাখুন।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী