X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শেষে কমিটির ক্যাম্পাস ত্যাগ

রংপুর প্রতিনিধি
১৫ মার্চ ২০২১, ০০:১৯আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২১, ০০:২৮

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে আসা কমিটি সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে গেছে। রবিবার (১৪ মার্চ) বেলা সোয়া ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে নয় ঘণ্টা কমিটির প্রধান ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্রের নেতৃত্বে আসা কমিটি তদন্ত করে।

যাওয়ার সময় ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র সাংবাদিকদের জানান, ৩০ জনেরও বেশি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ কর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এটা সময় লাগবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া হবে।’

তবে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ভুয়া ভাউচার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়মের দালিলিক প্রমাণপত্র দেখে হতবাক হয়েছেন কমিটির সদস্যরা। একজন উপাচার্য কীভাবে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করতে পারেন তা প্রশ্ন করেছেন তারা। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সলোয়া ডীনা, ট্রেজারার অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কমিটির সদস্যরা।

এদিকে তদন্ত চলাকালে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তুষার কিবরিয়ার নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে যান। সেখানে তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিল। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে দুর্নীতিবাজ, অনিয়মের হোতা আখ্যায়িত করে তাকে দ্রুত বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। পরে তদন্ত কমিটি ছাত্রলীগের দুই নেতাকে ভেতরে ডেকে নিয়ে তাদের অভিযোগ শোনেন বলে জানা গেছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা এর আগে বেলা সোয়া ১২টায় দুটি গাড়িতে করে ক্যাম্পাসে আসে তদন্ত কমিটি।  তারা গাড়ি থেকে নেমে প্রশাসনিক ভবনের পেছনের গেট দিয়ে সিন্ডিকেট সভা কক্ষে যান। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র। তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইউজিসি উপাচার্যের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন– ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আবু তাহের। তদন্ত কমিটির সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র সহকারী সচিব জামাল উদ্দিন এবং সহযোগিতা করছেন সিনিয়র সহকারী সচিব আমিনুল ইসলাম।

তদন্ত কমিটির প্রধান ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, ‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হচ্ছে– ক্যাম্পাসে না আসা, যে পদে নিয়োগ দেওয়া দরকার সেখানে নিয়োগ না দিয়ে অপ্রয়োজনীয় পদে বেশি বেশি নিয়োগ দেওয়ার নামে বাণিজ্য করা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়ম ভঙ্গ করে বিভিন্ন অপকর্ম করাসহ অনেক বিষয় আমরা তদন্ত করবো। এ ছাড়াও অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আরও ১২০টি অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে।’

দুপুর পৌনে ১টা থেকে তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমেই তারা আলাদাভাবে সিন্ডিকেট সভা কক্ষে উপউপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সলোয়া ডীনা, রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও ট্রেজারার অধ্যাপক হাসিবুর রশীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে ফাইলপত্র দেখতে চায় কমিটি। বেশ কয়েকটি ফাইলও তারা দেখেন। এ ছাড়া উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সময় নিয়োগ দেওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র , সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কিত কাগজপত্র পরীক্ষা করেন তারা।

এদিকে দীর্ঘ ১০ মাস পর ক্যাম্পাসে আসেন রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও ট্রেজারার অধ্যাপক হাসিবুর রশিদ। তারা তদন্ত কমিটি আসার খবর পেয়ে আগের দিন রংপুরে আসেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান জানান। এ ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়োগ পাওয়ার পর ট্রেজারার একবার মাত্র ক্যাম্পাসে আসেন। আর রেজিস্ট্রার দু-তিন বার আসলেও সকালে এসে বিকালে চলে গেছেন। তারা দুজনেই ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে উপাচার্যের সঙ্গে বসেন।’ রেজিস্ট্রার ও ট্রেজারার দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে এসে প্রশাসনিক ভবনে বসার ব্যাপারে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তারা রাজি হননি।

এরপর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সহ সদস্যরা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আলাদা আলাদাভাবে ডেকে তাদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগের ফাইলপত্র দেখেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে জানা গেছে। দুপুর ২টার পর অধিকার সুরক্ষা পরিষদ, শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা বলে তদন্ত কমিটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন– শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক গাজী মাযহারুল আনোয়ার, অধিকার সুরক্ষা পরিষদের তরিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমানসহ অন্যরা। তারা উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণসহ ৭৫৯ পৃষ্টার একটি অভিযোগ সম্বলিত বাইন্ডিং করা কপি তদন্ত কমিটির কাছে প্রদান করেন। অধিকার সুরক্ষা পরিষদের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিনিধিকে জানান, তদন্ত কমিটি দালিলিক প্রমাণসহ অভিযোগনামা দেখে হতবাক হন। তারা প্রশ্ন করেন– একজন উপাচার্য এমন দুর্নীতি করেন কীভাবে?

এদিকে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা শনিবার ১১১টি অভিযোগের শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছি। এখন তা ১২০টিতে দাঁড়িয়েছে। উপাচার্য একেকবার একেকটা অনিয়ম আর দুর্নীতি করেন, ফলে দুর্নীতির সংখ্যা বাড়ে। তিনি যতদিন দায়িত্বে থাকবেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়তে থাকবে।’

তিনি আরও জানান, সবগুলো অভিযোগের দালিলিক প্রমাণ আমরা তদন্ত কমিটির কাছে দিয়েছি। দ্রুত তাকে অপসারণ করে আইনের আওতায় আনা হোক। সেই সঙ্গে উপাচার্যের দুর্নীতির সহযোগীদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!