X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধুর সরকারের অন্য মাত্রার দলিল

সৈকত হাবিব
১৭ মার্চ ২০২১, ১০:০৩আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২১, ১০:০৩

স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে সুপ্রচুর বই রচিত হয়েছে। উপরন্তু বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে ঘিরে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থেও নির্বিচারে, বাছবিচারহীনভাবে বহু বই প্রকাশিত হয়ে চলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে খুব কম বই-ই মানোত্তীর্ণ কিংবা বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ সুবিচারকারী। আবার স্বাধীনতা-পূর্বকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে সরবে-নীরবে চর্চা থাকলেও এবং তাঁকে নানাভাবে মূল্যায়ন করলেও সে তুলনায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাথমিক পর্ব ও বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল নিয়ে বইয়ের সংখ্যা যেমন খুব কম, তেমনি নিরপেক্ষ, বিশ্লেষণী ও অন্তরঙ্গ বই একেবারেই হাতেগোনা। এ বাস্তবতায় যেকটি বই আকর হিসেবে বিবেচিত, এর অন্যতম ড. মফিজ চৌধুরী রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়’। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের ভূমিকা, প্রবাসী সরকারের কার্যক্রম ও কূটনীতি, যুদ্ধ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের ভেতরকার প্রত্যক্ষ ও অম্লমধুর নানা ঘটনার নিবিড় বর্ণনার কারণে বইটি ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ। প্রকাশকের ওয়েবসাইটে বইটির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে বলা হয়েছে : ‘ড. মফিজ চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়’ বইটির প্রায় সমান দুটি ভাগ : ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়’। বইটির সূচনা হয়েছে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের সানন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির বর্ণনা দিয়ে। তারপর লেখক ফিরে গেছেন নির্বাচনপূর্ব প্রচারণায় ব্যাপক জনসমর্থনের প্রসঙ্গে। যে বৃদ্ধা চোখে দেখতে পান না, তিনিও নৌকার একঝলক দেখার জন্যে ঘরের প্রাঙ্গণে পরিপাটি আয়োজন করেছেন। তিনি স্মরণ করেছেন সেই মহিলাকে যিনি পরিশ্রান্ত কর্মীদের ক্লান্তি দূর করেছিলেন বদনার পানি ও বাতাসা দিয়ে এবং কলতলায় কলসি ভরতে আসা সেই মহিলাকে যিনি দুই হোন্ডাযাত্রীকে পরম স্নেহভরে দুধ মুড়ি খেতে দিয়ে সরে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় তাঁর দুই বছরব্যাপী অবস্থানের ওপর স্মৃতিধর্মী এই রচনাতে এমন অনেক কথা রয়েছে যা পাঠককে কৌতূহলী করবে। মন্ত্রী হিসেবে তাঁর কার্যকলাপের বাইরেও নানা বিষয়ে তাঁর ভাবনাচিন্তার পরিচয় আছে, যা থেকে দেশপ্রেমিক এই বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও রাজনীতিকের পরিচয় মেলে। বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় এই বইটি একটি মূল্যবান উপাদানের আকর।’

বইটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালে, লেখকের জীবৎকালে। প্রকাশ করে ইউপিএল। দীর্ঘদিন অমুদ্রিত থাকার পর একই প্রকাশকের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে ২০১৮-ও নভেম্বরে।

প্রসঙ্গত, মফিজ চৌধুরীর জন্ম ১৯২০ সালে, জয়পুরহাটে। ছিলেন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। ১৯৪৯ সালে আমেরিকার পেনিসেলভেনিয়ার রিহাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। সেখানে কিছুকাল শিক্ষকতা এবং পরে জাতিসংঘে কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৫১ সালে দেশে ফিরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শিল্প বিভাগে উপপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে চাকরি ত্যাগ করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইস্ট পাকিস্তান সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ’। শিল্পোদ্যোক্তার পাশাপাশি ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। লেখালেখি ও শেক্সপিয়রের অনুবাদকরূপেও তিনি বিদ্বৎমহলে সুপরিচিত। পরে দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী হিসেবে রাজনীতিতেও সক্রিয় হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নিজে তাঁকে প্রার্থী মনোনীত করেন এবং তিনি জয়পুরহাট-পাঁচবিবি-ক্ষেতলাল নির্বাচনী এলাকা থেকে গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে দেশে-বিদেশে ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভার তেইশতম সদস্য মনোনীত হন। বিদ্যুৎ-প্রাকৃতিক সম্পদ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা-আণবিক শক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। ১৯৭২-১৯৭৪ পর্যন্ত মাত্র দুই বছরের মন্ত্রিত্বকালে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দেশের স্বার্থ রক্ষা করে তেল-গ্যাস আহরণে বড় ভূমিকা রাখেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এবং সৎ ও কর্মোদ্যমী হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য, সরকারে থাকা কিছু ব্যক্তির অসহযোগিতা ও আমলাতান্ত্রিক তিক্ত জটিলতার সম্মুখীন হন।

বইটিতে যেমন তাঁর দেশপ্রেম, কৃতজ্ঞতাবোধ ও সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসার পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি ফুটে ওঠে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের হঠকারিতা, দীর্ঘসূত্রিতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কথা; আমলা ও নীতিনির্ধারকদের রেষারেষি, ফাইল টানাটানি এবং অপ্রয়োজনীয় নানা কার্যকলাপের বিবরণ।

একজন সুশিক্ষিত, অনুভূতিশীল ও সুবিবেচক মানুষ হিসেবে বইটিতে তিনি তুলে ধরেছেন বাংলার অগণন মানুষ ও তাদের স্বপ্ন ও সংগ্রামের কথা; বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্ব, অনিঃশেষ দেশপ্রেম, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের অন্ন-বস্ত্র সংস্থানে সার্বিক প্রচেষ্টার কথা। অন্যদিকে তুলে ধরেছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের সুযোগসন্ধান ও স্বার্থপরতার কথা; অশুভ ও দুর্নীতিবাজ শক্তিবলয়ের বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ফেলা ও তাঁকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার কথা। বিশেষত নানা সীমাবদ্ধতার পরও তাঁর মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ উত্তোলন ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সাফল্য দেখানোর পরও তৎকালীন পরিকল্পনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্ত করা ও দেশের বিরুদ্ধে করেছেন এর বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন তিনি বইটিতে।

এ প্রসঙ্গে তাঁর রচনা থেকেই, যদিও একটু দীর্ঘ, আজকের বাস্তবতায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভেবে, উদ্ধৃত করা যাক :

‘‘শেখ সাহেবকে একদিন বললাম, ‘বঙ্গবন্ধু আপনি তো আমাকে দিয়েছেন আসমানের হাওয়া, নদীর পানি আর বাংলার পলিমাটি। আমি কিন্তু আপনাকে পেট্রোলিয়াম তেল দেব।’

বঙ্গবন্ধু বিস্ময়ে বললেন, ‘তেল? তেল কোথায় পাবেন?’

—‘আছে, স্যার, এই বাংলার মাটির নীচেই আছে; সম্ভবত বঙ্গোপসাগরের তলায়, নিশ্চয়ত।’

“কথা হচ্ছিল (পুরাতন) গণভবনে, অক্টোবর ’৭২ সালে, কিন্তু এর পূর্বের পটভূমি বলা দরকার। প্রায় দুমাস ধরে আমি ভূতত্ত্ব জরিপ বিভাগের প্রধান মেসবাহউদ্দিন আহমদ ও খনিজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. ফৈয়াজ হুসেন খানের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে বা সন্ধ্যায় বাংলাদেশের জিওলজী সম্পর্কে আলোচনা করছি। আমি জিওলজীর ছাত্র ছিলাম না। কাজেই জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্তগ্রহণ করার পূর্বে এই দুই ভূ-বিজ্ঞানীর কাছে আমি ভূতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করছিলাম। প্রাথমিক ভূতত্ত্ব থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ভূ-স্তরের গঠনশৈলী ও সম্ভাব্য তৈলবাহী-শিলার অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণে তাঁরা দুজন যথেষ্ট পাণ্ডিত্য ও দক্ষতার সঙ্গে আমাকে সাহায্য করেন।

“বহু পরিশ্রম করে আমরা বার্মা শেল কোম্পানির প্রথম যুগের তেল সন্ধানসংক্রান্ত কিছু প্রাচীন তথ্যও যোগাড় করতে পেরেছিলাম। উল্লেখ করা যায় যে, চট্টগ্রামের উপকূলে বার্মা শেল কোম্পানি ১৯১০ সালে কিছুদিন তেল অনুসন্ধান করেছিল এবং সে কারণেই খানিকটা জরিপ কাজও করেছিল। মন্ত্রণালয়ে তেল অনুসন্ধান বিষয়ে কোন নথিপত্র পাওয়া গেল না, যদিও স্বাধীনতাপূর্ব আমলে এ অঞ্চলেও কিছু জরিপ কাজ হয়েছিল। সেই যুগের প্রতিষ্ঠান অয়েল গ্যাস ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (ওজিডিসি) থেকে বলা হলো, কাগজপত্র সবই করাচী চলে যেত; কাগজপত্র অর্থে সার্ভে ম্যাপ, ডাটা ও অন্যান্য টেকনিক্যাল তথ্যাদি। কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে কিছু তথ্য পাওয়া গেল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস হলো যে, বাংলার বরাইল শিলাস্তরে ক্রুড পেট্রোলিয়াম তেল পাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর, বিশেষত সিলেটের পাহাড়ী অঞ্চলে, যেমন পাথারিয়া এলাকায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বসীমানায় উঁচু উঁচু খাড়া পাহাড় শ্রেণীর খাঁজে। এ অঞ্চলে কয়েক স্থানে অয়েল সিপেজ-এর খবরও পাওয়া গেল। আমরা উৎসাহিত হয়ে উঠলাম এবং তেল অনুসন্ধান কার্যক্রম আমাদের টপ প্রায়োরিটি লিস্টে প্রথম স্থান অধিকার করল।

“ইতিপূর্বে জয়পুরহাট-জামালগঞ্জে চুনা পাথর ও কয়লা উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও সম্মতিসূচক অনুজ্ঞা সত্ত্বেও পরিকল্পনা কমিশন এই প্রকল্পে কাজ করবার জন্য টাকা বরাদ্দ করেননি। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বব্যাপী এনার্জি-সঙ্কটের ছায়া যখন ঘনিয়ে আসছে তখন আমাদের পরিকল্পনা কমিশন তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন, অথবা ভূগর্ভস্থ কয়লা সম্পদের দিকে যথাযোগ্য দৃষ্টি দিতে দুঃখজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ অবস্থায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবার জন্য বিভাগীয় সচিবকে কয়লা উত্তোলনবিষয়ক কার্যক্রমের সঠিক ও সর্বক্ষণিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল এবং তেল উত্তোলনের পরিকল্পনা রচনার বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বিভাগীয় যুগ্মসচিব হেদায়ত আহমদকে।

“প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান প্রভৃতি দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের অনুরোধ করা হলো, তাঁরা যেন নিজ নিজ এলাকায় তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের নাম আমাদের জানান। আরো অনুরোধ করা হলো, তেল উত্তোলনসংক্রান্ত প্রচলিত আইন, কাঁচাতেলের অনুসন্ধান, উত্তোলন, রিফাইনিং এবং বিতরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রের টেকনিক্যাল ও ব্যবসায়িক তথ্যাদি, যতদূর পাওয়া সম্ভব, যেন জানান। কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার এবং ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খুররম খান পন্নী যথেষ্ট আগ্রহ সহকারে বহু তথ্য পাঠিয়েছিলেন। এসব প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার পর আমরা আবার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের বললাম, বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে ও কন্টিনেন্টাল শেলফে তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলন করার জন্য আমরা ব্লকসমূহ লিজ দিতে চাই, এ কথা তাঁরা যেন নিজ নিজ দেশের বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এবং চেম্বার অব কমার্সকে পত্রযোগে জানান। যেহেতু বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, ব্যক্তিগত সাক্ষাতেও বাধা ছিল না। আন্তর্জাতিক তেলসংক্রান্ত জার্নাল বা ফাইনান্সিয়াল টাইমস জাতীয় পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া সঙ্গত ছিল। কথাটি যে আমাদের মনে একেবারে উদয় হয়নি তা নয়; তবে ঐ বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে ব্যয় সংকোচের জন্যই আমরা রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করাই সঙ্গত মনে করেছিলাম। আমরা ইপ্সিত ফলও পেয়েছিলাম। চল্লিশটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান, যাঁরা তেল অনুসন্ধান কর্মে নিরত, আমাদের নিকটে তাঁদের প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। এইসব কর্মকাণ্ডে যখন প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় ব্যস্ত, সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু জাপান সফরে গেলেন। অন্যান্যদের মধ্যে সহযাত্রী ছিলেন প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চিফ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী। যথারীতি আমরা সবাই এয়ারপোর্টে তুলে দিতে গেলাম। দেখা গেল বাজনা একটু বেশি হয়েছে যেন। যাঁরা দলের সঙ্গে জুটেছেন তাঁদের অনেকেই সঙ্গে না থাকলেও কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না। দু-একটি ক্ষেত্রে বরঞ্চ মনে হলো পোশাকে ও চালচলনে; স্বদেশের বিরূপ প্রচার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

“বঙ্গবন্ধু যাওয়ার ক’দিন পর, দৈনিক কাগজগুলোতে এ সংবাদটা বেরুল বঙ্গোপসাগরে তেল সন্ধানে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার জাপানকে এককভাবে অধিকার দিয়েছেন। সংবাদটি পড়ে আমি গুম হয়ে গেলাম।

“বঙ্গবন্ধু ফিরলেন। আমি প্রাইভেট সেক্রেটারি (জাহাঙ্গীর সা’দত)কে বললাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার একটা এ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে। এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া আমি কখনও তাঁর কক্ষে উপস্থিত হতাম না।...নির্দিষ্ট সময়ে নতুন বঙ্গভবনে আমি ঢুকলাম বঙ্গবন্ধুর কক্ষে। ...দৈনিক কাগজের ঐ পাতাটি বঙ্গবন্ধুর সামনে মেলে ধরলাম। বললাম, ‘আপনি জানেন, আমরা বঙ্গোপসাগরের সাত-আটটি দেশকে আনার চেষ্টা করছি, তবু, এ সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?’

“বঙ্গবন্ধু বললেন— আমি জানি না সব। ড. নূরুল ইসলাম আর কামাল [ড. কামাল হোসেন] করেছে। আপনি কামালকে একটা ফোন করেন।

“আমি বললাম—‘আমি আপনাকেই শুধু বলতে পারি। আর কাউকে না।’

“সম্ভবত আমি একটু উত্তেজিত হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু ইতিমধ্যে চা, বিস্কুট আনবার আদেশ করেছেন। উষ্ণ চায়ের কাপে উত্থিত ধূম্রকূণ্ডলীর মধ্যে যেন এক যাদুবলে উত্তেজনা প্রশমিত হলো। সাব্যস্ত হলো, বঙ্গোপসাগরে জরিপ ও এলাকা বণ্টন বিষয়টি কেবিনেট আলোচিত হবে।

“কয়েকদিন পরে কেবিনেট মিটিং-এ আলোচনা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে তেল অনুসন্ধানসংক্রান্ত প্রাথমিক জরিপ কর্মটি এককভাবে জাপানকে দেয়া হবে কিনা। প্ল্যানিং কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান তাঁর অভিমত পেশ করলেন জাপানকে একক নিযুক্তির পক্ষে।...ক্ষুব্ধ হয়ে ভাবছিলাম, একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অযথা একটা ঝগড়া সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং এমন সব লোকের দ্বারা যাদের প্রথম কর্তব্য ছিল আসন্ন এনার্জি সঙ্কট থেকে বাঁচবার জন্য একটা জরুরি ও সুষ্ঠু পন্থা গ্রহণ করা। আমার পালা এলে আমি বললাম, বঙ্গোপসাগরকে আমরা সাত-আটটি এলাকায় ভাগ করে এক একটি এলাকা ভিন্ন ভিন্ন দেশ, যথা আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের তেল অনুসন্ধানকারী সংস্থাকে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইজারা দিই, তাহলে সেটিই হবে সর্বোত্তম ব্যবস্থা। কারণ, কোন এক এলাকায় যদি এক দেশ বলে তেল নেই, অন্য এলাকায় অন্য দেশের সংস্থা হয়ত বলবে, তেল আছে। সমগ্র বঙ্গোপসাগরে তৈল প্রাপ্তির সম্ভাবনা বা অসম্ভাব্যতা সম্পর্কে কেউ একক রায় দেবার অধিকারী হবে না।

“প্রায় দীর্ঘ দু’ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর, বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ডক্টর সাহেব যা বলেছেন, তাই হবে।’ যাঁরা বঙ্গোপসাগরটি এককভাবে কোন দেশকে তুলে দেবার পক্ষপাতী ছিলেন, বলা বাহুল্য, সেসব বন্ধুরা ক্ষুব্ধ হলেন।...

“এই সময় আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম, স্যার, তেল অনুসন্ধান একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়। যদি তেল পাওয়া যায় সমগ্র জাতি একটা চমকপ্রদ এবং অভূতপূর্ব সমৃদ্ধিও গৌরব লাভ করবে, যাতে আমাদের আর্থনীতিক ও সামাজিক কাঠামো রাতারাতি বদলে যাবে। কাজেই, আমার প্রস্তাব, একটা কেবিনেট কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তিনি আমার কথায় সন্তোষ প্রকাশ করলেন। কমিটি গঠন করা হলো নিম্নলিখিত সদস্যগণকে নিয়ে : ১. সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী), ২. জনাব তাজউদ্দীন আহমদ (অর্থমন্ত্রী), ৩. জনাব মনোরঞ্জন ধর (আইনমন্ত্রী), ৪. ড. কামাল হোসেন (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) এবং ৫. প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, অর্থাৎ আমি।

“প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক্রমে কমিটি এই সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করেন :

(ক) আনুমানিক ৫,০০০ বর্গমাইল এলাকা বিশিষ্ট সাতটি ব্লকে বঙ্গোপসাগরকে ভাগ করা হবে।

(খ) প্রস্তাবদানকারী ৪০টি বিদেশি তৈল সন্ধানী সংস্থার মধ্য থেকে ছয়টি কোম্পানি বাছাই করে নিয়ে ছয়টি ব্লক ইজারা দেয়া হবে। (সপ্তম ব্লকটি একটি সম্ভাব্য বাঙালী প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার জন্য বিবেচনা করা হবে এই যুক্তিতে রিজার্ভ রাখা হয়; এই বাঙালী প্রতিষ্ঠানের কর্তা একজন ধনাঢ্য প্রভাবশালী বাঙালী, শেষ পর্যন্ত বাঙালী প্রতিষ্ঠানটি ইজারাগ্রহণ করেননি)।

(গ) ইজারাপত্রের খসড়া শর্তাদি নিরূপণ (প্রডাকশন শেয়ারিং ভিত্তিতে) ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তুত হবে, কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

“তেল উত্তোলনের শর্তাদি তৈরি করার জন্য যুগ্মসচিব হেদায়েত আহমেদ অসম্ভব পরিশ্রম করছিলেন, সহকর্মী ছিলেন আহমদ রেজা, প্রাক্তন ফ্লাইং অফিসার, মুজিবনগরে ইয়ুথ ক্যাম্পের ডিরেক্টর। উভয়েই উৎসাহী ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিত্ব। এদের নিয়ে যে ক্ষুদ্র কর্মীদলটি আমরা গড়ে তুলেছিলাম, তার মাধ্যমেই তেল উত্তোলনের যতটুকু কাজ করা গেছে, তা সুচারুভাবে ও সততার সঙ্গে করা সম্ভব হয়েছে। যদিও অবশ্য পরবর্তীকালে কর্মচক্রে তেল আমাদের ভাগ্যে আর জোটেনি।

“এই সময়ে তেল উত্তোলনের দরখাস্তকারী তেল কোম্পানিগুলোর ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিধি আমাদের দেশে আসতে লাগলেন সরেজমিনে সবকিছু দেখতে।...দিনদিন এসব লোকের ভিড় বেড়ে যাচ্ছিল, তাই দেখে আমি একটা স্থির বিশ্বাসে এসে গেলাম যে আমাদের সাগরে অবশ্যই তেল আছে। নতুবা ইউরোপ-আমেরিকার মানুষেরা এত ভিড় করবে কেন? পূর্বে সংগৃহীত কিছু তথ্য ও উপাত্ত ড্যাটা আমাদের বিশ্বাসকে যে কত দৃঢ় করে তুলেছিল, কতগুলো ঘটনা থেকে তা অনুমান করা যেতে পারে।

“প্রডাকশন শেয়ারিং শর্তাবলী সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল না। দু’জন অফিসারকে সে জন্য ইন্দোনেশিয়ায় পাঠান হয় সেখানকার জাতীয় তেল কোম্পানি ‘পার্টমিনা’র সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য। রাষ্ট্রদূত খুররম খান পন্নী বিশেষ সহায়তা করেন এই আলোচনা স্থিরীকরণের জন্য। ভারতবর্ষে থেকে একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার অভিজ্ঞ অফিসার এসেছিলেন পরামর্শ দিতে। এদের সাহায্য ও পরামর্শ আমাদের বেশ কাজে এসেছিল।... নিয়ম করা হয়েছিল, এসব কাগজপত্র টাইপে যাবে না, সচিব থেকে মন্ত্রী অবধি সবাই হাতে নোট লিখবেন এবং ফাইলটি জেনারেল আপিসে যাবে না, যাতে শর্তাবলীর খসড়া বা তেল অনুসন্ধান সংক্রান্ত কোনো সংবাদ বাইরে প্রকাশ না হয়। বলা বাহুল্য, এইসব সতর্কতা ও কড়াকড়ির ফল ভালো হয়েছিল। আমরা সমকালীন দুনিয়ার সবচেয়ে লাভজনক শর্তে সমুদ্র অঞ্চল ইজারা দেবার লেটার-অব-ইনডেন্ট সবই করাতে পেরেছি। বিদেশের সাময়িকীতে আমাদের কর্মধারার প্রশংসা করে মন্তব্য লেখা হয়েছিল।

“বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে প্রডাকশন-শেয়ারিং-এর শর্ত নিয়ে আলোচনা চলছে। জুনিয়র এবং এটলান্টিক রিচফিল্ডের ভাইস-প্রেসিডেন্টদ্বয় এ সময় ঢাকায় এসেছিলেন এবং সচিব পর্যায়ে দর কষাকষি করেছেন। তাঁরা বঙ্গোপসাগরের দুটি নির্দিষ্ট ব্লক ইজারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রথমত তাঁরা ৭০ : ৩০ (আমাদের ৭০, তাঁদের ৩০ ভাগ) অনুপাতে তেলের শেয়ার দিতে চেয়েছিলেন।

“পরদিন, অন্য কোম্পানিকে ডাকা হলে তাঁরা এসে বাংলাদেশের শেয়ারটা আরো একটু বাড়িয়ে দিলেন। পরের মিটিং-এ অন্য এক তেল কোম্পানি বাংলাদেশের শেয়ারটা আবার একটু বাড়ালেন। এমনিভাবে একটা জেদাজেদির ফলে, ইউনিয়ন ও এটলান্টিক কোম্পানি যখন ৭৬ :২৪ অনুপাতে রাজি হলেন তখন আমরা তা মেনে নিলাম। মজার ব্যাপার করলেন মার্কিন কোম্পানি এটলান্টিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট রবার্ট এইচ এল স্টোন; আমার সামনেই কোটের পকেটটি ঝেড়ে উল্টো করে হেসে বললেন—‘আর কিছুই রইল না।’ প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসলাম। বঙ্গোপসাগরে তেল উত্তোলনে বিদেশি সংস্থাগুলো কতটা আগ্রহী ছিলেন, এসব ঘটনায় তা সম্যক বোঝা যায়।

“উত্তোলিত তেলের ভাগাভাগির অনুপাত স্থির হবার পর বাকি রইল শুধু আইনগত ও ব্যবসাগত শর্তাবলী। সেগুলো বিশেষ জটিল ছিল না উভয়পক্ষের জন্য। আমরা আর একটা পয়েন্ট তুললাম—সিগনেচার বোনাস বা দস্তখতী বোনাস। বাংলাদেশের সমুদ্রে নামার আগে একটা সেলামী দিতে হবে। দস্তখতী বোনাসের হার অমীমাংসিত রয়ে গেল। খসড়া চুক্তিতে দেখলাম প্রতিবর্গ মাইলে ৫০০ মার্কিন ডলার দাবি করা হয়েছে। বিকেল হয়ে এসেছিল; বললাম আগামীকাল সকালে এটা স্থির হবে।

“বাড়ি ফিরে দস্তখতী বোনাসের চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইলাম। অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন ভাই পাঁচ-সাতদিন ধরে টেলিফোন করছেন। তাঁকে আমি বলে আসছিলাম যে দস্তখতী বোনাসে কিছু নগদ টাকা পাওয়া যাবে, বাংলাদেশের একটি পয়সাও খরচ না করে। শুধুমাত্র বঙ্গোপসাগরের ঢেউ গুনে এ টাকা তুলে দেব বলে আমি একটু রসিকতাও করেছিলাম এবং ‘নদীর ঢেউ গুনে টাকা তোলা’ সংক্রান্ত একটি প্রসিদ্ধ প্রাচীন কাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করেছিলাম। এখন অর্থমন্ত্রীর তাগাদায় বললাম, এক সপ্তাহ পরে জানাতে পারব। ১৯৭৩ সালের বাজেটে এই টাকাটা অর্থাৎ ৩০ মিলিয়ন ডলার ‘দস্তখতী বোনাস’ হিসেবেই আয়কৃত দেখান হয়েছে। পরে জেনেছিলাম, দেশের অর্থসঙ্কট এমন পর্যায়ে এসে গিয়েছিল যে সম্ভাব্য দশ-বিশ মিলিয়ন ডলার প্রাপ্তিও অর্থ দপ্তরের নিকট এক বিরাট পরিত্রাণ তথা বেহেস্তী সওগাত হয়ে দেখা দিয়েছিল।

“যাই হোক সে রাতে ঘুম হলো না। ৫০০ ডলার হিসাবে ৩৫,০০০ বর্গমাইলে প্রায় সাড়ে সতের মিলিয়ন ডলার হয়; যদি রেট বাড়াই, সম্ভাব্য টাকা বাড়ে বটে কিন্তু ইয়াংকীরা যদি রাজি না হয়, তবে? তবে?

“পরদিন যথারীতি সকাল সাড়ে আটটায় আপিস গেছি। কাগজপত্র নাড়াচাড়া করছি বটে তবে মন বসছে না। দস্তখতী বোনাস। বেলা দশটা নাগাদ হেদায়েত আহমদ এলেন আমার ঘরে, হাতে শর্তাবলীর খসড়া। দস্তখতী বোনাস প্রতি বর্গমাইলে ৫০০ ডলার।

“আমি একটা অদ্ভুত কাণ্ড করলাম, কেন করলাম জানি না। আমার কলমটি তুলে ধীরে ধীরে ৫০০ সংখ্যাটি কেটে তার উপরে লিখলাম ১,০০০ অর্থাৎ প্রতি বর্গমাইলে ১,০০০ ডলার দস্তখতী বোনাস চাই। হেদায়েত আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘স্যার হাজার ডলার করলেন! একেবারে ডবল? ওরা কি রাজি হবে? ওদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই আমরা ফাইনাল খসড়া তৈরি করেছিলাম। আমি বললাম, ‘আই এ্যাম গ্যাম্বলিং। দেখুন রাজি হতেও পারে।’...আমি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শান্তি পাচ্ছিলাম না। সচিব পর্যায়ের অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের কথা না শুনে বোনাসের রেট ডবল করে কী একেবারে গঙ্গাডুবি হব নাকি? দেখা যাক, দেখা যাক—এ রকম একটা ভাব নিয়ে সেদিন দুপুর অফিসেই কাটালাম। কারণ বিকেল ৪টায় ইউনিয়ন অয়েল ও এটলান্টিক রিচফিল্ডের সঙ্গে সচিবস্তরে বৈঠক হবে স্থির হয়েছে।

“আমি আপিসে বসেই আছি। অন্যমনস্ক হয়ে ফাইল নাড়াচাড়া করছি। সাড়ে পাঁচটায় হেদায়েত আহমেদ ঘরে ঢুকলেন, মুখে হাসি। বললেন, ‘ওরা রাজি হয়েছে স্যার।’ হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।...এর ফলে ৩০ মিলিয়ন ডলার দস্তখতী বোনাস পাওয়া যায়, বাংলাদেশের একটি পয়সাও খরচ না করে।

“পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাগজ আসে না। বঙ্গোপসাগরে তেল উত্তোলন কর্মকাণ্ড যখন এভাবে এগিয়ে চলেছে তখন একটা অসোয়াস্তিতে ভুগতে হলো মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কাজে। আমরা বিভিন্ন দেশকে অনুরোধ করেছিলাম, তাঁদের দেশের তেল উত্তোলন সংক্রান্ত কর্ম বিবরণ ও আইন কানুন, চুক্তিপত্রের কপি ইত্যাদি সম্ভব হলে পাঠিয়ে দিয়ে আমাদের সাহায্য করতে। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল আমাদের রাষ্ট্রদূতগণকে এবং তাঁরাই এ অনুরোধটি বিদেশে জানাচ্ছিলেন এবং তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। স্বভাবতই রাষ্ট্রদূতগণ তাঁদের রিপোর্ট ও সংগৃহীত তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছিলেন, প্রাকৃতিক সম্পদকেও কপি দিচ্ছিলেন। এ ব্যবস্থা প্রথম প্রথম বেশ ভালো ভাবেই চালু ছিল কিন্তু ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে এবং ১৯৭৪ সালের শুরুতে বেশ বোঝা গেল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোন কাগজ পত্র আমাদের কাছে আর আসছে না, এর প্রকৃত কারণটি কিছুদিনের মধ্যেই জানা গেল—প্রাকৃতিক সম্পদ দপ্তরটি শীঘ্রই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরিত হচ্ছে।

কথাটি আমি ডেপুটি লিডার সৈয়দ নজরুল ইসলামকে বললাম, কারণ, এপ্রিল ১৯৭২ অবধি চট্টগ্রামের অয়েল রিফাইনারি তাঁর অধীনে শিল্প মন্ত্রণালয়েই ছিল। আমি প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগটির ভার পাওয়ার পর, মন্ত্রণালয় থেকে নোট দেওয়ার ফলে, রিফাইনারি প্রাকৃতিক সম্পদে স্থানান্তরিত হয়। স্থানান্তরের দিন সৈয়দ নজরুল ইসলাম আমাকে হাসতে হাসতে বলেছিলেন—‘দেখবেন, হাত যেন না পোড়ে। ডোন্ট বার্ন ইয়োর ফিংগারস’—কয়েক মাস পরে প্রাকৃতিক সম্পদ অনেকটা অসংলগ্নভাবে অকস্মাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্ত করে দেয়া হয়, সৈয়দ সাহেব আশ্চর্য হননি। তিনি কি জানতেন তেল বিভাগ নিয়ে একটা গোপন তৎপরতা চলছে। তেল বিভাগে কোন অদৃশ্য প্রভাবের কথা কি তাঁর জানা ছিল। যে কারণে, তিনি বলেছিলেন, ‘ডোন্ট বার্ন ইয়োর ফিংগারস? যে কোন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে অন্য কোন দপ্তর জুড়ে দেয়া বিরল ঘটনা বটে! অথবা, একথা কি সত্য যে প্রথম প্রথম ‘প্রাকৃতিক সম্পদ’ বিভাগকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলে নবাগত এক মন্ত্রীর কাঁধে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু ঘটনাক্রমে যখন ‘প্রাকৃতিক সম্পদ’ বিভাগ থেকে ক্রুড পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধান প্রক্রিয়া সুচারুভাবে শুরু করা হয় এবং বলতে গেলে এক রকম ‘সমুদ্রের ঢেউ গুণে’ ৩০ মিলিয়ন ডলার সিগনেচার বোনাস আদায় হয়, তখন অনেকের এই বিভাগ সম্পর্কে আগ্রহ জন্মে, চলে দরবার, তদবির। অথবা, এটা কি সত্যি যে প্রাইভেট সেক্টরকে সরিয়ে রেখে সরাসরি ইরাক থেকে স্টেট লেভেলে ক্রুড তেল কেনার ব্যবস্থা করায় অনেকের অসন্তুষ্টির কারণ ঘটেছিল? তেল মন্ত্রী বিনা কাজে এবং এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া বঙ্গবন্ধুর দরবার যেতেন না, কিন্তু তাঁর কাছে স্বার্থান্বেষীদের ভিড় লেগেই থাকত। নতুবা, তেল অনুসন্ধান কর্মসূচি সাফল্যজনকভাবে শুরু করার জন্য যখন পুরস্কার পাবার কথা সেক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী হেদায়েত আহমেদ (সচিব, প্রাকৃতিক সম্পদ)কে এক অনুসন্ধানী টাস্কফোর্সের কাছে দিনের পর দিন জবাবদিহি করতে হয় এবং তেল উত্তোলন বিধিব্যবস্থার চুক্তিপত্রের প্রায় প্রতিটি শব্দ ব্যাখ্যা করতে হয়। হেদায়েত আহমেদ ও সহকর্মীরা এই ধিক্কারজনক পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তেল বিভাগের নতুন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন এই ৩ সদস্য বিশিষ্ট টাস্কফোর্স দিয়ে উইচ হান্টিং করতে গিয়েছিলেন, তা আজকে আর সাধারণ্যে অবিদিত নয়।

“মাঝখানে নতুন মন্ত্রীর এই সব ধূম-ধাড়াক্কায় বিদেশি কোম্পানিগুলো ঘাবড়ে যায়। পৃথিবীর তেলজগতে পরিবর্তন ঘটে ইতিমধ্যে। ইল্যান্ডের উত্তর সাগরে (নর্থসি) তেল আবিষ্কৃত হয়। ক্যানাডিয়ান সুপিরিয়র ও এ্যাসল্যান্ডে কোম্পানিগুলো হঠাৎ করে একদিন পাত্তাড়ি গুটিয়ে চলে যায়।...

“শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে রিফাইনারি চলে যাওয়া দু-একজন উচ্চ-পর্যায়ের আমলা পছন্দ করেননি। তার কারণ সম্ভবত এইটি যে ক্রুড পেট্রোলিয়াম ক্রয়ের ব্যবস্থা তখন শিল্প মন্ত্রণালয় করতেন। ব্যাপারটিতে খানিকটা দাপট অবশ্যই আছে, সেটি কে হারাতে চায়? আমি বাংলাদেশের কাঁচা তেল ক্রয়ের ব্যাপারে বেসরকারি হাতের প্রভাব লক্ষ্য করি। বঙ্গবন্ধুকে বলি, আমরা সমাজতন্ত্রী দেশ, ইরাকও সমাজতন্ত্রী; সুতরাং এ দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য সরাসরি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হওয়াই সঙ্গত। ইতিমধ্যে ১৯৭২ সালের অক্টোবর থেকে তেলের দাম তিন ডলার দশ সেন্ট থেকে লাফিয়ে ১৯৭৩-এর গোড়ায় প্রায় সাত ডলার এবং মাঝামাঝিতে প্রায় দশ ডলারে পৌঁছাল। তেলের বাজারে তেল কেনা নিয়ে সে কি হুলস্থূল। হরেক রকম কোম্পানি প্রতিনিধি এজেন্টগণ, এমনকি সৌদি আরবের যুবরাজদের বিশেষ দূতগণ পৃথিবীর দেশে দেশে উচ্চ মূল্যে তেল ফেরি করতে লাগলেন—আমাদের বাংলাদেশেও অনেকেরই আবির্ভাব হলো; কিন্তু সুলভ মূল্য ও সুবিধাজনক শর্তে কেউ তেল সরবরাহ করতে রাজি ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে আমি ইরাক, আবুধাবি ও কুয়েত সফর করি এবং ইরাকের তৎকালীন তেলমন্ত্রী ড. হাম্মাদীর সঙ্গে আলোচনা করে ১০ লাখ টন কাঁচা তেল সরবরাহের ব্যবস্থা করি। ড. হাম্মাদী কোন যুক্তিতেই তেলের দাম কমাতে স্বীকৃত হননি, তবে তেলের ব্যবস্থা করতে সম্মত হয়েছিলেন, এটিই আমাদের একমাত্র পাওনা কারণ, এর কারণে আমাদের একমাত্র রিফাইনারি তাৎক্ষণিকভাবে কাঁচা তেলের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় নি। আমাদের সফলতা ছিল, তেল সঙ্কটের কঠিন দিনে তেল সংগ্রহ করা, তার বেশি কিছু নয়।...

“তেল বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা পূর্বকালীন নাম বাংলাদেশেও অক্ষুণ্ন ছিল, যথা—আমিন অয়েল কোম্পানি, দাউদ অয়েল। স্পষ্ট বোঝা গেল, আমিন ও দাউদের প্রতিনিধিরা করাচী-লন্ডন বা আবুধাবিতে এসে বাংলাদেশের এই সব কোম্পানির কেনাবেচার উপরে কমিশন হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বললাম, এবং প্রস্তাব দিলাম, আন্দোলনের সময় আমরা স্লোগান দিয়েছি,

‘তোমার আমার ঠিকানা

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা।’

কাজেই এই নামগুলো চিরস্মরণীয়। আমিন অয়েলের নতুন নাম হোক ‘যমুনা অয়েল’, দাউদ হোক ‘পদ্মা’ এবং এস্সো কোম্পানি (যাদের সঙ্গে তখন কথাবার্তা চলছিল) কেনা হলে, এ তার নাম হবে ‘মেঘনা’। যমুনা ও পদ্মা, নতুন নামকরণ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনগত কাঠামোতেও বাংলাদেশের সম্পূর্ণ স্বত্বাধিকার রীতি অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা আবশ্যক। প্রধানমন্ত্রী সানন্দে সম্মত হলেন, যমুনা ও পদ্মা নাম অবিলম্বে চালু হলো; এসসো কোম্পানি কেনা হলে তার নামও মেঘনা হয়েছিল। বর্তমানকালে যেখানে হাকিম নড়িলেও হুকুম নড়ে না সে জায়গায় এ রকম দৃষ্টান্ত অপেক্ষাকৃত বিরল; নামকরণের ঘটনাটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত। বিভাগীয় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই নাম পবির্তনে আইনত যথেষ্ট হলেও, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ও দস্তখত ফাইলটিতে নেয়া হয়েছিল এ কারণে যে অন্তত অপর এক প্রধানমন্ত্রী ব্যতিরেকে এ নাম বদলানো যাবে না।...

“স্বাধীনতার পূর্বে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেই প্রাকৃতিক সম্পদ জোড়া থাকত। বাংলাদেশ হওয়ার পরও ছিল তাই। প্রাকৃতিক সম্পদকে ভেঙে নিয়ে এসে বিদ্যুতের সঙ্গে জুড়ে বিদ্যুৎ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা মন্ত্রণালয় সৃষ্টির ইতিহাস আমার জানা নেই। হয়ত শিল্প বিভাগের ভার লঘু করতে, হয়ত প্রাকৃতিক সম্পদ যেখানে ফালতু একটা বিষয় অর্থাৎ বাংলাদেশে দৃশ্যত কোন খনিজ বা ধাতব সম্পদ নেই; সেখানে এই দৃশ্যমান-অকেজো বিষয়টির প্রতি প্রখর দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক মনে হয়নি। পরে, প্রাকৃতিক সম্পদকে ভিত্তি করে যখন সমুদ্র—সন্ধানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল, তখন আবার অনেকেরই দৃষ্টি পড়ে এই বিভাগটির প্রতি এবং শেষ পর্যন্ত এই বিভাগটিকে আমার নিকট থেকে নিয়ে অন্যত্র জোড়া হয়; পররাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে, যা অনেকে অসঙ্গত মনে করেছিলেন সে সময়। অনেকে সন্দেহ করেছিলেন, এই পরিবর্তনের মূলে ছিল অন্য রহস্য— হয়তবা রাশিয়াকে বঙ্গোপসাগরে ঢুকতে না দেয়ার ফলে মন্ত্রীর উপরে খড়গাঘাত হলো।” [পৃষ্ঠা ৭২-৮২ (প্রথম সংস্করণ)]

এই প্রেক্ষাপটটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে বঙ্গবন্ধু ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দেশপ্রেম ও দায়িত্বশীলতার প্রমাণ মেলে। অন্যদিকে তখন সরকারের ভেতরেই এমন সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছিল, যারা দেশের বদলে নিজস্ব ক্ষমতা ও স্বার্থ সংরক্ষণেই বেশি তৎপর ছিলেন। এবং নানাভাবে রাষ্ট্রনেতাকে বিভ্রান্ত ও দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলেন। কেননা, পরবর্তীকালে বিদেশিদের হাতে বাংলাদেশের খনিজসম্পদের বেহাত হওয়া ও দেশের বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যে ঘটনা, তাতে তৎকালীন আইনমন্ত্রীসহ বহু আমলা ও পরিকল্পনা কমিশনের যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তীকালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ উপলক্ষ্যে এক আলোচনায় [ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৯] জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কাজ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু যে সমস্যার মধ্যে পড়ছিলেন তার একটি ভালো বর্ণনা মফিজ চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়’ বইতে আছে। প্রথমত, বইতে তিনি বলেছেন, আমলাদের যথেষ্ট সহযোগিতা তিনি পাননি।...তিনি মন্ত্রী হিসেবে যখন বিদেশে যাবেন, তখন যে তার প্রাপ্য লাল পাসপোর্ট, সেটি আমলারা তাকে করে দেননি। বাংলাদেশের নাগরিকদের সাধারণ পাসপোর্ট নিয়েই তাকে বিদেশে যেতে হয়েছিল। তার বইতে তিনি আরও আক্ষেপের সুরে লিখেছেন, আওয়ামী লীগের কর্মীরা যখন তখন প্রধানমন্ত্রীর কক্ষে ঢুকে যাচ্ছে, তাকে কাজ করতে দিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীকে যে তার দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে, সময় দিতে হবে—এই বোধ রাজনৈতিক কর্মীদের ছিল না। তারা বঙ্গবন্ধুর সময় নষ্ট করে নিজেদের কর্তৃত্ব দেখালেও বঙ্গবন্ধুর অনেক ক্ষতি করেছিল।”

প্রসঙ্গত, বইটির একটি মূল্যবান ভূমিকাও লিখেছেন ড. আনিসুজ্জামান।

এভাবে বইটিজুড়ে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের বহু প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ঘটনা, অলিখিত ইতিহাস ও অভিজ্ঞতার বিবরণ রয়েছে, যা থেকে নানাভাবেই আমাদের শিক্ষালাভের সুযোগ রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েই এই আলোচনার ইতি হোক : ‘শেখ মুজিবর কবিতা পড়তেন, কোনোদিন কবিতা লিখেছেন কিনা, জানি না। তবে, তাঁর ভাষা ছিল চোখে; যাদু ছিল তাঁর চোখে। গালিব বলেছেন : ‘এক হি নেগাহ্, কে বস্ হম্ খাক হো গয়ে।’ ‘তিনি শুধু একবার চোখ তুলে তাকালেন, চোখের জ্যোতিতে আমি পুড়ে ছারখার।’ শেখের সঙ্গে এটাই ছিল আমার ‘পহেলি মুলাকাত’।’ [পৃ. ১৫]

বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়, মফিজ চৌধুরী, দ্বিতীয় সংস্করণ : নভেম্বর ২০১৮ (প্রথম প্রকাশ ১৯৯১), ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা, প্রচ্ছদ : আনওয়ার ফারুক, পৃষ্ঠা ১২৮, মূল্য ৩৬০ টাকা।

 

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!