X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু করা দরকার : যতীন সরকার

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : শিশির রাজন
২৬ মার্চ ২০২১, ০০:০৩আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২১, ০১:২২

অধ্যাপক যতীন সরকার। প্রবন্ধ সাহিত্যে পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তাঁর মার্ক্সীয় সাম্যবাদী মৌলিক চিন্তা ঋদ্ধ করেছে বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যকে। ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা চন্দপাড়া গ্রামে যতীন সরকারের জন্ম। দীর্ঘদিন ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন তিনি।মোট প্রকাশিত বই প্রায় ৩৫টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে : সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন, পাকিস্তানের ভূত ভবিষ্যৎ, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন ইত্যাদি। যতীন সরকারের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের নানা প্রসঙ্গ। 
 

শিশির রাজন : আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কিসের জন্য অনিবার্য ছিলো বলে আপনি মনে করেন?
যতীন সরকার : মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিলো, এ কথা যদি বলতে হয়, বলতে হবে—সর্ববিষয়ে তথাকথিত পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করা হয়েছিলো। সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত করা হয়েছিল ভাষা সংস্কৃতি থেকে। সেই সময়ে বাইশটি বড় ধনী পরিবারের কেউ এখানে থাকত না। পশ্চিম পকিস্তানে লোক সংখ্যা আমাদের থেকে অনেক কম থাকা সত্ত্বেও সুযোগ সুবিধা তারাই ভোগ করত বেশি। এমন শোষণ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একেবারেই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

 

শিশির রাজন : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকৃতভাবে কি আমাদের সমাজ বাস্তবায়িত হয়েছে? না হয়ে থাকলে কী করা জরুরি?
যতীন সরকার : না হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পরে একটা ধারণা বা সকলের জন্য সুফল পাওয়ার একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭২ সাল থেকে। সেটাকে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত করে দিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার মধ্যদিয়ে। এ হত্যার মধ্যদিয়েই পাকিস্তান যেন নতুনভাবে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসল এবং পাকিস্তান ভূতে আমাদের ধরল। এ অবস্থাটার জন্য আমাদের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিকে ধূলিসাৎ করা হলো এবং ধর্মতন্ত্রী শাসনব্যবস্থা তৈরি করে পাকিস্তানের ধারায় নিয়ে যাওয়া হলো। এর অনেক পরে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় গিয়েও এ অবস্থা পুরোপুরি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। এখনো রাষ্ট্রধর্ম রয়ে গেছে এটা এক গোঁজামিল। এ অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যা করতে হবে, কেবল সরকার বা কোনো বিশেষ দলের ওপর নির্ভর করে হবে না। আমরা সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে যেভাবে স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হয়েছিলাম, সেভাবে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম এদেশে গড়ে তোলা দরকার ছিলো এ ব্যাপারে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ব্যর্থতা যদি দূর করতে না পারি, সংস্কৃতি সংগঠনগুলো যদি প্রকৃত প্রস্তাবে সবার আগে এগিয়ে না আসে তাহলে এ অবস্থা দূর হবে না। এ অবস্থা দূর করার জন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে বুদ্ধিজীবীদেরও যুক্ত হওয়া উচিত। বড় রকমের বলা যেতে পারে—মুক্তিযুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা আমরা পেলেও যথাযথ মুক্তি আসেনি। সেই যে, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন—‘আমাদের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ সেই মুক্তির সংগ্রাম’ এখনো আমরা পাইনি। এখনো সকল মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে পারিনি। এগুলো করার জন্য যে প্রয়াস দরকার বলতে গেলে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু করা দরকার। যার সম্পর্কে বলতে গেলে এখনো আমাদের ধারণাই স্পষ্ট নয়। তা স্পষ্ট করে আমোদের সেই সংগ্রামে নেমে পড়তে হবে।

 

শিশির রাজন : মুক্তিযুদ্ধে সাহিত্যের অবদানকে কীভাবে বিশ্লেষণ করেন?
যতীন সরকার : মুক্তিযুদ্ধে সাহিত্যের অবদানকে বিশ্লেষণ করতে গেলে—আমরা তো দেখেছি যে সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৫০ সালের পর থেকে। সেখানেই আমাদের ভাষা সংস্কৃতিকে উজ্জ্বল করে তোলার প্রয়াস দেখা দেয়। ষাটের দশকে আমরা দেখেছি নির্মলেন্দু গুণের মতো কবির আবির্ভাব ঘটেছে। শামসুর রাহমানের কবিতার পরিবর্তন ঘটেছে এবং সত্যেন সেনের মতো সাহিত্যিক যিনি আইয়ুব খানের জেলখানায় বসে চমৎকার সাহিত্য রচনা করছেন।। এ সমস্তগুলির মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন সেটাকে বেগবান করে তুলতে পেরেছি। তাই বলা যেতেই পারে সাহিত্যের অবশ্যই অবদান আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের ক্ষেত্রে।

 

শিশির রাজন : মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের যে সাহিত্য, সেখানে কি মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা প্রকাশ ঘটেছিল বা গতিশীল হয়েছিল? আপনার বিশ্লেষণ কী?
যতীন সরকার : আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে গতিশীল হয়নি, তা নয়। কিন্তু যে পরিমাণে গতিশীল হওয়ার প্রয়োজন ছিল সে পরিমাণটি হয়ে ওঠেনি। কিছু কিছু সাহিত্যিক অবশ্যই আছেন (নাম বলতে চাই না, কেউ থাকবে, কেউ বাদ যাবে তা বিব্রতকর) যাঁরা বেরিয়ে এসেছেন কিন্তু সার্বিকভাবে আমাদের সাহিত্যের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনটা হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি।


শিশির রাজন : সেটার ক্ষেত্রে মূল বাঁধাটা কী ছিলো?
যতীন সরকার : আসলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, সেটাকে যেভাবে বিস্তৃত করার উচিত ছিলো, তা আমি আগেই বলেছি সে সাংস্কিৃতিক ধারাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। নতুন যে সাহিত্যিকরা এসেছিলেন তারা প্রকৃত প্রস্তাবে ঐ মুক্তিযুদ্ধের চৈতন্যে উদ্বুদ্ধ হওয়ার অবস্থায় ছিল না। এ অবস্থাটা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে আমরা পাকিস্তানের ভূতের কবলে নিমজ্জমান হয়েছিলাম। তা থেকে নতুন সাহিত্যিকরা খুব কম ক্ষেত্রেই বেরিয়ে আসতে পেরেছেন।

 

শিশির রাজন : তার মানে হলো বঙ্গবন্ধুর হত্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পাকিস্তানের ভূত সব মিলিয়ে সেই সময়ে আমাদের সাহিত্যিকদের এক ধরনের দ্বিধা ছিলো?
যতীন সরকার : হে, ঠিকই বলেছ তুমি।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!