X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

আপস করার কোনো জায়গা নেই : নির্মলেন্দু গুণ

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : অনার্য মুর্শিদ
২৬ মার্চ ২০২১, ০০:৩০আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২১, ০১:২১

কবি নির্মলেন্দু গুণ বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবি। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনিও লিখেছেন। তার কবিতায় নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম, স্বৈরাচার বিরোধিতা এবং প্রকৃতি নানাভাবে এসেছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হবার পর তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তিনি বাংলা একাডেমি, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

 

অনার্য মুর্শিদ : অবিভক্ত ভারত, বিভক্ত ভারত এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রত্যক্ষদর্শী আপনি। একজন কবির দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার অভিজ্ঞতা শুনতে চাই।
নির্মলেন্দু গুণ : আমি যে সময়কাল অতিক্রম করে এসেছি, যে সময়খণ্ডের ভেতর দিয়ে কবি হয়ে উঠেছি এরকম পৃথিবীর খুব কম কবির ভাগ্যেই জুটেছে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন যে কর্মসূচিটি আসলে ছিল আমাদের স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। আমি এই ছয় দফা কর্মসূচির পক্ষে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম ১৯৬৬ সাল থেকেই। সুতরাং, বলা যায় বঙ্গবন্ধুর এই ছয় দফা কর্মসূচি যে স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ তিনি বপন করেছিলেন সে বীজ আমার ভেতরে, আমার কবিসত্তায় অঙ্কুরিত হয়েছিল। ফলে ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি প্রথম কবিতা লিখেছিলাম। ছয় দফা কর্মসূচিতে যারা বন্দি হয়েছিলেন ত্রিশ হাজার নেতাকর্মী তাদের মুক্তির জন্য হরতাল আহ্বান করা হয়েছিল জুনের ৭ তারিখে। সেই তারিখে ১১ জন বাঙালি পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর বাহিনীর গুলিতে প্রাণ দিয়েছিলেন। তাদের উদ্দেশ্যে আমি প্রথম কবিতা লিখেছিলাম ‘সূবর্ণ গোলাপের জন্য’। সে কবিতার ভেতরে—

‘শীতের রোগীর মতো জুবুথুবু নয়,

গঞ্জের জনতার মতো নির্ভীক হতে হবে। 

রক্তের রঙ দেখে ভয় নেই,

স্বাধীন দেশের মুক্তজনতা উল্লাস করো সবে।’

এই যে ‘স্বাধীন দেশের মুক্ত জনতা’ এই পদবন্ধটি আমি ব্যবহার করেছি ১৯৬৭ সালে।বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার পর আমার কাছে মনে হয়েছিল ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতেই যে সংগ্রাম গড়ে উঠবে সেই সংগ্রাম বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করবে। আমি যে ‘হুলিয়া’ কবিতা রচনা করেছি সেটি আমার বাস্তব জীবনের করুণ অভিজ্ঞতা থেকে রচিত। আমার মাথার ওপর দুটি হুলিয়া ছিল। আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে আমি যেভাবে জড়িত আর কোনো কবি সেভাবে জড়িত হননি। আমার আত্মকথার ‘আমার কণ্ঠস্বর’ বইটি সুরজিৎ দাশ গুপ্ত সম্প্রতি লোকান্তরিত হয়েছেন, আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলছি তিনি আমার বইটির ছয় পৃষ্ঠা আলোচনা লিখেছিলেন ‘দেশ’ পত্রিকায় এবং উপসংহারে তিনি বলেছিলেন—বাংলা সাহিত্যের এই গ্রন্থের তুলনীয় কোনো গ্রন্থ রচিত হয়নি। এই গ্রন্থটিকে তুলনা করতে পারি অষ্টাদশ শতকের ফরাসি দার্শনিক লেখক জ্যা জ্যাক রুশোর ‘স্বীকারোক্তি’ নামক গ্রন্থটির সঙ্গে।

এই উক্তিটি যেহেতু তিনি আমার বইটি সম্পর্কে করেছিলেন পরে আমি জ্যা জ্যাক রুশোর ‘স্বীকারোক্তি’ বইটি পড়ি। বই পড়ে আমার মনে হয়েছে এখানে ফরাসি বিপ্লবের কথা ততটা বলা হয়নি যেমনটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা আমার এ আত্মজীবনী গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে। যারা বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে গবেষণা করবেন, তাদেরকে আমার কবিতার সাহায্য নিতে হবে। আমি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি সেটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সঙ্গে  মিলেমিশে একাকার হয়েছিল। আমার আত্মজীবনী ‘আত্মকথা ১৯৭১, ‘আমার কণ্ঠস্বর, ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক সত্যনিষ্ঠ দলিল। যারা বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে গবেষণা করবেন তাদেরকে অবশ্যই আমার কবিতার সাহায্য নিতে হবে। ড. আহমদ শরীফ ১৯৭০ সালে আমার বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর মন্তব্য করেছিলেন—‘এই কাব্যগ্রন্থটি হচ্ছে আমাদের আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনের কাব্যিক দলিল। ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদরা এই গ্রন্থ থেকেও উপাত্ত সংগ্রহ করবেন।’ কিছুদিন আগে আমার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমাদের একজন তরুণ গবেষক অধ্যাপক ড. কুদরত-ই হুদা একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘কবি নির্মলেন্দু গুণের কাছে বাঙালির ঋণ’। এই প্রবন্ধটি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মানে যারা আমার কাছে ঋণগ্রস্ত থাকতে চায় না তারা বিরোধিতা করেছেন কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি মানুষ আমার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। কবি ফকির জলিয়াল বলেছেন—‘বাংলাদেশকে জানতে হলে কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা পড়তে হবে।’


অনার্য মুর্শিদ : দেশের প্রতিটি সংকটকালে আপনি কবিতা লিখেছেন, বিশেষ করে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং প্রতিটি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপনার উচ্চারণ আছে, এত সাহস কোথায় পেলেন?
নির্মলেন্দু গুণ : ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা, ৬৯-এর গণঅভুত্থ্যান হলো, নির্বাচন হলো, দেশ স্বাধীন হলো তারপর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হলেন। এই যে সময়কাল, এই সময়কালের মধ্যে বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শুধু স্বাধীনতা অর্জনই নয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় যে আদর্শগুলো এই আদর্শগুলো বাংলাদশকে একটা পৃথক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিল ইতিহাসের বুকে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে তাঁর এই ন্যায়সঙ্গত স্বপ্নের স্বপক্ষে আমি যথাসময়ে কবিতা লিখতে পেরেছিলাম বলে আমি নিজেকে ধন্যবাদ দেই। আমি ওই সময় নীরব থাকিনি। আমার কাব্যজীবন শুরু হয়েছিল সেই গণআন্দোলনের সঙ্গেই। কবি হিসেবে আমার যা কিছু সাফল্য তার পেছনে বঙ্গবন্ধুর একটা বড় ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধু যদি এই গ্রহণযোগ্য আন্দোলনটার সূত্রপাত করতে না পারতেন তাহলে আমার পক্ষে কবি হয়ে ওঠা সম্ভব হতো কি না সেটা আমার কাছে অনেক সময় প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দেয়। এই যে জাতির স্বপ্ন, জাতির আকাঙ্ক্ষা, দেশপ্রেমের যে প্রকাশ, এই সাহস এগুলো কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শেখা। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি মাথা নত করেননি। কতবার তাঁকে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন—আমাকে তোমরা হত্যা কর আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার মরদেহটি আমার বাংলার মাটিতে বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ো।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর এবং তাজউদ্দিন এই চারজন নেতা যারা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন বলা যায় তারা কিন্তু মোশতাকের সঙ্গে যোগদান করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ভিন্নরূপ গ্রহণ করতে পারত। তারা খুনিদের সাথে আপস করেননি। ২১ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এলো তার পেছনে এই জাতীয় চার নেতা যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাদের অবদান রয়েছে। এই চারজন নেতাকে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর হত্যা করা হয়েছিল জেলখানায়। তাদের এই আত্মত্যাগের ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম তারা যদি তাদের জীবন দান করতে পারেন দেশের জন্য, বঙ্গবন্ধুর জন্য—তাহলে একটু ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমিও কবিতা লিখব এবং প্রকাশ্য জনসমাবেশে পাঠ করব।

আমি জীবনে চারটি স্বৈরশাসকের বিরোধিতা করে কবিতা লিখেছি। ইয়াহিয়া খান, আইয়ুব খান, জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ। বাংলাদেশ আমলের দুই জন স্বৈরশাসক যারা আমাদের ওপর চেপে বসেছিল অবৈধভাবে এবং পাকিস্তান আমলের দুইজন স্বৈরশাসক। ফলত আমার অধিকাংশ কবিতাই হয়েছে রাজনীতিসচেতন কবিতা।


অনার্য মুর্শিদ : ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে আপনি উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন।
নির্মলেন্দু গুণ : ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু যে ঐতিহাসিক পৃথিবী কাঁপানো ভাষণ দিয়েছিলেন সেদিন আমি মঞ্চের খুব কাছে থেকে সাংবাদিকদের সংরক্ষিত আসনে বসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। আমি তখন তরুণ সাংবাদিক ছিলাম। সেই দিক থেকে আমার জীবনের এটা খুব গৌরবজনক অভিজ্ঞতা। সারা পৃথিবীর সর্বকালের যে শ্রেষ্ঠ ভাষণসমূহ আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি তার অন্তর্গত ভাষণ হিসাবে ৭ মার্চের এই ভাষণকে মানবজাতির মূল্যবান দলিল হিসেবে জাতিসংঘের ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। এই যে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা, এই ঘটনা আমি প্রত্যক্ষ করতে পেরেছি। পৃথিবীর অন্য কোনো শ্রেষ্ঠ ভাষণ সম্পর্কে তো আমি এই কথা বলতে পারি না। সুতরাং, আমি মনে করি এটা একটা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আমার জীবনের জন্য। যে ভাষণকে নিয়ে পরবর্তীকালে আমি কবিতা লিখে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছি। তরুণ প্রজন্মের বহু আবৃত্তিকার এই কবিতা আবৃত্তি করে। সারা দেশেই আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় এই কবিতাটি নির্বাচিত হয়ে থাকে এবং ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’—এই কবিতাটি নবম, দশম শ্রেণিতে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই একটা কবিতা জানলেই বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। এটিই আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। যে কবিতার মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস, গৌরব, শৌর্য, বীর্যের যে প্রমাণ সেই প্রমাণ পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করেছি বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে। আমি মনে করি তাঁর ৭ মার্চের ভাষণ সর্বকালের সেরা ভাষণের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলেই এটা বিখ্যাত নয়। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্য সকল ভাষণই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মানুষের ব্যক্তিজীবনে, সামাজিক জীবনে সেই ভাষণগুলোর কার্যকারিতা নেই কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এখনো আমাদের ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ প্রাসঙ্গিক এবং আমাদের স্কুলের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুখস্থ বলতে পারে। পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষণ এই ভাষণটির মতো এত প্রাণবান, এত জীবন্ত নয়। সুতরাং, এটা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ বলতে হবে। সেই ভাষণটি যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে বন্ধ করে দেওয়া হলো, ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে দৃশ্যের আড়ালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলো, তাঁর অবদানকে খাটো করে, তুচ্ছ করে দেখানোর চেষ্টা হলো তখন বাঙালি তার শ্রেষ্ঠ অর্জন থেকে তার শ্রেষ্ঠ বীরকে আর চিনতে পারছিল না। তাঁকে আড়াল করা হচ্ছিল। আমি ১৯৮০ সালে এই কবিতাটি পুনরায় রচনা করি যেই কবিতাটি আমি লিখেছিলাম ১৯৭১-এর ৭ মার্চ। যে কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক ‘গণবাংলা’-এর টেলিগ্রাম ইস্যুতে। ঐ দিনের সে ইস্যুটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে সেটি আর সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সেই কবিতাটি আমি পুনরায় লিখলাম যেহেতু বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি নেই, শোনা যাচ্ছে না, তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে না। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে বঙ্গভবনে। আমি তখন কবিতা লিখেছি—

আলো ঝলমল বঙ্গভবনে

তামাকের ধুম উড়িয়ে পবনে

তুমি কি যাবে না বিজয় উৎসবে

হে পিতা সিন্দাবাদ।

অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। এরকম একটা সময় যখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণের গুরুত্বকে অস্বীকার করা হচ্ছে, ৭ মার্চ বলে কিছু ছিল, তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন! এই সমস্ত তথ্যকে গোপন করে নতুন ইতিহাস নির্মাণ করার জন্য বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং তাদের বেনিফিশিয়ারি যারা ছিলেন পরবর্তীকালের শাসক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল সেই ইতিহাস বিকৃতির এক পর্যায়ে আমি ভেবেছিলাম যদি এই কালরাত্রি প্রলম্বিত হয় তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের পাঠক আমাদের নতুন প্রজন্ম ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের যে গৌরব, যে সৌন্দর্য, এর যে শিল্পরূপ যা নিয়ে বাঙালি জাতি চিরকাল গর্ব করতে পারে তা থেকে বঞ্চিত হবে। সুতরাং, আমি একটা কবিতা লিখি ৭ মার্চের ভাষণের ওপর। যে কবিতাটি পাঠ করে তারা ভাষণটি শুনবার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে।

আমি কবিতাটি লিখে খুবই উত্তেজিত বোধ করেছিলাম এবং বাবাকে প্রথম কবিতাটি শোনাই। তিনি আমাকে বললেন—‘তোর এই কবিতাটি আবার আমাকে শোনা। আমি খুব উত্তেজিত বোধ করছি। আমার মনে হচ্ছে যে শেখ মুজিবের ভাষণটা অনেক দিন যাবৎ শুনতে পাই না। তাঁকে মেরে ফেলার পর থেকে তাঁর এই ভাষণটি দেশের আকাশ থেকে উধাও হয়েছে। কোথাও এটা শুনতে পাই না।’ আসলে অলিখিতভাবে এই ভাষণটি প্রচার নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং কোথাও কখনও এ ভাষণটি মাইকে বাজানো হয়েছে তখন যারা বাজিয়েছে তাদেরকে এই ভাষণ বাজানোর অপরাধে পুলিশ গ্রেফতারও করছে। ফলে এই কবিতাটি আমার বাবার খুব পছন্দ হয়। তখন আমি বুঝতে পারলাম বাবার মতো অসুস্থ মানুষ যিনি শয্যাশায়ী তিনি যখন উত্তেজিত হয়ে বিছানায় বসে পড়লেন তখন এ কবিতাটি বাঙালি জাতিকে—যে জাতি ভয়ে মূহ্যমান ছিল, যে ভয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা উচ্চারণ করতে সাহস পাচ্ছিল না, তাঁর কৃতীকে অস্বীকার করছিল, তারা নিশ্চয়ই নতুন করে ভাববে। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই কবিতাপাঠ করার মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জানবে। আমাদের ইতিহাসকে নতুন করে জানবে, বুঝবে। আমার সে উদ্দেশ্য আমার মনে হয় সফল হয়েছে।


অনার্য মুর্শিদ : বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য রাজনীতিবিদদের করণীয় কি বলে মনে করেন?
নির্মলেন্দু গুণ : বঙ্গবন্ধু যে শাসনতন্ত্র জাতিকে উপহার দিয়ে গিয়েছিলেন তিরিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে, লাখ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে, আমরা যে স্বাধীন দেশটি পেয়েছিলাম সে স্বাধীন দেশটিকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, আমাদের সোনার বাংলা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তাকে এখন একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার যে ষড়যন্ত্র চলছে এই চলমান ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিয়েই আমাদের লড়াই করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শিক অবস্থান ছিল সে অবস্থান থেকে আমরা যদি কৌশলগত কারণে সরে গিয়ে থাকি আমাদের ধীরে ধীরে ওই জায়গাটায় পৌঁছানোর জন্যই সংগ্রাম করতে হবে। এখানে আপস করার কোনো জায়গা নেই।


অনার্য মুর্শিদ : আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে শুনতে চাই।
নির্মলেন্দু গুণ : কিছুদিন আগে আইএমএফের একটা জরিপের ফল বেরিয়েছে সেই ফলে দেখা যাচ্ছে—বাংলাদেশ উপমহাদেশের মধ্যে তার সবকটি উন্নয়ন সূচকে ঊর্ধ্বমুখী। মাথাপিছু আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন এই সমস্ত ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের গড় পরমায়ু ৭২ বছর। যেখানে ভারতের গড় পরমায়ু ৬৯ বছর। আমাদের এখন যে পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী নদীর ভেতর যে টানেল তৈরি হচ্ছে, যে ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলো গড়ে উঠছে যাতায়াত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সেগুলো আমাদের উন্নতির সূচক। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বৈশ্বিক ক্ষেত্রে যে উন্নতির উচ্চতর স্তরে পৌঁছবে এ ব্যাপার কোনো সংশয় নেই। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের হাইওয়েতে প্রবেশ করেছে।


অনার্য মুর্শিদ : স্বাধীনতা পূর্ববর্তী এবং স্বাধীনতাউত্তর বাংলা কবিতার একজন দর্শকও আপনি। কি পরিবর্তন, বিবর্তন দেখলেন? বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ কী
নির্মলেন্দু গুণ : এই উত্তরটি আমার জানা নেই। সত্যি বলতে কি আমি কবিতা লিখি কিন্তু পড়ি না। আমার নিজের অনেক কবিতাই আমি মনে করতে পারি না। কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আতঙ্ক বা উল্লাস প্রকাশ কোনোটারই প্রয়োজন নেই। কবিতা হচ্ছে মানুষের ভাবধারা, মানুষের অন্তর্গত আবেগের একটা প্রকাশ। আবেগ শুধু নয় তার সঙ্গে মেধার সমন্বয়ও থাকে। তার অর্জিত বোধও সেখানে থাকে। তার ন্যায় বোধ, শ্রেয় বোধ, প্রেম, প্রীতি, আবেগের প্রকাশ থাকে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য—এই যে মৌলিক রিপুগুলো কিন্তু নানাভাবে, নানা রূপে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের কাব্যে। এটা হতেই থাকবে। আমি প্রাচীনকালের কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলাম। আমার একটা অনূদিত কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে গত বইমেলায়। খ্রিষ্ট পরবর্তী চতুর্থ দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায়, বিশেষ করে সংস্কৃত কাব্যের কিছু কবির কবিতা আমি অনুবাদ করেছি। সেখানে দেখেছি আজকে থেকে সেই পনেরোশ বছর আগে দুই হাজার বছরের কাছাকাছি আগের কবিরা যেসমস্ত কবিতা রচনা করেছেন সেগুলো আধুনিককালেও প্রাসঙ্গিক। মানুষের বৈষয়িক সম্পদের যতটা পরিবর্তন ঘটে তার অন্তর সম্পদের, তার চিন্তা, ধারণার ক্ষেত্রে এত  দ্রুত পরিবর্তন ঘটে না। অর্থাৎ, মনোজগতের পরিবর্তন সেইভাবে ঘটে না।


অনার্য মুর্শিদ : তরুণ কবিদের জন্য আপনার কোনো নিদের্শনা আছে কী?
নির্মলেন্দু গুণ : আমার মনে হয় বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে আরো বেশি করে কবিতা পড়া উচিত। আমি যে বিশ্ব কবিতার বাসগৃহ, হোম অফ ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি তৈরি করেছি এখানে সারা পৃথিবীর সর্বকালের সেরা কাব্য গ্রন্থগুলোকে একত্রিত করেছি। পৃথিবীর সমস্ত শ্রেষ্ঠ কবিরা রয়েছেন সেখানে। কবিতাকুঞ্জের মূল ভবনের গায়ে আমি প্লেটোর একটা বিখ্যাত উক্তি বড় বড় হরফে লিখে দিয়েছে। সেখানে প্লেটো বলেছেন—পোয়েট্রি ইজ নিয়ারার টু ভাইটাল ট্রথ দ্যান হিস্ট্রি। ইতিহাসের চাইতে কাব্যই মানুষের জীবনের গভীর সত্যের নিকটবর্তী। সুতরাং, প্লেটো যে উক্তিটি কবিতা সম্পর্কে বলেছেন আমিও এই উক্তিটিকে প্রণিধানযোগ্য বলে মনে করি, সত্য বলে মনে করি। সেজন্যই আমি ইতিহাসের লাইব্রেরি গড়ি নাই। আমি কবিতার লাইব্রেরি গড়েছি। কবিতার ভেতর দিয়ে আমরা ইতিহাসকে জানব, জীবনকে জানব। এই জানাটা ইতিহাসের জানার চাইতে সত্যনিষ্ঠ হবে।


অনার্য মুর্শিদ : বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর হতে চলল, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন কতটা পূরণ হলো বলে আপনি মনে করেন?
নির্মলেন্দু গুণ : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম অব্যাহত আছে। ১৯৭০ এর নির্বাচনের পর যে ১৬৭ জন জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সেই সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেটি আগে রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল ওখানে একটি বিশাল নৌকা বানিয়ে তিনি নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছিলেন। আমি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন—আমি যে ছয় দফা কর্মসূচি দিয়েছি সে ছয় দফা কর্মসূচির প্রতি জনগণের রায় ঘোষিত হয়েছে এই নির্বাচনের ভিত্তিতে। এই ছয় দফা কর্মসূচির সঙ্গে কোনো আপোস হবে না। জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো যখন সুগন্ধাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তখন পশ্চিম পাকিস্তানের এই দুজন বঙ্গবন্ধুর ওপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যে অঙ্গীকার বঙ্গবন্ধু করেছেন তা থেকে সরে আসার জন্য। কিন্তু ১৯৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন—এই ছয় দফা প্রশ্নে কোনো আপোস নয়। আজকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ, এমনকি আমিও যদি আপোস করি তাহলে আপনারা আমাকে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখানে জ্যান্ত কবর দেবেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন এই ছয় দফা এমন একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি যে এটা পাকিস্তানের পক্ষে মেনে নেয়া কখনই সম্ভব না। তিনি যদি তাঁর অবস্থানে অনড় থাকেন তাহলে পাকিস্তানিদের সঙ্গে একটা অনিবার্য সংঘর্ষ তৈরি হবে। আমরা সবাই জানি ২৫ মার্চের সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া এ আলোচনা ভেঙে দিয়ে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছিলেন এবং ভুট্টো থেকে গিয়েছিলেন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে।

অপারেশান সার্চ লাইট মূলত এটি হচ্ছে নির্বিচারে একটা গণহত্যা এই ঢাকা নগরীর বুকে। ২৫ মার্চের রাতে যারা নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল এবং ১৫ আগস্টে আমরা যে গণহত্যা দেখেছি সেটার মধ্যে কোথায় যেন মিল আছে। যারা ২৫ মার্চে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হিংস্র হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং ঢাকা শহরের বহু মানুষকে হত্যা করেছিল পথে ঘাটে, পিলখানায়, রাজারবাগে, জগন্নাথ হলে এবং জহুরুল হক হলের ভেতর তাদের উত্তরসূরীদেরই সম্প্রসারিত একটা রূপ আমরা ১৫ আগস্টে দেখতে পেলাম। এই সম্প্রসারিত বীভৎস, বর্বর আক্রমণের ধারা আমরা আবার প্রত্যক্ষ করেছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ওপর গ্রেনেড হামলায়। ২৫ মার্চের রাতে তারা সবাইকে হত্যা করেছিল। তারাই আবার ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছে, তারাই আবার শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু যে ছয় দফাভিত্তিক শপথ গ্রহণ করেছিলেন সে ছয় দফা থেকে একচুলও সরে আসতে রাজি হননি। সেই ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্রই আমরা পেয়েছিলাম যার মূল আদর্শ ছিল গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র। ১৫ আগস্ট যারা সৃষ্টি করেছিল তাদের উদ্দেশ্য ছিল এই ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্রকে পরিবর্তন করা। পৃথিবীর অনেক হত্যাকাণ্ড আমরা দেখেছি, সেখানে কিন্তু শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জানি, মহাত্মা গান্ধীর কথা জানি। এইসব হত্যাকাণ্ডের ভেতর দিয়ে কোনো সাংবিধানিক পরিবর্তন সাধিত হয় নাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে আমরা দেখলাম যে ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণীত হয়েছিল, যে শাসনতন্ত্র সম্পর্কে পাকিস্তানিদের শঙ্কা ছিল এবং তারা ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল এই খুনিরাও এই ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্রে আঘাত হানল। ‘সেই রাত্রির কল্পকাহিনি’ কবিতার মধ্যে আমি লিখেছি—এরই মধ্যে সংবিধানের পাতা থেকে উঠে গেছে দুটি স্তম্ভ, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র। এই যে শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন করা হলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ভেতর দিয়েই কারণ তারা জানত বঙ্গবন্ধুকে জীবীত রেখে এই শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সুতরাং, তারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করল এবং হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না বলে খন্দকার মুশতাক যে ইনডেমনিটি করেছিল সেই অর্ডিনেন্সকেই পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান সংসদে আমাদের সংবিধানের অংশে পরিণত করেছিল। সুতরাং, এগুলো অবিচ্ছিন্ন সূত্রে গাঁথা।

সম্প্র্রতি বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি নিয়ে যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে সেই বইটিতে আছে ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রদত্ত বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন—‘ছয় দফা মানে কি? ছয় দফা মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত বাঙালি জাতির স্বকীয় মহিমার আত্মপ্রকাশ আর নির্ভরশীলতার অর্জনের চাবিকাঠি। অর্থাৎ, ছয় দফা হচ্ছে একটা ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার চাবিকাঠি। আমরা তো ছয় দফা শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে বাধ্য। বঙ্গবন্ধু যে ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র জাতিকে উপহার দিয়ে গেছেন ১৯৭২ সালে, আমাদের সংগ্রাম হবে তাঁর সেই ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সংগ্রাম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই ফিরে যাওয়ার সংগ্রামে রত রয়েছি। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে তাঁর দল স্বাধীনতার পক্ষের দল আজকে ক্ষমতায় থাকলেও আমরা ৭২-এর সংবিধান কিন্তু এখনো পুনর্স্থাপন করতে পারিনি।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিলেন আরও ১২ বিজিপি সদস্য
সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিলেন আরও ১২ বিজিপি সদস্য
রবিনিয়ো-সোহেল-এমফনের নৈপুণ্যে কিংস সেমিফাইনালে
রবিনিয়ো-সোহেল-এমফনের নৈপুণ্যে কিংস সেমিফাইনালে
রেমিট্যান্স বিতরণ নিয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংক ও নগদের চুক্তি
রেমিট্যান্স বিতরণ নিয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংক ও নগদের চুক্তি
উপজেলা নির্বাচন: মনোনয়নপত্রের হার্ড কপি জমা বাধ্যতামূলক নয়
উপজেলা নির্বাচন: মনোনয়নপত্রের হার্ড কপি জমা বাধ্যতামূলক নয়
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’