X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চাশে সুবর্ণ বাংলাদেশ

উদিসা ইসলাম
২৬ মার্চ ২০২১, ০০:০০আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২১, ১৭:৫৭

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের তাগিদের পথে সফলভাবে হাঁটছে বাংলাদেশ। অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক সূচকে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ স্বাধীনতার আজ ৫০বছর পূর্ণ করলো। আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেশকে দখলদারমুক্ত করার সংগ্রামে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ক্রিকেটে উজ্জ্বল বাংলাদেশ

পাকিস্তানি ঘাতক সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে যখন রাজধানীতে এক নৃশংস গণহত্যায় মেতে ওঠে, তখন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসায় গ্রেফতার হওয়ার আগমুহূর্তে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি বার্তা পাঠান। বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। একে যে রকম করেই হোক শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’ এরপর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। বিজয়ের পরে পাকিস্তানী কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পরে বঙ্গবন্ধু দেশ পুনর্গঠনের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধু তার প্রতিটা বক্তৃতায় সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্বের কথা জানান।

৪ জুলাই ৭২ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, শুধুমাত্র স্লোগান দিয়ে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবো না। বরং সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি আদর্শ রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’ ১৯৭৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু বলেন, সোনার বাংলা আমার জীবনের স্বপ্ন। সারা জীবন এজন্য সংগ্রাম করেছি। এখন সেই সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আপনাদের ম্যান্ডেট চাই।

সোনার মানুষ তৈরি করুন আহ্বান জানিয়ে ১৯৭২সালের ২৫ ডিসেম্বর যশোরে এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে।’ তিনি সোনার মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র

হয়েছে কি সেই সোনার বাংলা?

বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন; কিন্তু দেশের শত্রুরা তাকে হত্যা করে দেশকে নরকে পরিণত করেছিল। দীর্ঘদিন সামরিক শাসন,মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শাসন থেকে বেরিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক বাংলাদেশকে দাঁড় করাচ্ছে বিশ্ব দরবারে, মাথা উঁচু করে। এখন উদাহরণ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু, চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ টানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। উন্নয়নের এ কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা

উন্নয়নশীল দেশে হয়ে ওঠা

বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভূক্ত হয় ১৯৭৫ সালে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভূক্ত হতে ৩টি শর্ত রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ৩টি শর্তই পূরণ করে। পরে ২০২১ সালেও ৩টি শর্ত পূরণে প্রয়োজনীয়তা দক্ষতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনও দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ সেই সুপারিশ পেয়েছে। কী সেই শর্ত? জাতিসংঘের ৩টি শর্তের প্রথমটি হচ্ছে, মাথাপিছু আয়। এরপর অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং সবশেষে মানবসম্পদ উন্নয়ন। সবচেয়ে আশার কথামানবসম্পদ উন্নয়ন যোগ্যতায় দরকার ৬৬'র ওপরে স্কোর। বাংলাদেশ সেখানে পেয়েছে ৭৩.২ স্কোর।

মানবসম্পদ সূচকে অগ্রগতি

বাংলাদেশ গত পঞ্চাশ বছরে মানবসম্পদ সূচকেও গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি করেছে। এই সূচকের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মূলতঃ শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ১৫৩ জন। যেটি ২০১৮ সালে এসে প্রতি হাজারে মাত্র ২২ জনে নেমে আসে।

১৯৯১ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিলে ৪.৭৮ শতাংশ। সেটি এখন ১.৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মানবসম্পদ সূচকে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নিরেট অর্থনৈতিক সক্ষমতাও এমনভাবে বেড়েছে যেখানে বিদেশি ঋণ সহায়তা নির্ভরতা কমে আসছে। মেট্রোরেল

রাজনীতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি

এর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস মার্চ এবার এসেছে ভিন্ন বার্তা নিয়ে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে এই সুপারিশ জাতিকে উচ্ছ্বসিত করেছে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অর্থনৈতিক দিক থেকে। কিন্তু এরই মধ্যে বর্তমান সময়ের রাজনীতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, আজ আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করছি। এ সময়ে রাজনীতিতে অনেক চড়াই-উৎরাই ঘটেছে। কিন্তু রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে তা ভেবে দেখতে হবে। ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ বড়- এটাই হচ্ছে রাজনীতির মূল আদর্শ। আজকাল যেন রাজনীতি উল্টো পথে হাঁটছে। তিনি বলেন, কিছু সুবিধাবাদী লোক রাজনীতিটাকে পেশা বানিয়ে ফেলেছেন। রাজনীতি আর পেশা এক জিনিস নয়। পেশার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের ও পরিবার-পরিজনের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। আর রাজনীতি হচ্ছে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার একটি মহান ক্ষেত্র। তাই রাজনীতিকে পেশা মনে করলে দেশ ও জনগণের কথা ভুলে নিজের ও পরিবারের গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খেতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

সব সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা নিয়ে আশান্বিত হন বিশ্লেষক গবেষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মনে করেন বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়। তিনি পঞ্চাশের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তা সারা বিশ্বের বিস্ময়। আমাদের দেশ এখন বিস্ময়কর দেশ। করোনাবিঘ্নিত পরিস্থিতিতেও এই দেশ মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক স্বীকৃতি পাচ্ছে। তবে অর্থনীতি এগুলেও রাজনীতি পিছিয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি সামলানো না যায় তাহলে তার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। সেই আশঙ্কা রয়েছে।

পদ্মা সেতু এখন সম্পূর্ণ। যুক্ত হলো সমগ্র বাংলাদেশ গবেষক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ফিরে যান পঞ্চাশ বছর আগে। তিনি বলেন, ৫০ বছর আগে আমরা থাকতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের সামনে। ২৫ মার্চ সারারাত, ২৬ মার্চ সারাদিন গোলাগেুলির মধ্যে খাটের নিচে ছিলাম। স্ত্রী ছেলেমেয়েসহ। সাথে ছিল এক টিন টোস্ট বিস্কিট। এই খেয়ে দুদিন কাটিয়েছি আমরা। ২৭ তারিখ গোলাগুলি থামে। সেসময় জাহানারা ইমাম এর ছেলে শহীদ রুমি আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এই দিনটা এলে সেই স্মৃতি মনে পড়ে। আজ ৫০ বছর পরে মাথা উচু করে পরিচয় দেওয়া যায় আমরা স্বাক্ষী। আমরা আগে গোলাম ছিলাম, এখন আমরা বিশ্বের সামনে স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দাঁড় করাতে পেরেছি। গত ৫০ বছরে এগিয়ে চলারই ফল।

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
‘চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হোন’
‘চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হোন’
শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে ঘরের চাল, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে ঘরের চাল, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
সর্বাধিক পঠিত
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি