X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীন-ইরান ২৫ বছরের চুক্তির পর কী ঘটতে যাচ্ছে?

বিদেশ ডেস্ক
৩১ মার্চ ২০২১, ১২:৫৬আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২১, ১৯:৩৭
image

গত সপ্তাহের শেষে চীন ও ইরানের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মাধ্যমে আগামী ২৫ বছর দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন ওই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চুক্তির বিস্তারিত এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন ধারণা করছেন, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের তেল কিনবে চীন। পাশাপাশি ইরানে কিছু বিনিয়োগও করবে বেইজিং।

জেরেমি বোয়েন তার বিশ্লেষণে বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে বিদেশি বিনিয়োগ অনেকটা বন্ধই রয়েছে। চীনের সুবিস্তৃত 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' কর্মসূচির সর্বশেষ সংযোজন এটি। বিশ্বশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে এমন সব যোগাযোগ বাড়াতেই হবে বেইজিংকে।

বোয়েন বলছেন, বেল্ট অ্যান্ড রোডসের চুক্তিগুলো সাধারণত চীনের স্বার্থই রক্ষা করে থাকে। এদের মধ্যে কিছু প্রাথমিকভাবে আকর্ষণীয় মনে হলেও শেষ পর্যন্ত ছোট ও গরিব দেশগুলোর জন্য সেগুলো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন দেখেছে যে চুক্তির উদ্দেশ্য থেকে ছিটকে পড়েছে তারা। গত বছর এই সহযোগিতা চুক্তির খসড়া ফাঁস হওয়ার পর অনেক ইরানি নাগরিক চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ইরান চীনের চেয়ে আকারে ছোট হলেও দেশটির বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রতিবাদী বৈদেশিক নীতির কারণে এর একটি স্বকীয়তা রয়েছে। বোয়েন তাই মনে করছেন, নতুন চুক্তি ইরান ও আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্বের রসদ জোগাবে।

ইরান এবং ওয়াশিংটনে বাইডেন প্রশাসন-দুপক্ষই বলেছে যে, তারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক চুক্তিতে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের যোগ দেওয়ার পক্ষে। এই চুক্তি যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে চুক্তিটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। তিনি দাবি করেছিলেন যে, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র লাভে নিরস্ত্র করার চেয়ে তার প্রক্রিয়া বেশি সহজ ছিল।

ইরানি এবং আমেরিকানরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে ছিল, দুপক্ষেরই আশা ছিল অপর পক্ষ প্রথম পদক্ষেপটি নিক। কারণ, কেউই আসলে আগে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তৈরি ছিল না। জেরেমি বোয়েনের মতে, এখন চীনের সঙ্গে যেহেতু ইরান একটি চুক্তি সই করেছে এবং এই দেশটিও যেহেতু জেসিপিওএ-র অংশ, তাই ধারণা করা হচ্ছে যে, সহযোগিতা শুধু তেল বিক্রির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কারণ, নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে ইরানের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় ইরানকে সুবিধা দেবে বলে ধারণা তার।

জেরেমি বোয়েনের মতে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার দুই পূর্বসূরির মতোই মধ্যপ্রাচ্য থেকে নজর সরিয়ে আরও আকর্ষণীয় ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে বেশি নজর দিতে চান। কিন্তু কার্যত এটা অসম্ভব। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এমন বিষয় প্রচুর পরিমাণেই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইরান এবং এর পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, যেটি তাদের নেই বলে দাবি করে ইরান। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যপ্রাচ্য থেকে নজর সরায়নি, কিন্তু সামনে এগোয়নি তারা। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার অবস্থান আরও পোক্ত করার অনিচ্ছা তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য সুযোগ বয়ে এনেছে।

বোয়েন বলছেন, সিরিয়ার যুদ্ধে জড়ানোর মাধ্যমে রাশিয়া ওই অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুগের ভূমিকা পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। চীন বিশ্বাস করে যে, দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অপূরণীয় পতন হবে। নিজেকে একবিংশ শতাব্দী ও পরবর্তী বিশ্বের উদীয়মান শক্তি হিসেবে মনে করে বেইজিং। আর এ পর্যায়ের শক্তিধর কোনও রাষ্ট্র আসলে মধ্যপ্রাচ্যকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। ইরানের মতো স্বল্প মেয়াদে সুবিধা নেওয়ার চেয়ে কৌশলগত এই সহযোগিতা হয়তো উপসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে চীনের জন্য বেশি গুরুত্ব বহন করে।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র মধ্যপ্রাচ্য সফর শুধু তেহরানে চুক্তি সইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র চায়না ডেইলি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, তিনি পঞ্চমুখী একটি পরিকল্পনার সূচনা করেছেন, যার উদ্দেশ্যে "ফিলিস্তিন-ইসরায়েল আলোচনা শুরু, ইরানের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবন এবং এই এলাকায় একটি সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তুলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা।" বোয়েনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এ ধরনের বিষয়গুলো পশ্চিমা কূটনীতিকরাও বলে থাকেন। তবে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যকে নিজেদের অধিকারে আছে বলেই ধরে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি তাই চেক সই করা ছাড়া অন্য ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিত্রদের মধ্যপ্রাচ্য থেকে দূরেই রেখেছে।

লোহিত সাগরে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এরইমধ্যে তাদের প্রথম বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, যেটি পড়েছে জিবুতিতে। এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত জাহাজ চলাচলে অঞ্চলের ওপর নজরদারি করে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। বোয়েনের প্রশ্ন, বেইজিং কি ইরান উপসাগরীয় এলাকায় তাদের নৌবাহিনীর পদচিহ্ন আঁকতে চায়, যে এলাকাকে নিজেদের হ্রদ বলে মনে করে আমেরিকা?

সবশেষে বোয়েন তার সিদ্ধান্ত টানছেন এভাবে: জো বাইডেন এবং তার প্রশাসন হয়তো ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বা জেসিপিওএ-তে ফিরে আসার একটা পথ বের করে নেবে। নিজেদের স্বার্থেই তারা এটি করবে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে অস্থিতিশীল এলাকায় চীন যে তাদের অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টায় গতি আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেটা আমেরিকার জন্য অস্বস্তিকর হবে।

/এফইউ/বিএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি