X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

আসামে বন্দি রোহিঙ্গা কিশোরীকে ফেরত চান কক্সবাজারে আশ্রিত স্বজনরা

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
০৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:১৯আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২১, ০০:৩৪

অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে দুই বছর ধরে ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরে আটকে থাকা ১৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা কিশোরী রোজিয়া আক্তারকে ফেরত চায় বাংলাদেশে অবস্থানকারী স্বজনরা। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) ওই কিশোরীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে ভারত

সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তী মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি কারও ফিরে আসার উপযোগী নয়, দাবি করে দেশটির অভিবাসন বিভাগ আন্তর্জাতিক সীমান্তের দরজা খুলতে চায়নি বলে জানিয়েছে একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যম।

এ অবস্থায় কিশোরী রোজিয়ার পিতা মো. জাবের আক্তার (৪৩) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৃহস্পতিবার সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর মেয়ের সঙ্গে মোবাইলফোনে কথা হয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তারা আমার মেয়েকে জানিয়েছেন, এবার তাকে এখানে আমাদের কাছে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে।

তিনি জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে এসে কক্সবাজার জেলার উখিয়ার কুতুপালংয়ের এক নম্বর ক্যাম্পের আশ্রয় নেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই কিশোরীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই যৌক্তিক। কারণ যেখানকার মানুষ সেখানে পাঠানোই আইনসম্মত।’

‘কূটনৈতিকভাবে ভারত থেকে কোনও রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা এখানকার নাগরিক নয়। কোনও দেশ চাইলে শরণার্থীদের এখান থেকে তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু কাউকে আমাদের এখানে পাঠাতে পারে না’, যোগ করেন তিনি।

পরিবারের বাকি ছয় সদস্যকে নিয়ে বাংলাদেশে বসবাসকারী জাবের জানান, মেয়েকে ফেরত পাওয়ার জন্য তিনি বহুবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র লুইসের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আরআরআরসি শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের জানিয়ে কোনও লাভ নেই। বিদেশ থেকে কেউ কীভাবে আসবে, না আসবে তার জন্য ইউএনএইচসিআর-কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ করতে হবে।

‘ইউএনএইচসিআর কোনো শরণার্থীকে ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসার পরই তার কেউ এখানে আছে কিনা, তা যাচাই করার সুযোগ পাই আমরা’, যোগ করেন আরআরআরসি।

কোনো অনুরোধ পায়নি বাংলাদেশ

এদিকে রোজিয়ার খবরটি জানার কথা উল্লেখ করে ডিজি দেলোয়ার বলেন, ‘ওই কিশোরীর বিষয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক কোনও অনুরোধ পায়নি।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে মিলিত করার বিষয়টি কি অন্যভাবে হতে পারে না? এখানে (বাংলাদেশ) যারা আছেন, তাদের সেখানে (আসাম) নেওয়া যেতে পারে না? বাংলাদেশের যতুটুক সামর্থ্য তার চেয়ে অনেক বেশি রোহিঙ্গাদের জন্য করেছে। এখন অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোরও তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।’

মেয়েকে ফিরে পেতে চান রোহিঙ্গা সদস্য জাবের বাংলাদেশি মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘মাত্র ১৪ বছরের এক উদ্বাস্তু কিশোরী দুই বছর ধরে অভিভাবকহীন অবস্থায় বন্দি আছে। তাকে যেকোনও উপায়ে পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া দরকার। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে সেটা ভারতে বসে হোক বা বাংলাদেশে। এটাকে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়।’

ভারতীয় মানবাধিকার কর্মীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি ইতোমধ্যে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জানিয়ে লিটন বলেন, এই বিষয়টির আইনগত দিকগুলো খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা।

দু'বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য আটক হওয়ার পর রোজিয়া আসামের শিলচরে যে বেসরকারি সংস্থার আশ্রয়ে ছিল, সেই নিবেদিতা নারী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা দিবা রায় রয়টার্সকে বলেন, তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল যে মিয়ানমারে মেয়েটির পরিবার নেই। মেয়েটিকে স্থানীয় পুলিশে সোপর্দ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, আসাম পুলিশের আট সদস্য বৃহস্পতিবার তাকে নিয়ে মণিপুর রাজ্যের একটি সীমান্ত থেকে ফিরে এসেছে। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশের ক্ষমতা দখলের পর ভারত থেকে সেখানে ফেরত যাওয়া প্রথম রোহিঙ্গা নাগরিক হতো ওই কিশোরী। আপাতত তাকে শিলচরের আশ্রয়কেন্দ্রে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ভারতে মানবাধিকার কর্মী তপন বোস ও তার সাউথ এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটসের সহকর্মীরা এটা নিয়ে সোচ্চার আছেন বলে জানিয়েছেন নূর খান লিটন। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ ওই কিশোরীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ায় নয়াদিল্লির সমালোচনা করেছে এবং কর্তৃপক্ষকে প্রক্রিয়াটি বন্ধ করার আহবান জানিয়েছে। 

উখিয়ায় আশ্রিত রোজিয়ার বাবা জাবের বলেন, মিয়ানার সেনাবাহিনীন অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে স্বপরিবারে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। ২০১৯ সালে মার্চ মাসে উখিয়ার জামতলীতে মামার কাছে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হন তার বড় মেয়ে রোজিয়া। পরে জানতে পারেন, সেখান থেকে আরও কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভারতে যাত্রা করে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে সে।

জাবের আক্ষেপ করে বলেন, ‘এক বছর নয় মাস পেরিয়ে গেছে, মেয়েকে চোখে দেখি না। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়। জানি না এখন আমার মেয়েটার কি হবে, খুবই চিন্তায় আছি। মেয়েকে ফেরত আনতে এখানকার দাতা সংস্থাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে অনেক ঘোরাঘুরি করছি, কোনও সুরাহা পাইনি।

বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমারের বুশিডংয়ের থমবাজার এলাকায় চাষবাদ করে পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে অনেক ভালো ছিলেন বলেও জানান জাবের।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ