X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবারও দুশ্চিন্তায় তরমুজ চাষিরা

বরগুনা সংবাদদাতা
০৯ এপ্রিল ২০২১, ১১:১৯আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১১:১৯

যেমন আশা করেছিলেন, তেমন ফলনেই পেয়েছেন বরগুনার তরমুজ চাষিরা। বিক্রির জন্য এরইমধ্যে ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলছেন তারা। কিন্তু পাইকার ও ক্রেতার দেখা নেই। বিক্রির ভরা মৌসুমে করোনা মহামারির প্রকোপে ও সরকারের দেওয়া লকডাউনে বাজারের এ অবস্থা। স্থানীয় কিছু পাইকার তরমুজ কিনলেও পরিবহন সংকট রয়েছে চরমে। আর এতেই বিপাকে পড়েছেন তরমুজ চাষিরা। যারা ঋণ নিয়ে তরমুজের আবাদ করেছেন তাদের অবস্থা আরও করুন। তরমুজ চাষিরা দাবি করেছেন, সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় তরমুজ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলে বেঁচে যান তারা। দুশ্চিন্তায় তরমুজ চাষিরা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরগুনা কার্যালয়ের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে বরগুনা জেলায় চার হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গেন্ডারী, টকটেন, ড্রাগন, কালো জাম্বু জাগুয়ার, ওয়ার্ল্ড কুইনসহ বেশ কয়েকটি উন্নত জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে। এবারও সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে। ওই এলাকার দুহাজার ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এরপর আমতলী উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া এই দুই ইউনিয়নে মোট এক হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।

কৃষকরা জানান, গত বছরের লোকসান কাটাতে এ বছর বরগুনায় তরমুজের আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজের চাষ করেছেন কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর তরমুজ চাষিরা লাভের আশা করছিলেন। কিন্তু লকডাউনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা না আশায় বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন তারা। 

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, রাজধানীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বরগুনার তরমুজ বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও এ অঞ্চলের তরমুজ গাজীপুর, বগুড়া, কুমিল্লা, গাইবান্ধা টাঙ্গাইলেও বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছরও ঠিক বিক্রির সময়ে করোনার কারণে ওইসব এলাকা থেকে পাইকার আসছেন না। ফলে তরমুজ বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। পচনশীল এই কৃষিপণ্য যথাসময়ে বিক্রি না করতে পারলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের আতঙ্কিত, এবারও ক্রেতার  লোকসান গুনতে হবে তাদের। আশানুরূপ ফলন পেয়ে খুশি হয়েছিলেন বরগুনার তরমুজ চাষিরা

বরগুনা সদর উপেজলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের কয়েকজন তরমুজ চাষি জানান, রবি মৌসুমে তারা স্থানীয় আরতদার, বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করে থাকেন। ওই ইউনিয়নের চালিতাতলী এলাকার তরমুজ চাষি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘স্থানীয়দের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে দেড় একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। ফলনও আশানুরূপ হয়েছে। কিন্তু পাইকার আসছে না। যে কারণে তরমুজ বিক্রি করতে পারছি না। স্থানীয় বাজারে কিছু তরমুজ বিক্রি করেছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে অধিকাংশ তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের লাভ তো দূরে থাক, লোকসান গুনতে ভিটেমাটি বিক্রির উপক্রম হবে।’

লতাকাটা এলাকার মন্টু মিয়া বলেন, ‘গতবছরও একই সময়ে করোনার প্রকোপে পাইকার আসেনি। ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে বেশিরভাগ তরমুজ। এ বছরও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, সরকার আমাদের তরমুজ বিক্রির ব্যবস্থা করুক। নয়তো আমরা বড় লোকসানের মুখে পড়বো।’ 

আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের তরমুজ চাষি আলমগীর আকন, কামাল হাওলাদার, শহীদুল গাজী, মাহবুব মাতুব্বর, লিমন গাজী ও মাহাতুল মল্লিকসহ বেশ কয়েকজন তরমুজ চাষি  বলেন, এ বছর আশা করেছিলাম ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করবো। কিন্তু লকডাউনে গাড়ি আসে না। ইতোমধ্যেই তরমুজ নষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে। তরমুজ বিক্রিতে আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করি।

একই উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী গ্রামের ওহাব মৃধা, বাহাউদ্দিন হাওলাদার ও রাজ্জাক মৃধা বলেন, গত বছর লকডাউনের কারণে পাইকার এসেও পরিবহন সংকটের কারণে তরমুজ কিনতে পারেনি। তাই কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এ বছরও লকডাউন থাকলে তরমুজ নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে। তরমুজ ক্ষেত

আমতলীর স্থানীয় পাইকার সোহেল রানা বলেন, ‘বরগুনার উৎপাদিত তরমুজের দুই তৃতীয়াংশ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। লকডাউন শুরু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা এ বছর তরমুজ ক্রয়ে অনিহা দেখাচ্ছেন। ফলে তরমুজ বিক্রি নিয়ে একপ্রকার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বাজার অনুসন্ধানকারী টি এম মাহবুবুল হাসানের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তরমুজ বিক্রির বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তরমুজ চাষি ও স্থানীয় পাইকার আড়ৎদারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের তরমুজ পরিবহনের ব্যপারে সহায়তা দেবো। তরমুজ পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনও প্রকার বাধার সৃষ্টি যাতে না হয় সে ব্যাপারে আমরা কৃষি বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে বিশেষ ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রস্তত।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘কৃষি বিভাগের সহায়তায় এ বছর বরগুনায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক যাতে বিক্রি নিয়ে কোনও বিপাকে না পড়ে আমরা তাদের সে ব্যাপারে যথা সম্ভব সব সহায়তা দিতে প্রস্তত।’

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের ওপর ডাকাতের হামলা
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!