X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গোলাপী এখন নৌকায়

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
১০ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২৪আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২৫

বউয়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে নৌকায় মাকে নিয়ে থাকেন নুরু মিয়া। গ্রামে একাধিক শালিশ দরবার করে কোনও সমাধান হয়নি। তাই বউ-ছেলে রেখে মাকে নিয়ে তার নৌকায় বসবাস এখন জয়ন্তী নদীতে।

তার মায়ের নাম গোলাপী বেগম, বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। মাকে নিয়ে নুরু মিয়া বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা নির্বাহ করেন জয়ন্তী নদীতে মাছ ধরে। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়েই দুইজনের চলে। যেদিন কিছু পান না, সেদিন দুজনেরই দিন পার হয় অনাহারে। তবে এত বয়স হলেও তার মা গোলাপী এখনও পাননি কোনও সরকারি সুবিধা। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে ঘুরেও কাজ হয়নি। মেলেনি বয়স্ক ভাতা। 

নুরু মিয়া (৫৩) ও তার মা গোলাপী (৮৭) নৌকার বাসিন্দা হলেও দুজনেই শরীয়তপুর জেলা ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের ভোটার।

জয়ন্তী নদীর পাড়ে কথা হয় গোলাপী বেগমের সঙ্গে। স্মৃতি হাতরে তিনি বলেন, কুমিল্লা ছিল তার আদি নিবাস। সেখানে অনেক জায়গা সম্পত্তির মালিক ছিলেন তার (গোলাপীর) বাবা। বাবা মারা যাওয়ার পর জায়গা সম্পত্তি পাওয়ার লোভে তার আপন চাচা তাকে ছোটবেলাতে ৬০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। সে আমলে মেয়েদের প্রতিবাদের তেমন উপায় ছিল না। তাই বিয়ে দেওয়ায় স্বামীর কাছে চলে আসেন। স্বামী ভক্ত গোলাপী স্বামীর নাম মুখে নেওয়া পাপ বলে তার নাম মুখে নেননি। তবে ছেলে জানায়, তার বাবার নাম মৃত আশ্রাফ আলী।

গোলাপী বলেন, ‘৫০ এর প্রথম গণ্ডগোল (দেশভাগের পর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা) আমি নিজের চোখে দেখেছি। অনেক ইতিহাস মনে আছে। যুদ্ধের সময় আমি আমার স্বামীকে নিয়ে নদীতে ছিলাম। স্বামী মরার পর এখনও সেই নদী আমার ঠিকানা।

গোলাপী আরও বলেন, আমি ঢাকার এক বস্তিতে ছিলাম। ছেলে আমাকে জোর করে দেশে নিয়ে আসে। আসার পর থেকে ছেলের বউ আমাকে দেখতে পারে না। বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে দরবার সালিশ হয়। পরে ছেলে আমাকে নিয়ে নেমে পড়ে নৌকায়। আজও ১৩ বছর ধরে ছেলে আমার এই নৌকা দিয়ে মাছ ধরে। যা রোজগার হয়, তাই দিয়ে সংসার চলে মা-ছেলের। যদি কিছু না পায় তা হলে না খেয়ে থাকতে হয় আমাদের। এছাড়া উপায় কী আর আমাদের।

নুরু মিয়া ও তার মা গোলাপী বেগম

নুরু মিয়া বলেন, মায়ের ঢাকা থেকে আসার পর বউয়ের সাথে বনিবনা হয় না। সব সময় মায়ের সাথে বউ ঝগড়া করে। কখনও কখনও তার গায়ে হাত তোলার জন্য তেড়ে আসতো। আমি বাড়িতে থাকতাম না, কাজ কাম করার জন্য চলে যেতাম। আসলে মা কাঁদতো আর বলতো। কয়েকবার বলছে যে আমাকে যেখান থেকে আনছত সেখানেই রেখে আস। তা হলে তুই ভালো থাকবি। আমি বউকে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু, কোনও কাজ হয়নি। কয়েকবার স্থানীয় দরবার হয়েছে। সব হয়, কিন্তু বউ মানে না। এতে সব শেষ হয়ে যায়। পরে মাকে নিয়ে নিজের টাকা দিয়ে বানানো নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ১২ থেকে ১৩ বছর হলো আজও বাড়ি ফিরি নাই। এখন নৌকায় মা-ছেলে থাকি। আমি মাছ ধরি। এটা দিয়েই সংসার চলে।

আপনার মা বয়স্ক ভাতা বা সরকারি কোনও সুবিধা পান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বার আর গণ্যমান্য লোক কেউ বাকি নাই যে যাইনি। এখন আর চাই না। তারা মুখ দেখে দেখে দেয়। আমরা গরিব মানুষ, কেউ ব্যবস্থা করে দেয় না।

নৌকায় বাস করা এই বৃদ্ধা নারীর বিষয়ে জানালে ডামুড্যা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার ওবায়দুর রহমান বলেন, এখন আর কারও কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। অনলাইনে আবেদন করলেই হয়। আমি গোলাপীর ব্যাপারে জানি না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

টিএন
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা