X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে স্মারকগ্রন্থ

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ভাবনায় বঙ্গবন্ধু

বাহাউদ্দিন ইমরান
১৩ এপ্রিল ২০২১, ২০:০৩আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ২০:০৪

স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আপসহীন ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসের এই মহান বীরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ইতিহাসের মহানায়ক’ নামে একটি স্বারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। বিচার বিভাগের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে বইটিতে উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা।

বইটি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আইনজীবী, আদালত, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগ নিয়ে বঙ্গবন্ধু কী ভেবেছিলেন, সেই বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতেই আমাদের এই প্রকাশনা। একইসঙ্গে স্মারক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন, বাঙালি জাতিসত্তার আত্মপ্রকাশে তার রাজনৈতিক সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার স্বপ্নের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশ্লেষণমূলক ও স্মৃতিচারণমূলক লেখা প্রকাশ হয়েছে।’

বইটিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী ও শিক্ষকদের লেখাও রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ভাবনার কিছু অংশ বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

শুরুতেই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ন্যায়ের শাসনের অনন্য প্রতীক সুপ্রিম কোর্ট। আমাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও মুজিব শতবর্ষকে যথাযথ মর্যাদায় পালন স্বাধীন এ প্রতিষ্ঠানের আবশ্যিক চেতনাগত দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের অন্যতম অণুষঙ্গ হলো মুক্তি উপলক্ষে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ। আশা করছি এ স্মারকগ্রন্থে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে-প্রত্যাশায় স্বাধীন বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ব্যবস্থার যে স্বরূপ পরিগ্রহ করেছিল তার একটি চিত্র যথাযথভাবে ফুটে উঠবে।’

সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে দেখার ভাগ্য আমার আর কোনও দিনই হবে না। তবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, উনার দেখানো পথ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সোনার বাংলা গড়ার জন্য উৎসাহিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান লিখেছেন, ‘৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বিচার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজনও যদি সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর উচ্চারিত এই বাক্যটির যে নিগূঢ় অর্থ আছে তা আইনের চোখে সমতা এবং ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, গোষ্ঠীভেদে বৈষম্যহীনতার বেদবাক্য হিসেবে পৃথিবীর সকল সভ্য দেশের সংবিধানে স্বীকৃত।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের বর্তমান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ‘বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীগণ অবিচল আস্থা ও আনুগত্যের বন্ধন’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তাতে একটি অংশে তিনি লিখেছেন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে যখন জাতির জনককে এ দেশের কিছু নরপশু সপরিবারে হত্যা করে ঠিক তখন জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামান তাঁদের নেতার আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে হাসিমুখে কারাবরণ করতে দ্বিধা করেননি। কারা অভ্যন্তরে তাঁরা তাঁদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ছিলেন তাঁদের নেতা এবং তাঁর মৃত্যুর পরও তারা তাঁর (বঙ্গবন্ধু) আদর্শ থেকে এতটুকু বিচ্যুত হননি। জীবন দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন এই জাতীয় চার নেতা। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন তাঁদের জীবনে এরূপ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারে এই কামনা করি। সেই সঙ্গে তারা যেন ঘৃণা করে কপট বিশ্বাসঘাতকদের।’

‘আইন-আদালত-বিচারব্যবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অভিজ্ঞতা ও ভাবনা’ শিরোনামে লিখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনি লিখেছেন, ‘কারাগার, আইন-আদালত ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অভিজ্ঞতা, মূল্যায়ন, ভাবনা ও প্রত্যয়সমূহ বর্তমান সময় হতে ৬০-৭০ বছর আগের। কিন্তু তাঁর ওইসব মূল্যবান অভিজ্ঞতা, মূল্যায়ন, দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যয়সমূহকে যদি বর্তমান সময়ের আইন-আদালত-বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়, তবে বলতে দ্বিধা হওয়ার কথা নয় যে, বঙ্গবন্ধু যেন বর্তমান সময়ের বাস্তবতাকেই লিখে গেছেন। আরও বলতে দ্বিধা নেই যে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার-স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অঙ্গীকার পূরণে এখনও অনেক করণীয় রয়েছে, যার দায়ভার মূলত রাষ্ট্রের নির্বাহী ও বিচার বিভাগের। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিষয়টি গভীর আন্তরিকতা ও অঙ্গীকার নিয়ে ভাবতে হবে। প্রণয়ন করতে হবে যথাযথ কর্মকৌশল, জাতির জনকের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে এবং তার রক্তঋণ পরিশোধের জন্য।’

বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক লিখেছেন, ‘আজ যখন আমাদের দেশের দুই পয়সার চার পয়সার লোক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটু কথা বলার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে, তখন তাদের মূর্খতার জন্য করুণা হয়। অবশ্য তাদের বিরাট অংশ ৭১-এর পরাজিত অপশক্তির অংশ বা তাদের বংশধর, যারা স্বাধীন-ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চায়নি, চায়নি পাকিস্তানের শোচনীয় পরাজয় এবং ভেঙে যাওয়া।’

/এফএ/
সম্পর্কিত
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারদের শ্রদ্ধা
‘বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উৎসাহিত করেছিল’
সর্বশেষ খবর
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের সংশোধনের উপায় কী
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়