X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘শস্যভাণ্ডারে’ উপচে পড়া আলুর উৎপাদন, সংরক্ষণের জায়গা নেই

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
১৭ এপ্রিল ২০২১, ২২:৩৪আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ২২:৩৯

সরকারিভাবেই দেশের অন্যতম ‘শস্যভাণ্ডার’ বা ‘ফসলের ভাণ্ডার’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় দিনাজপুর জেলাকে। সম্প্রতি সফরে এসে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, এই জেলার মাটি এত ঊর্বর যে বিশ্বের যে কোনও ফসল ভালোভাবে ফলানোর ক্ষমতা রাখে। তিনিও এই জেলাকে দেশের ‘শস্যভাণ্ডার’ বা ‘ফসলের ভাণ্ডার’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গিয়েছেন। সেই জেলায় ব্যাপকভাবে আলুর চাষ ও উৎপাদন হলেও দক্ষিণের সাত উপজেলার চাষিরা তাদের ফসল সংরক্ষণ করতে পারছেন না। এর একমাত্র কারণ জেলার সাতটি উপজেলায় রয়েছে মাত্র একটি আলু সংরক্ষণ উপযোগী হিমাগার। আর কৃষক ও তাদের উৎপাদিত আলুর পরিমাণ বেশি হওয়ায় এই হিমাগারে সবার জায়গা সংকুলান হচ্ছে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী এই সাতটি উপজেলায় যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে তার মাত্র ৩ শতাংশ আলু সংরক্ষণের জায়গা আছে এই কোল্ড স্টোরেজে। এদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সংরক্ষণ নয় বরং উদ্যোগ নিতে হবে রফতানিতে।

ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ, দিনাজপুর

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের দক্ষিণ দিকের চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পার্বতীপুর, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক আলু চাষের সঙ্গে জড়িত। এই সাত উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমি। তবে চাষ হয়েছে এরচেয়েও বেশি ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন।

উপজেলা ভিত্তিক হিসেবে ফুলবাড়ীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮২০ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে দুই হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে, চিরিরবন্দরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৭৯০ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে, বিরামপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৬৯ হেক্টর আর চাষ হয়েছে এক হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে, নবাবগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪৪৯ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে এক হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে, হাকিমপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯০ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে ৯০৫ হেক্টর জমিতে, ঘোড়াঘাটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৫৫০ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে এক হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ও পার্বতীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৯৭৬ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে আলুর উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ৯ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন।

মাঠ থেকে তোলা হচ্ছে আলু।

এদিকে এই ৭ উপজেলার মধ্যে আলু সংরক্ষণের জন্য একটি মাত্র হিমাগার রয়েছে ফুলবাড়ীতে। ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ নামে এই হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ক্ষমতা ৬০ কেজি ওজনের এক লাখ ৫৬ হাজার বস্তা। অর্থাৎ ৯ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন। যা এই ৭ উপজেলায় উৎপাদিত আলুর মাত্র ৩.০৩ শতাংশ।

হিমাগারে পর্যাপ্ত পরিমাণে সংরক্ষণের স্থান না থাকায় চরম লোকসান ও দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন এই ৭টি উপজেলার আলু চাষিরা। অনেকে বাধ্য হয়েই কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন আলু। এমনকি যারা বীজ তৈরি করেছেন তারাও পড়েছেন বিপাকে।

ফুলবাড়ী উপজেলার গোপালপুর গ্রামের আলু চাষি সুবাস চন্দ্র বলেন, গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় এবছর এলাকার কমবেশি সব কৃষকই বেশি করে আলু চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকাসহ প্রাকৃতিক কোনও দুর্যোগ না আসায় এবছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় কমেছে দাম। প্রথম দিকে বাজারে আলুর একটু আশানুরূপ দাম পাওয়া গেলেও এখন দাম পড়ে গেছে। তিনি বলেন, আলু এবং আলু বীজ হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারলে আগামীতে ভালো দাম পাওয়া যেতো। কিন্তু হিমাগারে জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তারা তাদের আলু বিক্রি করে দিয়েছেন।

একই কথা বলেন উপজেলার লালপুর পাঠকপাড়া গ্রামের প্রদীপ কুমার। তিনি বলেন, আলু সংরক্ষণের জায়গা নেই। তাই কম মূল্যেই আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। যদি আরও কয়েকটি হিমাগার থাকতো তাহলে ভালো হতো।

উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের আলু চাষি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক চেষ্টা করে ৩০০ বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পেরেছি। গত বছরগুলোতে আলু সংরক্ষণ করেছিলাম এক হাজার থেকে দেড় হাজার বস্তা। আবার কিছু আলু বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করেছি।

ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘হিমাগারে এক লাখ ৫৬ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণের জায়গা আছে। ধারণ ক্ষমতার পুরোটাই ভরে গেছে। তাই হিমাগারের প্রধান দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও চাষিরা আলু নিয়ে এসে ভিড় করছেন। কিন্তু, হিমাগারে তো আর জায়গা নেই, বাধ্য হয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। তবে এবছর ব্যবসায়ীদের চেয়ে কৃষকদের আলু বেশি সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছরে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর আলুতে আশানুরূপ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এবছর বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। হিমগারে জায়গা সংকট হচ্ছে। তবে যদি ব্যবসায়ীরা আলু রফতানিতে ভূমিকা রাখে তাহলে কৃষকরা সন্তোষজনক দাম পাবেন ও লাভবান হবেন।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
ইউক্রেনের অন্তত ৭টি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম প্রয়োজন: ন্যাটোকে জেলেনস্কি
ইউক্রেনের অন্তত ৭টি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম প্রয়োজন: ন্যাটোকে জেলেনস্কি
শিশু হাসপাতালে তিন দিনের ব্যবধানে দুবার আগুন!
শিশু হাসপাতালে তিন দিনের ব্যবধানে দুবার আগুন!
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!