চলমান লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা তল্লাশি চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যারা ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বের হয়েছেন, তাদের কাছে তা দেখতে চাওয়া হচ্ছে। মুভমেন্ট পাসের তারিখ নিশ্চিত হলেই তাদেরকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়কে রয়েছে যানবাহনের চাপ। অনেক জায়গায় যানবাহনকে সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্রাইভেট কার ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলছে সিএনজি রিকশা। গণপরিবহন না থাকায় অনেককেই রিকশায় করে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
একদিকে রমজান মাস, অপরদিকে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। পুলিশ বলছে, তারা ধৈর্য ধরে জনসেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। তবে অনেক জায়গায় বেশকিছু বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দেশনা এসেছে— জনগণের সঙ্গে আরও সমন্বয় করে কাজ করার জন্য। তবে যেসব বিষয়ে অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে, সেসব বিষয় মাথায় রেখেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন বলে জানান সড়কে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেই ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে, এমনকি পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার কথা বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। যারা একান্তই জরুরি বাইরে বের হচ্ছেন, তাদেরকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের গাবতলী জোনের পুলিশ সার্জেন্ট আলমগীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজও রাজধানীতে গাড়ির চাপ রয়েছে। যারা অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া বিদেশগামী যেসব যাত্রী রয়েছেন, টিকিট দেখে নিশ্চিত হয়ে তাদেরকে বিনা বাধায় যেতে দিচ্ছি।’
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট উজ্জল হোসেন জানান, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে যতটা সম্ভব বাইরে বের না হতে নগরবাসীর প্রতি তারা আহ্বান জানান। আর যারা বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের মুভমেন্ট পাস রয়েছে কিনা, তা দেখা হচ্ছে। যৌক্তিক কোনও কারণ উপস্থাপন করতে পারলে তাদের আমরা গন্তব্যে যেতে দিচ্ছি।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় যারা বের হয়েছেন— তাদের পুলিশি তল্লাশিতে পড়তে হয়েছে। পুলিশি জেরার মুখে তারা তাদের গন্তব্য সম্পর্কে যৌক্তিকতা তুলে ধরছেন। এ সময় দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে চেকপোস্টের নির্দেশ না মেনে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে চলে যায়। আবার মোটরসাইকেলে যারা দু’জন করে আরোহী নিয়ে চলছেন, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যৌক্তিক কোনও বিষয় না থাকলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
এ সময় দায়িত্বরত কর্মকর্তা মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের পল্লবী জোনের পুলিশ সার্জেন্ট বিকাসুজ্জামান রনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা সরকারি নির্দেশ অমান্য করে অযৌক্তিক কারণে রাস্তায় বের হয়েছেন, সেধরনের বিষয়গুলো আমরা তদারকি করছি। যৌক্তিক কোনও উত্তর না পেলে মামলা দেওয়া হচ্ছে। মুভমেন্ট পাস নিয়ে যারা বের হয়েছেন, পাসের তারিখ ও সময় সম্পর্কে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে যত্রতত্র রাস্তায় ঘোরাফেরা করা, অপ্রয়োজনে দোকানপাট খোলা রাখার বিষয়টি দেখভাল করতে দুপুরের দিকে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি অলিগলিতে অভিযান চালানো হয়। এই অভিযান চালান মিরপুর জোনের এসি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাইনুল হাসানের নেতৃত্বে মিরপুর থানার সদস্যরা। এ সময় তিনি কলওয়ালপাড়া, জনতা হাউসিংসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দোকানিরা দ্রুত দোকানের শাটার নামিয়ে যে যার মতো সরে পড়েন।