বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) থেকে প্রথম চেক বা সম্মানী পেয়ে যে কেউ উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা! রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রচারমাধ্যম বলে কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা গেলো প্রশংসিত সুরকার-সংগীত পরিচালক পার্থ মজুমদারের বেলায়। তিনি প্রকাশ্যে জানালেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। ঘোষণা দিলেন, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আর কাজ না করার।
সম্প্রতি বিটিভির জন্য ৮টি গান তৈরি করেছেন তিনি। পেয়েছেন এর পারিশ্রমিকও। তবে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মূল্যায়নে বেজায় নাখোশ হলেন। হওয়ারই কথা। ৮টি গানের সুর, সংগীত পরিচালনা ও রিহার্সেলের জন্য তার মোট সম্মানী মিলেছে মাত্র ৮১৭২ টাকা!
ক্ষুব্ধ পার্থ তাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক মাধ্যমে। লিখেছেন, ‘বিটিভিতে সংগীত পরিচালক হিসেবে আমার প্রথম কাজের পারিশ্রমিক বাবদ ৮১৭২ টাকা বুঝিয়া পাইলাম। ৮টি মৌলিক গানের সুর, ১ দিন মহড়া ও ১ দিন সংগীত পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। এই হলো তার পারিশ্রমিক।’
বিটিভিকে এর বিপরীতে ১০ হাজার টাকা দিয়ে সুরগুলো ফেরত নেওয়ার কথাও জানান পার্থ। বলেন, ‘আমি ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি আছি। আমার সুরগুলো ফেরত দেওয়া হোক। দয়া করিয়া কোনোদিন আমাকে আর ডাকিবেন না। যে দেশে সুকর্মের মূল্য নাই, সে দেশের উন্নতি হতে পারে না। বিদায়।’
বিটিভি কর্তৃপক্ষকে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ইহা আমার অভিমান, হয়তো ইহা আপনাদের নিয়ম, কিছুই করার নাই। এই দৈন্যদশাই আমাদের ওপরে ওঠার পথে অন্তরায়! যতদূর জানি, সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন, তবে এ দশা কেন?’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিটিভি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা কেন্দ্রের মহাপরিচালক নাসির মাহমুদ এ বিষয়ে কথা বলেন।
আজ (২২ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটায় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা ও রোজার কারণে আমাদের অফিস এখন সংক্ষিপ্তভাবে চলছে। আজ ইতোমধ্যে অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সঠিক তথ্যটি এ মুহূর্তে জানানো সম্ভব নয়। তবে আমাদের বিভিন্ন গ্রেড থাকে। সে অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। গ্রেডের বিষয়টি নির্ভর করে শিল্পীর তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় থেকে। আমাদের দেশের অনেক জনপ্রিয় শিল্পীই আছেন যাদের বাইরে পারিশ্রমিক অনেক বেশি। কিন্তু শুরুর ক্যাটাগরি হওয়ায় বিটিভিতে পারিশ্রমিক কম দিতে হয়। যে কারণে আমরা চাইলেও তাদের দিয়ে কাজ করাতে বা তারাও কম টাকায় কাজ করেন না। নির্দিষ্ট করে এই অভিযোগের (পার্থ মজুমদার) বিষয়ে এখনই বলা কঠিন। তবে আমাদের অফিস খুললে বিস্তারিত বলা যাবে।’
ক, খ, গ-সহ বেশ কয়েকটি তালিকায় বিটিভি শিল্পীর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে থাকে। নতুন যুক্ত হওয়া শিল্পীরা শেষের দিকের গ্রেড পান।
এদিকে পার্থ মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘অনেক আশা নিয়ে এ বছরই আমিসহ অনেকেই বিটিভিতে তালিকাভুক্ত হই। স্বপ্ন ছিল রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য ভালো কিছু কাজ করবো। সেই ভরসায় শুরুটাও করেছি। কিন্তু চেক পাওয়ার পর দেখলাম একটি গানের সুর-সংগীতের দাম ৫শ টাকাও নয়! এটা খুবই হতাশার বিষয়।’
এদিকে বিটিভি সূত্রে জানা গেছে, সংগীতের জন্য গ, খ, ক, উচ্চ ও বিশেষ- এই পাঁচ ক্যাটাগরিতে সম্মানী দেওয়া হয়। এরমধ্যে একই বিভাগেও কিছু ভাগ রয়েছে।
