X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পেশা বদলেছেন রানা প্লাজার পোশাক কর্মীরা

উদিসা ইসলাম
২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৫০আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৫৯

২৭ বছরের কোহিনুর, রানা প্লাজা ধসে আহত সাবেক গার্মেন্ট শ্রমিক। গত চার বছর কাজ করছেন গৃহকর্মী হিসেবে। ভারী কাজ করতে গেলে কোমরে এখনও ব্যথা পান। তাই ‘ছুটা বুয়া’র কাজ করেই দিন কাটছে তার। আয় মাসে পাঁচ হাজার, কোনও মাসে আরেকটু কম। কেন গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করলেন না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দীর্ঘসময় কাজ করার পরিস্থিতি নেই। আর ভয়াবহ সেই স্মৃতি মনে করে ভয়ও লাগে। ফলে আর কারখানায় না গিয়ে, বাসাবাড়িতে কাজ নিয়েছি। ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে কী করেছেন জানতে চাইলে বলেন, আমার হাত-পা কাটা পড়েনি, ভাঙেনি, কিন্তু কোমর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটা নাকি তেমন ক্ষতি না। অনেকের মতো তাই বেশি টাকা আমি পাইনি। যেটুকু পেয়েছি এলাকায় একটু জমি কিনে রেখেছি। কয়দিন কাজ করতে পারবো কে জানে। নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থাতো নিজেকেই নিতে হবে, রানা প্লাজা সেই শিক্ষা দিয়েছে।

রানা প্লাজা ধসের আট বছর পূর্তি উপলক্ষে একশনএইড বাংলাদেশের করা এক জরিপ বলছে, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কাজে থাকা ৪৩ শতাংশ শ্রমিকের ১২ শতাংশ বর্তমানে পোশাক কারখানায়, ১২ শতাংশ দরজি, ৩ শতাংশ কৃষিকাজ, ২.৫ শতাংশ দিনমজুরি, ২ শতাংশ গৃহকাজ, সাড়ে ৩ শতাংশ বিক্রয়কর্মী এবং ৭ শতাংশ অন্যান্য কাজে যুক্ত আছেন।

৪ কারণে কাজে ফিরতে পারেননি রানা প্লাজার আহত শ্রমিকরা

তবে করোনাকালে আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্ব বেড়ে গেছে। ২০১৯ সালে ৫১ শতাংশ শ্রমিক বেকার ছিলেন। গত বছর সেটি বেড়ে ৫৭ শতাংশ হয়েছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

করোনাতে হয়েছে অবস্থার অবনতি
রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা আহত ও বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের নিয়ে নানা জরিপ করেছে। তাদের কত শতাংশ এখনও শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভুগছেন, কত শতাংশ মানসিক ট্রমা থেকে বের হতে পারেননি তার উত্তর খোঁজার কাজ চলছে।

একশনএইডের সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে, রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৯২ শতাংশই করোনাকালে সরকারের কোনও সহায়তা পাননি। মাত্র ৮ শতাংশ শ্রমিক অল্প কিছু সহায়তা পেয়েছেন। ১৪ শতাংশ শ্রমিকের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। তারা মাথাব্যথা, হাত ও পায়ে ব্যথা এবং কোমরব্যথার সমস্যায় ভুগছেন। আবার সাড়ে ১২ শতাংশ শ্রমিক মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন। সংখ্যাটি ২০১৯ সালেও ছিল সাড়ে ১০ শতাংশ। এর মানে ২ শতাংশ শ্রমিকের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে।

শ্রমিকের নিরাপত্তা অবহেলিত
প্রাণে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা দুঃসহ জীবন যাপন করছেন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, ন্যায্যমজুরি দূরে থাক, শ্রমিকদের যেকোনও বিপদে একরকম জোর করে ঠেলে দেওয়ার মতো ঘটনাও হরহামেশা ঘটছে। তারা বলছেন, মালিকের মুনাফার শিকার হচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা। লকডাউনে যখন সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে, তখন কারখানা খোলা রেখে শ্রমিককে বাইরে আসতে বাধ্য করা যায় না।

রানা প্লাজা থেকে করোনা বিপর্যয় সবখানেই শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের আচরণ জুলুমের। এমনকি রানা প্লাজার ঘটনার পরে যে অ্যাকোর্ড ও অ্যালায়েন্স এসে কারখানা শ্রমিক বান্ধবের নামে কাজ করেছে, তাও মালিকদের পক্ষেই গেছে বলে অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের।

গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার বলেন, রানা প্লাজার ঘটনার পর ব্র্যান্ড বা বায়াররা তাদের দায়বদ্ধতা প্রমাণ দিতে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম শুরু করে। তাদের কার্যক্রম কারখানার নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাস ও নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছে। তবে তার চেয়ে বেশি দর কষাকষিতে ব্র্যান্ডগুলোকে মজবুত অবস্থান করে দিয়েছে। একই সময়ে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ডাইফও কারখানার নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ শুরু করে। আমাদের সব সময়ের চাওয়া ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফল হবে। নিশ্চয়ই দেশের কারখানাগুলোর নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু তারা পারছে না।

রানা প্লাজা নিঃস্ব করেছে ‘ওদের’

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ কারখানার প্রশ্নে কিছু ব্যতিক্রম বাদে মালিকদের মনোভাবে তেমন পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। মালিকরা এখনও বিল্ডিং কোড মানছেন না, আইন ভাঙছেন বলে অভিযোগ করেন জলি তালুকদার।

বাংলাদেশ পোশাক রফতানিকারক ও মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেউ পেশা পরিবর্তন করলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করে দিতে আমরা বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি, নানা সময়ে। আমরা চাইলেও রানা প্লাজার ঘটনার পূর্বের সময়ে ফেরত যেতে পারবো না কিন্তু আমরা যা পারবো, আর যেন এরকম ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা ভাড়া বিল্ডিংয়ের কারখানার ক্ষেত্রে বিল্ডিং স্ট্রাকচারের কাগজ জমা নেই এবং গত আট বছরে শ্রমিকবান্ধব কারখানা তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এটা আমাদের নিজেদের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
বিতর্কের মুখে গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন মালালা
বিতর্কের মুখে গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন মালালা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
‘পাতানো ম্যাচ’ নয়, মাঠে খেলেই এগিয়ে যেতে চায় স্বাধীনতা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না