আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ভয়ে দুই সন্তানকে বাবার বাড়িতে রেখে এসেছেন আমেনা বেগম। দিন-রাত এক করে বাড়ির জিনিসপত্র পাহারা দিচ্ছেন তিনি। আতঙ্ক ঘরবাড়িতে যেকোনও সময় আগুন লেগে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার। বলছি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের সাবাজপুর গ্রামের কথা। ওই গ্রামের নূর আলম, মোতালেব, মকসেদ আলীসহ ২০টি পরিবারের শতাধিক লোক একইভাবে আগুন আতঙ্কে এভাবে পাহারা দিচ্ছেন বাড়িঘর।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি অলৌকিক কোনও কারণে প্রতিদিন ৩-৪ বার আগুন ধরছে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে। কখনও রান্নাঘরে, কখনওবা কাপড়ের ট্রাংকের ভেতর, কখনও ঘরের চালাতে। গত ২০ দিনে প্রায় শতাধিকবার আগুন লেগেছে ২০টি পরিবারের বাড়িতে। আগুন নেভানোর জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন করেছেন গ্রামের লোকজন।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তিনবার আগুন লেগেছিল ওই গ্রামে। ভোরবেলা ও সকালে ঢাকনা দিয়ে রাখা প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর দুবার, দুপুরে গোয়াল ঘরে একবার আগুন লাগে।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মাসের ২৯ তারিখে শবে বরাতের রাতে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পরের দিন ৩০ মার্চ আগুনে ৩টি পরিবারের ঘর-বাড়িসহ আসবাবপত্র পুড়ে গিয়ে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়।
ভুক্তভোগী মকসেদ আলী বলেন, ‘আমরা এখন বিশ্বাস করে নিয়েছি এটা অলৌকিক আগুন। ঢাকনা দেওয়া গামলার ভেতর আগুন লেগে ভেতরে পুড়েছে। কোরআন শরিফের ওপর আগুন লেগে ঢাকনা দেওয়া কাপড় পুড়ে গেছে। গত ২০ দিনের বেশি সময় ধরে আগুন লেগেই চলছে। বন্ধ হচ্ছে না।’
ওই গ্রামের মোতালেব হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন তান্ত্রিক নিয়ে এসেছিলাম গ্রামে। তান্ত্রিকদের মতে পরিবারগুলোর ওপর কালাজাদু করেছে কেউ। এগুলো দূর করতে হবে। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই চেষ্টা করে আগুন বন্ধ করতে পারেননি। আমরা আগুন নেভানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ৫টি পাম্প বসিয়েছি।’
আমেনা বেগম বলেন, ‘আমরা ২০টি পরিবার সন্তানদের আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছি। মাঠের কাজে যেতে পারছি না। মাঠে ও বাইরে কাজ করতে গেলেও আগুন লাগার খবরে ছুটে আসতে হচ্ছে বাড়িতে। চরম আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের।’
তবে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আগুনের সূত্রপাত খুঁজে বের করে গ্রামের পূর্বের অবস্থা ফেরানোর চেষ্টা করবেন বলেও তারা জানান।
উপজেলায় ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা বলেন, ‘অসতর্কতার কারণে আগুন লাগছে। আমরা ওই পরিবারগুলোকে একমাস মনিটরিং করতে পরামর্শ দিয়েছি। সঠিকভাবে মনিটরিং করলে আগুনের সূত্রপাত খুঁজে পাওয়া যাবে। অলৌকিক কোনও ঘটনা আমরা বিশ্বাস করি না।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, কম্বল ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করা হচ্ছে পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখার জন্য।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘পরিবারগুলো অলৌকিক আগুন দাবি করলেও বিষয়টি আমরা ভিন্নভাবে দেখছি। ধারণা করছি, একটি চক্র ষড়যন্ত্র করে পরিবারগুলোর মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। জড়িতদের সন্ধান পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
