X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানছে না বলার চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানানোটাই বড় সাফল্য

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৮ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৪৩আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৪৩

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা করোনার দ্বিতীয় ঝড় ভয়ংকরভাবে আছড়ে পড়েছে। প্রতিবেশী ভারতের খবরে সবাই আতঙ্কিত। বাংলাদেশেও মৃত্যু আর সংক্রমণের হার বাড়ছে এই বাস্তবতায় ভয় আরও বেশি। সীমান্ত বন্ধ হয়েছে ১৪ দিনের জন্য। সরকার লকডাউন (যতই ঢিলেঢালা হোক) চালু রাখছে আগামী ৫ মে পর্যন্ত। ভারত থেকে টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। চীনের নেতৃত্বাধীন টিকা জোটেও যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ।

এগুলো সবই উদ্যোগ। কিন্তু মানুষ কী করছে? রাস্তায় বের হলে মনে হয় মানুষ বেশ উত্তেজিত। যেন চলছে জীবন-মরণ লড়াই। সবাই ছুটছে। করোনা আক্রান্ত হলে কী হবে এই ভাবনার চেয়ে বড় ভাবনা হলো– বের হতে হবে যে করেই হোক – ‘জীবন ও জীবিকা’র জন্য  বেশ কয়েক মাস আগেই বোঝা গিয়েছিল আমরা খারাপ থেকে খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছি। করোনাভাইরাস এখন খুব সক্রিয়। সে নতুন নতুন রূপে আঘাত করে চলেছে। একটা পর্যায়ে আমাদের ভেতর আত্মপ্রসাদ সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা বোধহয় প্রমাণ করেই ফেলেছিলাম যে ‘আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী’। ঠিক তখনই সে ফিরে এলো আরও শক্তিশালী হয়ে। আর এখন সে নানা ভেরিয়্যান্ট আর স্ট্রেইন হয়ে এসেছে। অর্থাৎ, একজন মানুষকে যখন ভাইরাস আক্রমণ করছে, তখন সে মিউটেড করছে এবং এতে করে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপ নেওয়ার জন্য সরকারি উদাসীনতাকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হচ্ছে। নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচারে জমায়েত থেকে শুরু করে কুম্ভ মেলার আয়োজনসহ নানা কারণ রয়েছে এর পেছনে। বাংলাদেশেও কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে স্থানীয় সরকারের অধীনে পৌরসভা নির্বাচন হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে সরকার ধরেই নিয়েছিল বা আমরা সবাই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে করোনা যুদ্ধ জিতে গিয়েছি। তাই শিথিলতা ছিল সর্বত্র। বিয়ে, জন্মদিন, বিনোদন আর পর্যটন কেন্দ্রে বড় জমায়েত। আর রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সভা সমাবেশও চলছিল। এই মনোভাব, এই তাড়াহুড়োই হয়তো বিপদ ডেকে এনেছে বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কী করা উচিত? এমন প্রশ্ন সর্বত্র উচ্চারিত। সারাদেশে একযোগে এক প্রকার নিজস্ব পদ্ধতির লকডাউন চলছে। এখনও গণপরিবহন বন্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবে চলছে কলকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, বিপণি বিতান, বাজার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, এভাবে জীবন-জীবিকার সংগ্রাম আসলে শেষ পর্যন্ত কোনোটাকেই বাঁচায় না। সংক্রমণের তীব্রতা দেখে এলাকা বা জেলাভিত্তিক লকডাউন করে বাকি সব জায়গায় মানুষের নিয়ন্ত্রিত চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

যতবার লকডাউন বর্ধিত করার ঘোষণা আসে ততবারই জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। কিন্তু মানুষ কেন মানছে না এবং সরকার কেন মানাতে পারছে না, সেটা কখনও আমরা ভেবে দেখবার চেষ্টা করিনি। এবার দেখা যাচ্ছে কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং জটিলভাবেই হচ্ছেন। আমি নিজে বেশ কয়েকজনের কথা জানি, যাদের উপসর্গই ছিল না, পরীক্ষা করতে গিয়ে করোনা ধরা পড়ে।  

জনগণ কথা শুনছে না বা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, এটা বলে দায়িত্ব শেষ করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানানোর দায়িত্বটা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের। এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোরতা ও আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হতেই হবে। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ অনুযায়ী, কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জেল-জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তাই মাস্ক না পরে বাইরে বের হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করতেই পারে।

কিন্তু বেশি যেটা দরকার তা হলো করোনা মোকাবিলার কাজে জনসম্পৃক্ততা। হাটবাজার, গণপরিবহন এবং জনসমাগমস্থলে মাস্ক ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে অনুরোধ ও বাধ্য করা– দুটিই দরকার। প্রয়োজনে জরিমানার বিধান কার্যকর করা যেতে পারে। বেশি কার্যকর হবে মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে দেশব্যাপী জন-উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি না নিতে পারলে মানুষকে যুক্ত করা সম্ভব হবে না।

দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসবে এবং প্রবলভাবে আসবে- এমন আশঙ্কার কথা জনস্বাস্থ্যবিদরা আগে থেকেই বলে আসছিলেন। আমরা সচেতন হইনি। এখন যখন সংক্রমণের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী, তখন লকডাউন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। মানুষকে বোঝাতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে বাংলাদেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনকার চেয়েও তীব্র হতে পারে। টিকা নিয়ে, অক্সিজেন নিয়ে অনেক কথা বলা যাবে। কিন্তু সবার আগে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরা, নিয়ম মেনে হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে নিজেকে সুরক্ষিত করা ও অন্যকে নিরাপদে রাখার দায়িত্ব সবার।

এটা নাগরিক দায়িত্ব। শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সুফল মিলবে, এমনটি এখন আর মনে হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বটা অনেক বেশি। তারা ছাড়াও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিসহ সমাজে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে স্বাস্থ্যবিধির বার্তা নিয়ে হাজির হতে হবে মানুষের কাছে।

লেখক: সাংবাদিক 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
উপজেলা নির্বাচনদলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ