X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
স্মরণে ইরফান খান

‘ইরফান ভাই শিখিয়েছিলেন, অল্প মানেই বেশি’

ফয়সল আবদুল্লাহ
২৯ এপ্রিল ২০২১, ১৫:১৪আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৩৯

আজ আবার পঞ্জিকা ঘুরে ২৯ এপ্রিল। ইরফান খান ছাড়া বলিউডের কেটে গেলো একটি বছর।

স্মৃতিতে এখনও তাজা ‘লাঞ্চ বক্স’, ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’র মতো ছবিগুলো। করোনার চোখ রাঙানিতেও বলিউড ভুলে যায়নি ক্ষমতাধর এ শিল্পীকে। আজ সারা দিন তাই বি-টাউনে চলছে ইরফান বন্দনা।

তালিকায় বাদ যাননি হালের আরেক ট্যালেন্ট নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। স্পটবয় ডটকম সাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন, এই ইরফান খানই একসময় নওয়াজের শিক্ষক ছিলেন। ২০০৩ সালে ‘আলবিদা’ ছবিতে ইরফানের পরিচালনায় কাজ করেছিলেন নওয়াজউদ্দিন। শিক্ষকের মতোই হাতে-কলমে অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন তিনি।

নওয়াজের ভাষ্যে, “ইরফান ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অন্যরকম ছিল। আমরা দু’জন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকেই উঠে এসেছি। ২০০৩ সালে ‘আলবিদা’ ছবিতে যখন আমাকে ডিরেকশন দিচ্ছিলেন, তখন বলেছিলেন যতটা সম্ভব কম ও মুচমুচে ডায়ালগ দিতে। একটা দৃশ্য ছিল ওই সিনেমায়। আমি এক মেয়েকে আমার সাইকেলে বসতে বলবো। ওই দৃশ্যে আমার সংলাপ থেকে সাইকেল শব্দটা বাদ দিতে বলেছিলেন ইরফান ভাই। কারণ, দর্শক পর্দায় সাইকেল তো দেখতেই পাচ্ছে। তখনই তিনি বলেছিলেন, ‘অল্প মানেই বেশি।’ এখনও আমি তার সেই টিপস মেনে চলছি।”

২০১৮ সালের মে মাসে নিওরোএন্ডোক্রাইন নামের বিরল টিউমার ক্যানসারে আক্রান্ত হন ইরফান খান। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকটা সময় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ছিলেন। শেষ রক্ষা হলো না। গত বছর এই দিনে (২৯ এপ্রিল, ২০২০) পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

‘আমি বিশ্বাস করি, আমি আত্মসমর্পণ করেছি’—২০১৮ সালে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই প্রসঙ্গে এমন কিছু শব্দে নিজের অভিব্যক্তি জানিয়েছিলেন ইরফান। তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী মানুষ। গভীর চোখ ও স্মরণীয় গুণের মাধ্যমে নীরব অভিব্যক্তিতে অভিনয় করতেন পর্দায়।

ইরফানের মৃত্যুর পর তার পরিবার আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে, ইরফান শক্ত মনের মানুষ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন তিনি। তার কাছে আসা প্রত্যেককে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছেন। ২০১৮ সালে বিরল ক্যানসারের কথা জেনে বজ্রপাতের আঘাতের মতো লেগেছিল তার। তবে দমে যাননি। এরপর জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রচুর লড়াই করেছেন। পরিবারকে নিয়ে সবচেয়ে যত্নবান ছিলেন তিনি। হাসপাতালে তারা চারপাশে ছিল। তাদের রেখে স্বর্গের পথে যাত্রা করেছেন তিনি। নিজের ভালো কিছু কর্ম রেখে গেছেন। আমরা সবাই তার শান্তি কামনা করি। আশা করি তিনি শান্তিতে আছেন।

অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই নিয়ে মৃত্যুর কিছুদিন আগে আবেগঘন বার্তা লিখেছিলেন ইরফান, ‘‘আমার বাজি ছিল অন্যরকম। দ্রুতগতির একটি ট্রেনে ঘুরছিলাম। স্বপ্ন, পরিকল্পনা, আকাঙ্ক্ষা ও লক্ষ্য ছিল। এগুলোকে ঘিরে খুব ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ কেউ আমার কাঁধে টোকা দিলো এবং আমি পিছু ফিরে তাকালাম। তিনি টিকিট কালেক্টর। আমাকে জানালেন, ‘আপনার গন্তব্য চলে এসেছে। অনুগ্রহ করে নামুন।’ আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বললাম, ‘না, না। আমার গন্তব্য আসেনি।’ টিকিট কালেক্টর বললেন, ‘না, এটাই আপনার গন্তব্য। কখনও কখনও এমন হয়।’’

গত বছর ‘অ্যাংরেজি মিডিয়াম’ ছবির মাধ্যমে বিরতির পর বড় পর্দায় ফিরেছিলেন ইরফান। তবে এর প্রচারণা করতে পারেননি তিনি। এটি তারই অভিনীত অভাবনীয় ব্যবসাসফল ছবি ‘হিন্দি মিডিয়াম’-এর (২০১৭) সিক্যুয়েল।

ইরফান খান ১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরের কাছে টঙ্ক গ্রামে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইরফান খান। তার মা সাইদা বেগম ছিলেন নবাব পরিবারের মেয়ে। বাবার মৃত্যুর পর তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় ইরফান যোগ দেন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায়।

ইরফানের প্রতিভা প্রথম ধরতে পারেন মীরা নায়ার। তাই ১৯৮৮ সালে ‘সালাম বোম্বে’ ছবিতে তাকে নেন তিনি। এরপর তারা ২০০৭ সালে ‘দ্য নেমসেক’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেন। এছাড়া ২০০৯ সালে ১১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির সংকলন ‘নিউ ইয়র্ক, আই লাভ ইউ’তে মীরা-ইরফান জুটিকে আরেকবার পাওয়া যায়।

আশির দশকে টেলিভিশনে নিয়মিত কাজ করতেন ইরফান খান। এরপর আসিফ কাপাডিয়ার ‘দ্য ওয়ারিয়র’-এর মাধ্যমে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। গুণী এই অভিনেতার সেরা কাজের তালিকায় অন্যতম বিশাল ভরদ্বাজের ‘মকবুল’ (২০০৩), সুজিত সরকারের ‘পিকু’ (২০১৫) ও রিতেশ বাত্রার ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ (২০১৩)। ২০১২ সালে তিগমাংশু ধুলিয়ার ‘পান সিং তোমর’ ছবিতে অনবদ্য নৈপুণ্য দেখিয়ে সেরা অভিনেতা হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

হলিউডের বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন ইরফান খান। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য—ড্যানি বয়েলের ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ (২০০৮), টম হ্যাঙ্কস অভিনীত ‘ইনফারনো’ (২০১৬), অ্যাঙ লি পরিচালিত ‘লাইফ অব পাই’সহ (২০১২), মারভেল স্টুডিওসের ‘দ্য অ্যামাজিং স্পাইডার-ম্যান’ (২০১২), কলিন ট্রেভরো পরিচালিত ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ (২০১৫) ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি অভিনীত ‘অ্যা মাইটি হার্ট’ (২০০৭)।

বাদ যায়নি বাংলাদেশের ছবি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় ‘ডুব’ ছবিতে দেখা গেছে তাকে। এর ইংরেজি নাম ‘নো বেড অব রোজেস’। এটির সহ-প্রযোজনাও করেছিলেন ইরফান।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইরফান খান: অভিনেতা নয়, ক্রিকেটার হওয়ার কথা ছিল যার!
প্রয়াণ দিনে স্মরণইরফান খান: অভিনেতা নয়, ক্রিকেটার হওয়ার কথা ছিল যার!
মৃত্যুর তিন বছর পর ফিরছেন ইরফান খান!
মৃত্যুর তিন বছর পর ফিরছেন ইরফান খান!
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!