X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাম্পার ফলন হলেও চড়া মজুরিতেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
০২ মে ২০২১, ০০:২৮আপডেট : ০২ মে ২০২১, ০০:২৮

কুমিল্লায় বোরো ধানের বাম্পার ফলনে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে শুরু হয়েছে ধান কাটার আয়োজন। প্রয়োজন পড়ছে বাড়তি ধান কাটা শ্রমিকের। তবে মৌসুমের শুরুতেই মহামারি করোনায় লকডাউন থাকায় দেশের অন্যান্য জেলা থেকে কুমিল্লায় আসতে পারছেন না শ্রমিকরা। আর এই শ্রমিক সংকটে কৃষকেরা চড়া মজুরিতেও পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় শ্রমিক। ঠিক সময়ে শ্রমিক না পেলে বৈরি আবহাওয়াতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

অবশ্য জেলা কৃষি অফিস বলছে শ্রমিক সংকট যাতে না পড়ে সেজন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের বিশেষ অনুমতিতে উত্তরবঙ্গসহ অন্যান্য জেলায় বাস পাঠিয়ে আনা হচ্ছে ধানকাটা শ্রমিক।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, এবার জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় এক লাখ ৫৮ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫০ হেক্টর বেশি। জেলায় এ পযর্ন্ত ৯ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে, ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হবে। কৃষকদের ধান কাটার জন্য সহযোগিতায় ৮৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ও ৭৯টি রিপার রয়েছে। তাছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে কৃষি শ্রমিক আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বছরের এসময়ে চারদিকে ধান কাটা শুরু হয়। উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৌসুমি শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি কিংবা চুক্তিতে ধান কেটে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকের ঘরে তুলে দেন ফসল। এসময় কুমিল্লায় শ্রম বেচাকেনার হাট (শ্রম বিক্রির হাট) বেশ জমে উঠে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ্রমিকদের শ্রম বিক্রয় হয় দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস চুক্তিতে। তবে শ্রমিক সংকট থাকলে মজুরি বেড়ে যায় দুই-তিন গুণ। এবছর লকডাউন থাকায় মৌসুম শুরুতেই শ্রমিক আসতে পারেনি কুমিল্লায়। যাদের ধান আগে পেকে গেছে তারা অনেকেই দ্বিগুণ দামে শ্রমিক রেখে ধান তুলেছেন। কেউ কেউ আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাধ্য হয়েই ধান কাটা ও তোলার কাজ করেছেন।

কুমিল্লার সদর উপজেলার আমড়াতলি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেসরকারি চাকরিজীবী মাইনুল হক নিজেই নিজের জমি থেকে একা একা ধান তুলে আনছেন। তিনি জানান, দুই দিন আগে একদিনের জন্য ৮০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে দুই জনকে দিয়ে ধানগুলো কাটিয়েছেন। সেগুলো মাঠ থেকে ঘরে তোলার জন্য দুই দিন ধরে শ্রমিক পাননি। তাই নিজে নিজে যতটুকু পারা যায় ঘরে নিচ্ছেন। নতুবা বৃষ্টির কবলে পরলে ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যাবে।

একই এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন তার তিন শিশু সন্তানকে নিয়েই মাঠে নেমেছেন ধান ঘরে তুলতে। আনোয়ার হোসেন জানান, চারদিকে শ্রমিকের এত চাহিদা-কয়েক জন আমার জমির ধানগুলো কেটেই অন্য জায়গায় চলে গেছে। এখন নিজের পরিবারের লোকজন নিয়ে এগুলো মাড়াই করে বাড়ি নিতে হবে। আর শ্রমিকের যে দাম, ক্যান্টনমেন্ট বাজারে গিয়ে দুই দিন ঘুরে এসেছি- চড়া দাম দিয়ে শ্রমিক আনলে পোষাবে না।

আনোয়ার হোসেন জানান, দৈনিক মজুরিতে ৮০০ টাকায় শ্রমিক এনে এই ধানের দাম পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১২শ' টাকা। তাহলে কৃষকের লাভ কি, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বাম্পার ফলন হলেও চড়া মজুরিতেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক নগরীর কান্দিরপাড়, পদুয়ার বাজার, শুয়াগাজী বাজার, চৌয়ারা বাজার, নিমসার বাজার, লালমাই বাজার, ক্যান্টনমেন্ট বাজার, ইলিয়টগঞ্জ বাজার, দেবিদ্বার বাজার, মুরাদনগর বাজার, বাঘমারা, বিজরা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দৈনিক বা চুক্তিভিত্তিক মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায়। ধানকাটা মৌসুমে প্রতিদিনই এ সব বাজারে শ্রম বিক্রির জন্য একটু বেশি ভিড় করে শ্রমজীবী মানুষরা। পণ্যের মতো বিক্রি হয় তাদের শ্রম।

শ্রমিক সংকট থাকলে মজুরি বাড়ে দিনের পর দিন। সংকটকালে প্রতিজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি নির্ধারণ হয় ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। শ্রমিকের সহজলভ্যতা বাড়লে কমে আসে মজুরিও, সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক মিলে।

কুমিল্লার হাট-বাজারে শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষরা বেশিরভাগই রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, নেত্রকোনা ও ঠাকুরগাঁওসহ দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বাসিন্দা।

পাঁচথুবী এলাকায় ধান কাটতে আসা রংপুরের শ্রমিক রফিক জানান, এই কয়দিন শ্রমিকের চাহিদা ভালো, দামও ভালো। তবে সঙ্গের লোকজন লকডাউনে আটকে যাওয়ায় কুমিল্লা আসতে পারছে না। তাদের কামাইও থেমে আছে।

এদিকে কুমিল্লার স্থানীয় ধানকাটা শ্রমিক ছাড়াও উত্তরবঙ্গসহ অন্যান্য জেলা থেকে শ্রমিক আনতে বিশেষ ব্যবস্থা করছে কৃষি বিভাগ। যেসব শ্রমিকরা কুমিল্লায় আছেন তারা এবং কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য শ্রমিকদের আনতে বাস পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া লকডাউন থাকলে কেউ যদি ধানকাটার জন্য শ্রমিক আনাতে চায় তাহলে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থায় শ্রমিক আনানো যাচ্ছে।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, কুমিল্লায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বোরো ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে। এবার করোনা ও লকডাউনের কারণে যাতে শ্রমিক সংকটে না পড়ে সে জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের ধান কাটার অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা ইতোমধ্যে ১০টি বাস দেশের উত্তরাঞ্চলে পাঠিয়েছি শ্রমিক আনতে, পর্যায়ক্রমে আরও পাঠাবো। অন্য জেলা থেকে শ্রমিকদের বহনকৃত বাস আসতে আমরা বাঁধা দিচ্ছি না। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক আনা হয়েছে। আশা করি বাকি সময়ের মধ্যে কুমিল্লায় আর শ্রমিক সংকট থাকবে না। খবর নিয়ে জেনেছি- শ্রমিকদের মজুরিও কমে এসেছে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এখন শুধু ভালো আবহাওয়া থাকলেই হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

/টিটি/
সম্পর্কিত
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
তীব্র গরমে কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে
সর্বশেষ খবর
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না