X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

চাপের মুখে উৎসব অর্থনীতি

মামুন রশীদ
০৪ মে ২০২১, ১৫:৩২আপডেট : ০৪ মে ২০২১, ১৬:২৮

মামুন রশীদ সরকার এবং বিভিন্ন মহলের সাবধান বাণী সত্ত্বেও মানুষের উৎসব কেনাকাটা কমছে বলে মনে হচ্ছে না। ঈদের বাজারে আর শপিং মলগুলোর সামনে জনতার বাঁধকে নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে আনতে পুলিশকে দেখলাম বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অনেকেই বলছেন এটাই বাংলাদেশ। বছরের একটা মৌসুম চাঙ্গা থাকে দেশের অর্থনীতি। সেই মৌসুম দরজায় কড়া নাড়লেও এবার প্রথম থেকেই উৎকণ্ঠার ছাপ ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে। বাংলাদেশের দোকান মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২৫ লাখ দোকানে ঈদ মৌসুমে কেনাকাটা হতো দুই লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু গত বছরের মতো এ বছরের চিত্রও একই। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, করোনার কারণে তলানিতে ঠেকতে পারে এবারের ঈদ-বাণিজ্য। আগেরবারের চেয়ে লেনদেন কমে যেতে পারে ন্যূনতম ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার।

দোকান মালিক সমিতি সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশের ২৫ লাখ দোকানে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন কেনাবেচা হয় তিন হাজার কোটি টাকার। রোজার মাসে তিনগুণ বেড়ে যেতো অংকটা। এবার তা তো হচ্ছেই না, উল্টো আরও কমেছে।

অতিমারির ধাক্কা সামাল দিতে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে, কেউ কমিয়েছে বেতন-ভাতা। কারও বেতন বকেয়া হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষের আয়ও কমেছে। জমানো টাকায় চলছেন কেউ, কেউ আবার বিপদের কথা ভেবে খরচের কথা ভাবছেন না। এদিকে দোকানপাটও সেভাবে খুলছে না। ৪ এপ্রিল থেকে সারা মাস ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত বন্ধই ছিল। ক’দিন আগে বৈশাখেও বিক্রির মুখ দেখেননি ব্যবসায়ীরা।

২৫ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিং মল খোলার অনুমতি দিলেও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ঈদের বাজার ও অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে না সহসা। বেঁধে দেওয়া সময়ের কারণে ঠিকমতো বেচাকেনা হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।

আমরা জানি, ঈদকে ঘিরে অর্থনীতির সব খাতেই গতি আসে। চাকরিজীবীরা এবার ১২ হাজার কোটি টাকার ঈদ বোনাস তুলবেন। এর পুরোটাই যাওয়ার কথা ঈদের বাজারে। জাকাত-ফিতরার কারণে দরিদ্রদের পকেটেও কিছু টাকাকড়ি জোটে। প্রবাসীরাও রেমিট্যান্স পাঠান বেশি। সে টাকাও আসার কথা ঈদের বাজারে। শপিং মল বা মার্কেটগুলোর বাইরে কুটিরশিল্প, তাঁতশিল্প, দেশীয় বুটিক হাউজগুলোতে বাড়ে কর্মচাঞ্চল্য। তবে এবার মন্দার হাওয়া সব খাতেই।

পত্রিকান্তরে জানা গিয়েছে, গত বছর রোজার ঈদে দোকানগুলোতে বেচাকেনা হয়েছিল অন্তত ৬০ হাজার কোটি টাকার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়েও ব্যবসা এবার কম হবে। এবারও লোকসান গুনবেন ব্যবসায়ীরা।

এফবিসিসিআই’র এক অসমর্থিত তথ্যমতে, ঈদে পোশাকসহ যাবতীয় বস্ত্র খাতে ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা, জুতা-কসমেটিকস খাতে ৩ হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্যে ৭ হাজার কোটি, জাকাত-ফিতরা ও দান-খয়রাতে ৩৮ হাজার কোটি, যাতায়াতে ১০ হাজার কোটি, সোনা-হীরার গহনায় ৫ হাজার কোটি, পর্যটনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি, ইলেকট্রনিকসে ৪ হাজার কোটি, স্থায়ী সম্পদে ১ হাজার কোটি, ওমরাহ পালনে লেনদেন হয় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার।

এছাড়া ফার্নিচার, গাড়ি ও আবাসন শিল্পেও বড় লেনদেন হয়। অনেকে ঈদের কেনাকাটা করতে বিদেশে যেতেন। এর প্রভাবও ছিল স্থানীয় বাজারে। বিত্তশালীদের ১৫ হাজার কোটি টাকা জাকাত প্রদান করার কথা এ বছর। যার পুরোটা ঈদ উপলক্ষে ব্যয় হওয়ার কথা থাকলেও তা না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

অন্যান্য বছর ঈদ উপলক্ষে অর্থের বড় একটা জোগান আসে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস থেকে। এছাড়াও অন্যতম উৎস প্রবাসীদের পাঠানো টাকা। তবে গেলো বছরের মতো এ বছরও বেসরকারি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বোনাস দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ঠিক থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই আগের মতো কেনাকাটা করতে পারবেন না। নিম্ন-মধ্যবিত্তরা নিত্যপণ্য জোগাড়েই ব্যতিব্যস্ত। কেনাকাটার চিন্তা তারা খুব একটা করছেন না। দরিদ্র ও দুস্থরা পুরোপুরি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের ওপর এখনও নির্ভরশীল। মার্কেটগুলোর সামনে ও রাস্তায় তাদের সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। টাকার হাতবদল না হলে অর্থনীতির চাকা যে চলবে না, সেই সত্যটি আবারও উপলব্ধি হচ্ছে। আর খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদরা তো তা জোরেশোরেই বলছেন।

এই সবকিছুর প্রভাব পড়তে চলেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত ও ঋণের অংশ হিসেবে গ্রামের অংশ শহরের তুলনায় বেশ কম। গ্রাম থেকে যত আমানত নেওয়া হচ্ছে, তার অর্ধেক বিনিয়োগ হচ্ছে শহরে। কিন্তু ঈদে সচরাচর এর বিপরীতটা দেখা যায়। শহরের মানুষ হয় গ্রামমুখী। এতে সারা বছর স্তিমিত থাকা গ্রামের হাট-বাজারও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এবার সেই উৎসবমুখর হাটও হয়তো খুব একটা চোখে পড়বে না। তারপরেও গ্রামীণ অর্থনীতির চাইতেও শহরের দরিদ্রদের নিয়েই হয়তো আমাদের ভাবতে হবে বেশি।

লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ